সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু চর্চা

জাহাঙ্গীর বিপ্লব
  ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক জাতির রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনকের হাত ধরেই এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে পেরিয়ে গেলেও মহান এই নেতাকে নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র দেখা যায়নি আগে। তবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদের্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্রের পাশাপাশি নাটক ও গান তৈরির হিড়িক পড়ে যায়; সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে বেশকিছু সিনেমা, নাটক ও গান মুক্তিও পেয়েছে। দেখা গেছে সেগুলোতে কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় অদক্ষ-অযোগ্য নির্মাতারাও রয়েছেন, যারা দায়সারা গোছের এসব চলচ্চিত্র, গান ও নাটক নির্মাণ করে নিজেদের লাইম-লাইটে আনার চেষ্টা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, দর্শক নয়, এক শ্রেণির নির্মাতারা কেবলমাত্র বিশেষ কিছু রাজনৈতিক নেতাদের খুশি করতেই এসব নাটক-সিনেমা ও গান তৈরি করে যাচ্ছেন। এতে করে এক ধরনের ফায়দা লুটছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক চলচ্চিত্রই মুক্তি পেয়েছে গত দুই বছরে। এগুলোর বেশিরভাগই দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ মুক্তির শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। পরবর্তীতে যে ক’টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, কোনোটাই দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারপরেও থেমে নেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র, গান ও নাটক নির্মাণের চর্চা।

অবশ্য এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ভালো ভালো নির্মাতাও রয়েছেন; যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভালো ও বার্তাবহ কিছু নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মুশফিকুর রহমান গুলজার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গবেষণা করে নির্মাণ করছেন ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’। এতে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোরের গল্প। যেখানে কিশোর বঙ্গবন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করছেন সৌম্য। এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক নিরব হোসেইন। এতে বঙ্গবন্ধুর বোনের জামাতা সৈয়দ নুরুল হকের চরিত্রে দেখা যাবে নিরবকে। ১৯৩০ সালের প্রেক্ষাপটে আবর্তিত এই সিনেমার গল্প। তাই সিনেমার দৃশ্য এবং অভিনয়শিল্পীদের পোশাক-আশাকে থাকবে সেই ছাপ। এ সিনেমায় উঠে আসবে বঙ্গবন্ধুর কৈশোর ও যৌবনের গল্প। আরও অভিনয় করেছেন শহীদুল আলম সাচ্চু, লুৎফর রহমান জর্জ, ফজলুর রহমান বাবু, রহমত আলী, গোলাম ফরিদা ছন্দা, এলিনা শাম্মী প্রমুখ।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চলতি সপ্তাহে (শুক্রবার) মুক্তি পেয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘মাইক’ নামে একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ফেরদৌসের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সুইটি। তরুণ লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফএম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন এফএম শাহীন ও হাসান জাফরুল (বিপুল)। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে ‘মাইক’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মন্তব্য করেন ফেরদৌস। আগামী ১৮ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে তরুণ নির্মাতা হৃদি হক পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমাটির অনেক অংশ জুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর আবহ। চলচ্চিত্রটির মুক্তি সামনে রেখে প্রচারণা শুরু হয়েছে বেশ আগেই। সিনেমাটির প্রচারের জন্য এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজধানীতে সাইকেল র‌্যালি করেছেন সিনেমার অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা।

সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে বহুল আলোচিত বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছেন বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। মুম্বাই ও ঢাকায় এ ছবির সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। চলতি বছরই সিনেমাটি মুক্তি দেয়া হবে। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করছেন আরিফিন শুভ। ফজিলাতুন নেছা রেণুর চরিত্রে কাজ করছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে দেখা যাবে নুসরাত ফারিয়াকে। শেখ রেহানার চরিত্র করছেন সাবিলা নূর। এ ছাড়া হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার চরিত্রে তুষার খান, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদ, এ কে ফজলুল হকের চরিত্রে শহীদুল আলম সাচ্চু, আবদুল হামিদ খান ভাসানীর চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, শওকত মিয়ার চরিত্রে সিয়াম আহমেদ, জেনারেল ওসমানীর চরিত্রে খন্দকার হাফিজ, আবুল কালাম আজাদকে দেখা যাবে জেল গার্ডের চরিত্রে। ফজলুর রহমান বাবু অভিনয় করছেন খন্দকার মোশতাকের চরিত্রে।

এছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মমভাবে খুন হওয়ার ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত হয় ‘৫৭০’ শিরোনামের একটি সিনেমা। এতে চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী অভিনয় করেছেন বঙ্গবন্ধুর মরদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়া একজন সেনাবাহিনীর চরিত্রে। এটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন আশরাফ শিশির। বাপ্পি ছাড়াও ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মাসুম আজিজ, স্বাধীন খসরু, সুমনা সোমা, কাজী রাজু, এলিনা শাম্মীসহ তিন শতাধিক শিল্পী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘চিরঞ্জীব মুজিব’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন নজরুল ইসলাম। ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত ছবিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ১৯৪৯-৫২ সালের মধ্যকার ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে। এ চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল। এতে ফজিলাতুন নেছা রেণুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা এবং বঙ্গবন্ধুর বাবা ও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন খায়রুল আলম সবুজ ও দিলারা জামান।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) অ্যানিমেশন ‘মুজিব আমার পিতা’ চলচ্চিত্রটি। এটি পরিচালনা করেছেন সোহেল মোহাম্মদ রানা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের পরের দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে নির্মাণ হয়েছে ‘আগস্ট ১৯৭৫’।

চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন সেলিম খান। এতে অভিনয় করেছেন আনিসুর রহমান মিলন, মাজনুন মিজান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ফজলুর রহমান বাবু, তাসকিন রহমান, মাসুমা রহমান নাবিলা, দিলারা জামান, তৌকীর আহমেদ, তানভীন সুইটি প্রমুখ। চলতি মাসের মার্চ মাসে মুক্তি পায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসক ভাষণ নিয়ে নির্মিত সিনেমা রেডিও। এতে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, মমসহ আরও অনেকে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে