শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালীতে পাহাড়ি অঞ্চলে আদা চাষে চমক দেখালেন চাষিরা

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, (বাঁশখালী) চট্টগ্রাম
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:০২

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ শুরু হয়েছে বছর চারেক আগে। এরপর প্রতি মৌসুমে অল্প পরিমানে চাষ হতো আদা। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাঁশখালী বিভিন্ন পাহাড়ে ব্যাপকহারে বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ হয়েছে। তাতে আদার বাম্পার ফলনও হয়েছে। এদিকে আদার বাজারদর ভালো হওয়ায় চাষিদের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার।

এ মৌসুমে উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, জঙ্গল গুনাগরী, বৈলছড়ি, জঙ্গল পাইরাং, জঙ্গল জলদী, পূর্ব শীলকূপ, পূর্ব চাম্বল ও পূর্ব নাপোড়া, পূর্ব পুইছড়ি, জঙ্গল পুইছড়ি, শীলকূপ ইকোপার্কের পূর্বে, জঙ্গল সাধনপুর, লটমনি, পূর্ব পুকুরিয়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকার ১৯০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের আদার চাষ হয়েছে। এদিকে এসব পাহাড়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু ও নিচু জমিতে আদা চাষে তেমন বেশি পানি বা সারের প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি পরিশ্রমও কম লাগে। এতে অল্প খরচে বেশ লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ি অঞ্চলে মসলা জাতীয় এ ফসল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে আদা। তাতে পাহাড়ে পাহাড়ে আদার গন্ধ আর সবুজের মিলন মেলা দেখা যাচ্ছে। এদিকে পূর্ব শীলকূপ ইকোপার্ক পাহাড়ি অঞ্চলে আদার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব আদা বিক্রির সময়োপযুক্ত হওয়ায় চলছে আদা তোলার হিড়িক। এরপর এসব আদা পরিষ্কার করে চাষিরা নিয়ে যাচ্ছেন বাজারে। এদিকে বাজারে প্রতি কেজি আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। এছাড়াও মন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা। এতে চাষিরা অন্যন্য মৌসুমের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ফাল্গুন মাসের শুরু থেকে বৈশাখ মাসের শেষ পর্যন্ত আদার বীজ লাগানো যায়। ওই সময় সাধারণত ১২ থেকে ১৫ গ্রাম ওজনের ১ থেকে দুইটি কুঁড়িবিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। কৃষকরা ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে সারি করে মাটির ২০ সেন্টিমিটার ও ৫ সেন্টিমিটার গভীরে আদা লাগান। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে প্রয়োজন হয় ১ হাজার কেজি বীজ। অন্যদিকে আদার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। অল্প ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষাবাদ ভালো হয়। আর উঁচু বেলে দোআঁশ, বেলে ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে আদা ভালো ফলনের উপযোগী। অন্যদিকে বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকায় আদা চাষের এসব গুন থাকায় দ্রুত আদা চাষে সাফল্য আসে।

উপজেলার শিলকূপের আদা চাষি ফারুকুল ইসলাম জিসান বলেন, বাজারে পাহাড়ের আদার ব্যাপক চাহিদা থাকায় কয়েক বছর ধরে আদা চাষ করতেছি। এ বছরও চাষ করেছি। এদিকে আদার মান ভালো হওয়ায় ভাল দামও পাওয়া যাচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে বেশি দাম পাওয়া যায়। এখন আদা চাষের আয় দিয়ে আমার সংসার চলছে।

উপজেলার পূর্ব পূইছড়ির আদা চাষি মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে ধানের চেয়ে আদা চাষে লাভ বেশি। এক একরে আমন ধান চাষ করতে ব্যয় হয় ২২-২৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত ধান বিক্রি হয় ৩০-৩২ হাজার টাকা। লাভ ৬-৭ হাজার টাকা। কিন্তু এক একরে আদা চাষে ব্যয় হয় ৮০-৯০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। এতে একরে আয় আসে এক থেকে দুই লাখ।

কালীপুরের আদা চাষি রহিম মিয়া বলেন, মুলত পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে আদা চাষ হয়। এতে এক শতাংশ জমির জন্য ৪ কেজি আদার বীজ প্রয়োজন হয়। আর একটি গাছ থেকে ৩ কেজি বা তার চেয়েও বেশি আদা পাওয়া যায়। তাই খরচও কম, সময়ও কম, লাভও বেশি হওয়ায় এলাকার কৃষকরা এখন আদা চাষে ঝুঁকছেন।

এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, বাঁশখালীর পাহাড়ি অঞ্চল আদা চাষের জন্য সম্ভাবনাময়ী একটি জায়গা। এ বছর বাঁশখালীতে ১৯০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। এতে ফলনও ভাল হয়েছে। তাই কৃষকদের আদা চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে আদার ভালো মূল্য থাকায় চাষিরা বেশ উপকৃত হচ্ছেন।

যাযাদি/ সোহেল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে