রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

চিরিরবন্দরে আখচাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মো. রফিকুল ইসলাম, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ২১ আগস্ট ২০২৩, ১২:১১

অনুকুল আবহাওয়া, রোগ-বালাই কম ও সঠিক পরিচর্যার কারণে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে আশানুরুপ আখ উৎপাদন হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত আখ খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় আখচাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। উঁচু জমি, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় ঈশ্বরদী গেন্ডারি জাতের আখের (কুষার) ফলনও ভালো হয়েছে। স্বল্প খরচ, অধিক লাভজনক ও নগদ অর্থে বিক্রি হওয়ায় উপজেলায় আখচাষের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে চাহিদা থাকায় এবং ভালো মূল্য পাওয়ায় আখচাষিরাও সন্তুষ্ট। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের উপর এবং আখের আশানুরুপ ফলন এবং বাজারে চাহিদা থাকায় দিনদিন কৃষকদের মধ্যে আখচাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে আরো অধিক হারে পতিত জমিতে আখচাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।

উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে আখের বেশ চাহিদা রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত আখের স্বাদ বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি। তাই পাইকারদের নিকট এসব আখের চাহিদাও বেশি। চাহিদা থাকার কারণে কৃষকরা ক্ষেতেই ভালো দাম পাচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতারা আখক্ষেতে চাষিদের নিকট থেকে আখ ক্রয় করে বাজারে ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। বছরের তিন মাস বাজারে এসব আখ বেচাকেনা করে লাভবান হচ্ছে কৃষকসহ খুচরা-পাইকারি বিক্রেতারা। খুচরা বাজারে আকার ও সাইজভেদে প্রতিটি আখ ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে আখ উৎপাদনে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। উৎপাদিত আখ বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ২ লাখ টাকায়।

উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের জগদিশ মেম্বারপাড়ার আখচাষি হিরেন্দ্র নাথ রায় (৫৫) জানান, আখ একটি লাভজনক ফসল। এবার রোগ-বালাই কম হয়েছে, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে আখের প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। এ বছর আমি ২১ শতক জমিতে আখচাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি আখ ১২-১৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। আমি এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। আমার এ জমি থেকে আরো অন্তত ৩০-৩৫ হাজার টাকার আখ বিক্রি করতে পারবো। আমার আগামীদিনে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আখচাষের পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদেরকে রাত ১টা পর্যন্ত আখক্ষেত পাহারা দিতে হয়। পাহারা না দিলে রাতে আখ চুরি হয়।

একই এলাকার আখচাষি বাদল চন্দ্র রায় জানান, আখচাষে প্রথমে ৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু করে ফাল্গুণ-চৈত্র মাস পর্যন্ত আখের চারা রোপন করতে হয়। আখচাষে তেমন একটা সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। আমি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে আখচাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত আখ অন্তত ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। আরও ২৫ শতক জমিতে আখ রয়েছে। স্বল্প শ্রম ও খরচে আখচাষে লাভবান হওয়া যায়। শুধু তারাই আখচাষ করেছেন তা নয়। তাদের মতো কেশব চন্দ্র রায় ৩৩ শতক, নিমাই চন্দ্র রায় ৪০, কার্তিক সাধু ১০, মনোরঞ্জন চন্দ্র রায় ১২ শতক জমিতে আখচাষ করেছেন। তাদের মতো আরও অনেক কৃষক আখচাষ করেছেন। তারা আরও জানান, আমাদেরকে আখ বাজারজাত করা নিয়ে কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই তা ক্রয় করে নিয়ে যান।

নশরতপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. খাদেমুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন রোগবালাই থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকদের যথাসময়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আখচাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আখ একটি অর্থকরী ফসল। যা শর্করা উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ জোগান দেয়। পাশাপাশি এটি গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, অনেক কৃষক বেশি লাভের আশায় গেন্ডারি জাতের আখচাষ করেছেন। আখচাষে তেমন একটা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। অল্প পরিশ্রম ও খরচে আখচাষে লাভবান হওয়া যায়। এছাড়াও আখের সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলও চাষ করা যায়।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে