রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে মান নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা

মিলন রহমান, যশোর
  ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:১৭
ফাইল ছবি

যশোরে অল্প পানিতেই পাট পচানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। এতে পাটের মান নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে। এবার এই পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে। সেখানে ২শ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষ বেশি হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে পাট চাষের পাশাপাশি আবাদকৃত পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। তবে পাট জাগ দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমে আষাঢ়ের মতো শ্রাবণও প্রায় বৃষ্টিহীন। পানি নেই খাল, বিল ও জলাশয়ে। গত এক সপ্তাহের সামান্য বৃষ্টিতে খাল-বিলে যে পরিমাণ পানি রয়েছে, তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পাট কেটে ক্ষেত থেকে গরুর গাড়ি অথবা পাওয়ার ট্রিলারে করে দূরের জলাশয়ে নিয়ে যাতে হচ্ছে। এতে পরিবহণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার অল্প পানিতে অধিক পাট জাগ দেওয়ায় পাটে সোনালি রং আর থাকছে না। পানিও পচে দুর্গন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাটের রং ধারণ করছে কালচে। এতে ভালো দাম পাওয়া যাবে না। বাজারে মার খেতে হবে।

বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো আবাদে পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে যশোরাঞ্চলে পাট কাটাও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যারা পাট কেটে আমন আবাদ করবেন, তারা ইতোমধ্যে পাট কেটে ফেলেছেন। কিন্তু পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় অনেক কৃষক পাট কেটে ক্ষেতেই আঁটি বেঁধে ফেলে রাখছেন। ফলে রোদে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে গরুর গাড়ি, পাওয়ার ট্রিলার বা নসিমনে করে পাট দুই/তিন কিলোমিটার দূরে বাঁওড় বা নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।

যশোর সদর উপজেলার চুড়মকাটি ইউনিয়নের কৃষক আমিন উদ্দিন বলেন, গত তিন বছর ধরেই যশোরের পাটচাষিরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপদের মধ্যে আছে। এবার তিন বিঘার মতো জমিতে পাট চাষ করেছি। ইতোমধ্যে পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

চৌগাছা যাত্রাপুর গ্রামের পাটচাষি লোকমান হোসেন বলেন, আমি এ বছর দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পানির অপেক্ষায় থেকে পাট কাটা শুরু করেছি। এক বিঘা জমির পাট কেটে বাড়ির পাশে পুকুরে জাগ দিয়েছি। আমার আর জাগ দেওয়ার জায়গা নেই। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আবার পাট রোদে শুকিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে বিপদের মধ্যে আছি।

আরেক পাটচাষি জহির মিয়া জানালেন, এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গত মৌসুমে প্রকার ভেদে প্রতি মণ পাট ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার পাট ভালোভাবে জাগ দিতে না পারায় ভালো দাম পাব না। এবার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে তেমন লাভ থাকবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, যশোরে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকরা সমস্যায় আছেন। যদিও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়েছে। তবে প্রতিবছরই পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক উল্লেখ করেন, বৃষ্টি না হলে পাট জাগ দেওয়ার মতো ছোট ছোট জলাশয়গুলোয় পানি থাকে না। আর এখন পতিত পুকুর পাওয়া যায় না। সব পুকুরেই মাছ চাষ হচ্ছে। ফলে নদী বা বাঁওড়েই পাট জাগ দিতে হয়। ইতোপূর্বে রিবন রেটিং পদ্ধতি নিয়ে আসা হলেও সেটি কৃষকরা গ্রহণ করেনি। ওই পদ্ধতিতে শ্রমিক ব্যয় বেশি হয়; পাটখড়ি ভালো পাওয়া যায় না। এজন্য পাট জাগ দিতে নতুন পদ্ধতি দরকার। এটি গবেষণাগার থেকে আসতে হবে। অন্তত অল্পপানিতে অল্পদিনে পাট পচানো যায় এমন পদ্ধতি হলেও কৃষকরা উপকৃত হবেন। বিষয়টি ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতেও আনা হয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে