সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাত সাড়ে ১২টা প্রায়, পাশেই একটা মাটির ঘর... মৌসুমী হামিদ

বিনোদন রিপোর্ট
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬
ছবি: সংগৃহীত

ছোট পর্দার অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। অভিনেত্রীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে- সে নিয়ে চলছে তর্কবির্তক। ভিডিওটি মূলত এক সাংবাদিক অভিনেত্রীর অনুমতি না নিয়ে ফেসবুকে প্রকাশ করায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন বলে দাবি সাদিয়া আয়মানের।

বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক থেকে শুরু করে তারকাদের মাঝেও চলছে নানা কথা। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে অনেকে তারকা ফেসবুকে কথা বলেছেন। এবার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদও কথা বলেছেন। আর তার পোস্টে তিনি তুলে ধরেছেন শুটিং সেটে ঘটে যাওয়া এক অপ্রীতিকর ঘটনার কথাও।

দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘শুটিংয়ের একটা ঘটনা শেয়ার করি, প্রায় ৩ বছর আগের কথা পুবাইল শুটিং করেছি। বেশ রাত হয়েছে কিন্তু অনেক কাজ বাকি।

সাধারণত আমরা যখন শুটিং করি, বিশেষ করে আউটডোর, তখন কাজের চাপ থাকে বেশি এবং শুটিং লোকেশন এবং মেকআপ রুম বা চেঞ্জ রুম বেশ দূরে হয়। বারবার দৌড়াদৌড়ি করে কাপড় পাল্টাতে বেশ কষ্ট হয় এবং সময়ও বেশি লাগে। রাত সাড়ে ১২টা প্রায়। আমি যেখানে শুটিং করছিলাম তার পাশেই একটা মাটির ঘর ছিল যে ঘরে লাইটের কিছু জিনিসপত্র রাখা ছিল। পরিচালক আমাকে খুব করে অনুরোধ করলেন, বারবার মেকআপ রুমে যেয়ে চেঞ্জ করতে যেই সময় লাগছে সেই সময়টাও নেই। উনি বললেন, আমি যদি অনুমতি দেই উনি আমার কাপড়ের ব্যাগটা ঐ মাটির ঘরে আনার ব্যবস্থা করবেন, ওখানেই চেঞ্জ করতে পারব কি না।

আমি বললাম ঠিক আছে। যদিও সেই ঘরটা মোটেও আরামদায়ক বা সেইফ নয়। তার উপর দেখি ছিটকিনিও নেই দরজায়। আমি বললাম তাহলে কীভাবে হবে?’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘তখন ক্যামেরায় যিনি ছিলেন উনাকে আমি মামা ডাকতাম। উনি বললেন, মামু তুমি টেনশন নিয়ো না আমি আছি, বাইরে পাহারা দিচ্ছি। আমি ওনার কথা বিশ্বাস করে ঐ মাটির ঘরে ঢুকি। সব জানলা বন্ধ করে দেই এবং দরজা চাপিয়ে দেই। আমি নিজেও শুনতে পাচ্ছিলাম ওনারা বাইরেই আছে, কথাবার্তা বলছে। পরিচালক তখন সেটে বা অন্য কোথাও।’

মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘শাড়িটা পরা শুরু করি নাই তখনো। কি যেন মনে করে শাড়িটার ভাঁজ খুলে আমি পুরো শাড়িটা ওড়নার মত কাঁধের উপর রেখে দেই এবং ঠিক তখনি লাইটের একটা ছেলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি ‘এই চেঞ্জ করি’ খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা। ছেলেটা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বের হয়ে গেল। সরি আপু, আমি জানতাম না আপনি ছিলেন। তখন প্রচণ্ড রাগ হলো মামার উপর। চিৎকার দিলাম একটা, আমি শুধু সহযোগিতা করার জন্য এমন একটা জায়গায় কাপড় পাল্টাতে রাজি হলাম, কারণ আমাকে কথা দেওয়া হয়েছিল বাইরে একজন দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দেবে। কিন্তু ছেলেটা উঠান পার হয়ে ঘরে ঢুকে গেল কেউ ওরে বলল না যে ঘরে আমি আছি।’

ইউনিটের এমন দায়িত্বহীনতায় কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন ঘরের ভেতরে থেকেই চিৎকার করছি ইউনিটের উপর তাদের দায়িত্বহীনতা নিয়ে, তখন সেই মামা (চিত্রগ্রাহক) বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন ‘আরে বাদ দে তো ও তো ঢুকেই বাইর হইয়া আসছে, এইটুকু সময় আর কি দেখছে।’

ঐ ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল ‘ঐ তুই কিছু দেখেছিস?’ বলে অসভ্যর মতো হাসতে লাগল। ছেলেটা কোনো উত্তর দিল না।’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘‘আমার শরীরের যতখানি অংশ দেখা গেছে সেটা তেমন কোনো বিষয়ই না, আমি নাকি ওভার রিয়্যাক্ট করছি। একথা শোনার পর আমি বের হয়ে জীবনের সর্বোচ্চ রিয়্যাক্ট সেদিন করেছি সেটে। আমার কলিগের কাছে আমার ‘সম্ভ্রম’ এতটা তুচ্ছ? পরিবার ছেড়ে দিনের বেশির ভাগ সময় যাদের সঙ্গে কাজ করি তারা এভাবে তাদের দায়িত্বহীনতা জাস্টিফাই করবে?’’

এ ঘটনায় চিত্রগ্রাহকে সেট থেকে বের করে দেওয়া হয় জানিয়ে মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘সেটের বেশির ভাগ মানুষের কাছে মনে হয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরও নির্লজ্জের মতো ওনার ওই খ্যাক খ্যাক হাসায় আমি যে রিঅ্যাকশন দিয়েছি সেটা বেশি বেশি ছিল। সবাই তার অ্যাকশনকেই জাস্টিফাই করে গেল। কিন্তু পরিচালক আমার চিৎকার শুনে সেখানে এসে পুরো ঘটনা শুনে ওই চিত্রগ্রাহকে সেট থেকে বের করে দেন। এবং উনি নিজেও ভুল বুঝতে পেরে সরি বলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পুরো ঘটনা ওনাকে বলে ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তোমার পরিবারের কোনো মেয়ে এমন অবস্থায় পড়লে দায়িত্বরত মানুষটা দায়িত্ব পালন না করে যদি এমন করে রসায় রসায় হাসত, তারপর প্রচণ্ড অপমান বোধে যদি তোমার নিজের মেয়ে বা বোন বা তোমার বউ যদি রিয়্যাক্ট করত তুমি কি বলতা তোমার মেয়েকে, মামনি ওভার রিয়্যাক্ট করতেছ কেন? আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম সেটে ঐদিন ওই চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বহীনতা ও অসভ্যতাকে যারা জাস্টিফাই করছিলেন তাদের ওপর।’

এরপর সাদিয়া আয়মানের প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘এবং আবারও অবাক হয়েছি যারা আয়মান সাদিয়ার ভিডিও দেখে পোস্ট করেছেন ভিডিওতে তো তেমন কিছুই দেখা যায় নাই, তাদের উপর । যিনি ভিডিওটি পোস্ট করেছেন তার জন্য আমার কিছুই বলার নাই। উনি ভিডিও ডিলিটও করেছেন। আমি সাধুবাদ জানাই কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে এবং মানুষের ট্রলিং। কারণ আমি ওনাকে যতটুকু চিনি উনি একদমই ক্ষতিকারক মানুষ নন।’

সব শেষে অভিনেত্রী বলেন, ‘বেশ বন্ধুসুলভ হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রচণ্ড পরোপকারী মানুষ। আমি বিশ্বাস করতে চাই না উনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এমন কাজটা করেছেন। লুকিয়ে বা গোপন ক্যামেরায় তো নয়ই। বরং উনি অনুতপ্তই হয়েছেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু যারা বলছেন, এই ভিডিওতে তেমন কিছুই দেখা যায় নাই তাদের জন্য প্রশ্ন আছে, এই তেমন কিছুই না দেখা ভিডিওটির কারণে যে পরিমাণ নোংরা, অসভ্যতা, বুলিং, বডি সেইম, রেইপ থ্রেট মেয়েটাকে সহ্য করতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে সেটা যদি আপনার পরিবারের কোনো মেয়েকে সহ্য করতে হয়, আপনি সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত আছেন তো?’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে