শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাপাহারে বিদেশি ফল রক মেলন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৫৫

নওগাঁর ঠাঁঠা বরেন্দ্র খ্যাত সাপাহার উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে তরুণ উদ্যোক্তা হোসনে মাহফুজ শিবলী সৌদি ও থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন ‘সাম্মাম’ চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছে।

উপজেলায় প্রথমবারের মতো ফলটি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে তিনি আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন। আগামীতে তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই রক মেলন ফল চাষাবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

হোসনে মাহফুজ শিবলী জানান, ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স সমাপ্ত করেন। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি রাজধানী শহরেই ব্যবসা বাণিজ্য করছিলেন। বরেন্দ্র ভূমি সাপাহার উপজেলায় বেশ কয়েক বছর ধরে আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে কৃষিতে নীরব বিপ্লব শুরু হয়। অল্প সময়ে দেশের মানুষের কাছে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সাপাহার উপজেলা পরিচিতি লাভ করে। প্রতিযোগিতামূলকভাবে এখানে ফলবাগান তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। এসব দেখে তিনি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মা মাটির টানে শহর ছেড়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কয়েক একর জমিতে ধান চাষ না করে তিনি উন্নত জাতের আম বাগান তৈরি করেন। সেই আমবাগানের মধ্যে ১ একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে তিনি সাথী ফসল হিসেবে বিদেশি ফল ও বিদেশি সবজি চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি শখের বসে চীন থেকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে হলুদ তরমুজ বীজ ও দেশের চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া ও ঢাকা থেকে রক মেলন বা সাম্মাম ফলের চারা সংগ্রহ করেন ও তার জমিতে রোপণ করেন। বর্তমানে তার ওই ১ একর জমিতে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন (সৌদি আরবের সাম্মাম ফল) চাইনিজ হলুদ তরমুজ, সাদা ও কালো স্কোয়াস, লাল, সবুজ, হলুদসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। তবে বাগানে সবজির তুলনায় বিদেশি ফল রক মেলন (সাম্মাম) আশাব্যঞ্জকভাবে উৎপাদন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফল ক্যানসার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখে, স্বাদ ও গন্ধেও ফলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ আছে এই ফলে। আরও আছে পটাসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম বিদ্যমান। এ ফল মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নতুন এই ফল চাষে খরচ অন্য ফলের মতোই হয়। বর্তমান বাজারে তরমুজ বাঙির চাইতে কয়েক গুণ চাহিদা ও মূল্যে বেশি থাকায় আগামী দিনে এই বিদেশি ফল চাষে আশপাশের কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ ও উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি শিবলীর ওই রক মেলন (সাম্মাম) বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, রোপণকৃত আমগাছের চারার মাঝের সারিতে হালকা মাচার উপর লতানো গাছে ধরে আছে এই খসখসে সাদা সাদা অজস্র রক মেলন ফল।

প্রতিটি ফল ১ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বাগানে রক মেলন ফল পাকতে শুরু করেছে। রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি এই ফল বাজারজাত করবেন বলেও আশা করছেন।

উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন, বাঙিজাতীয় এ বিদেশি ফলকে রক মেলন (সাম্মাম) বলা হয়, সৌদি আরব ও আশপাশের দেশগুলোতে এ ফলের চাষ হলেও আমাদের দেশের বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটির চাষাবাদ অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। তাই সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র মাটিতে এই ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তরুণ উদ্যোক্তা শিবলী তার অভিমত ব্যক্ত করে জানান, বিদেশি এই ফল ও সবজি চাষে যদি সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা দেওয়া হয় তাহলে তিনি আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে রক মেলন চাষাবাদ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবেন। তার মতে, বরেন্দ্র ভূমির এই মাটিতে বিদেশি ফলটি খুব ভালোভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। এটি বছরে তিন বার চাষ করা যায়। দেশের সকল বাজারে ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আগামী মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত বীজ ও চারা উৎপাদন করবেন। কোনো কৃষক বিদেশি এই ফল ও সবজি চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে