শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

হাতুমের কান্ড

জুয়েল আশরাফ
  ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০

দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ। সারি সারি গাছ, সবুজের বন। মায়াকানন একটি বিশাল বন। এই বনে প্রাণীরাও বড় আকৃতির। বাঘ, মহিষ, সিংহ, কুমির, জলহস্তী দানব সমান। হাতুম নামে একটি শক্তিশালী হাতি এই বনে বাস করে। শরীরে ও ক্ষমতায় সবচেয়ে বড় হওয়ায় বনে তার বেশ নামডাক। তাকে দেখে অন্যসব প্রাণী ভয়ে তার থেকে দূরে থাকে। যখনই হাতুমের খিদে পায়, সে সহজেই তার শুঁড় দিয়ে গাছের ডাল ভেঙে আনন্দে পাতা খায়। পুকুরের কাছে গিয়ে পানি খায় আর পানিতে কোমর ডুবিয়ে গোপ মেরে বসে থাকে। আসলে হাতুম বনের রাজা না। কিন্তু তাকে দেখলেই সবাই আতঙ্কে পালিয়ে যায়। যদিও হাতুম কাউকে বিরক্ত করে না বা কারো কাজে হস্তক্ষেপ করে না; তবুও কিছু প্রাণী তাকে হিংসা করে।

বনের বাঘগুলো হাতুমকে পছন্দ করে না। তারা সবাই মিলে ভাবলো, যেভাবেই হোক এই হাতিকে একটা শিক্ষা দিয়ে আমাদের পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। তার এত বড় শরীর, আমরা তাকে মেরে অনেক দিন তার মাংস খেতে পারব।

অন্য বাঘটি বলল, কিন্তু এত বড় হাতিকে মেরে ফেলা কোনো শিশুর খেলা নয়। কার এই হাতিকে মারার সাহস আছে?

বাঘের মধ্যে একজন ঘাড় তুলে বলল, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে মারতে পারব না, তবে আমার বুদ্ধি দিয়ে তাকে ধরাশায়ী করতে অবশ্যই পারব।

এই কথা শুনে অন্য বাঘেরা সবাই খুশি হয়ে গেল। সবাই তাকে তার বুদ্ধি দেখাতে বলল।

চালাক বাঘটি হাতুমের কাছে গিয়ে সম্মান করল। বলল, বনের রাজা! আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। সর্বদা আমাদের ওপর আপনার ভালোবাসা রাখুন।

হাতুম জিজ্ঞেস করল, কে ভাই তুমি? কোথায় থেকে এসেছ? আমাকে এত শ্রদ্ধা দেখাচ্ছ কেন? আমি তোমাকে চিনি না। কি উদ্দেশ্যে আমার কাছে এসেছ?

মহারাজ! আমি একটি সাধারণ বাঘ। আমাকে জঙ্গলের সমস্ত প্রাণী আপনার কাছে পাঠিয়েছে। জঙ্গলের রাজা সবার দেখাশোনা করেন, তিনি জঙ্গলের অহংকার। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানে কোনো রাজা নেই জঙ্গলে। আমরা সবাই মিলে ভেবেছি আপনার মতো একজন শক্তিশালী হাতিকে জঙ্গলের রাজা করা উচিত হবে। তাই আমরা সমস্ত প্রাণী মিলে ঠিক করেছি। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমার সঙ্গে এসে রাজা হতে পারেন। আমাদের জঙ্গলের রাজা।

এমন রাজা হওয়ার কথা শুনে কে না খুশি হবে? হাতুমও খুশি হলো। কিছুক্ষণ আগে সে কিছুই ছিল না আর অবিলম্বে রাজা হবে ভেবে হাতুম রাজি হয়ে গেল।

দুজনেই হাঁটতে লাগল। চালাক বাঘ বলতে লাগল, শুভ সময় ঘনিয়ে আসছে, একটু দ্রম্নত হাঁটতে হবে।

বাঘ জোরে দৌড়াতে শুরু করল আর হাতুম পেছনে পেছনে তাকে অনুসরণ করল। মাঝখানে একটা পুকুর এলো। সেই পুকুরের চূড়ায় পানি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নিচে অনেক জলাভূমি। ছোট হওয়ায় বাঘটি পুকুরের পাড়ে লাফ দিয়ে হাতুম কতদূর পৌঁছেছে তা দেখতে পেছন ফিরে তাকাল।

হাতুম ভারী শরীর নিয়ে পুকুরে যেতে শুরু করতেই জলাভূমিতে আটকে যেতে থাকে। বেরোতে না পারার কারণে সে বাঘকে ডাকল, আরে! বন্ধু, আমাকে একটু সাহায্য কর। আমি এই জলাভূমি থেকে বেরোতে পারব না।

চালাক বাঘ বলল, আরে! বোকা হাতি, তুমি আমার মতো বাঘকে বিশ্বাস করেছ, কিন্তু এখন কষ্ট করো আর তোমার মৃতু্যর ঘণ্টা গুনতে থাকো, আমি চলে গেলাম!

এই বলে বাঘ খুশি হয়ে ছুটে গেল তার সঙ্গীদের এই সুসংবাদ দিতে।

বেচারা হাতুম! মনে মনে তার বাবার কথা মনে পড়ল। হাতুমের বাবা একদিন বলেছিল, কাউকে একবারে বিশ্বাস না করাই ভালো। আজ অন্ধ বিশ্বাস করে বিপদ ডেকে এনেছে নিজের। এখন উপায় কি?

চালাক বাঘটি সঙ্গীদের সুসংবাদ দিতেই বনের মধ্যে আনন্দ উলস্নাস শোনা গেল। কিছুক্ষণ বাদেই ভানু বানর গাছে গাছে লাফিয়ে এসে যে সংবাদটি দিল, খবর শুনেই সবার চোখ কপালে উঠার উপক্রম। হাতুম হাতি দলবলের সাহায্যে জলাভূমি থেকে রক্ষা পেয়েছে। আর দলবল নিয়ে এদিকেই আসছে, বাঘদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে।

একটু পরই বন কেঁপে উঠল। বনের সমস্ত প্রাণী ভয়ে নিভিয়ে গেল। মাটিতে ধপাস ধপাস শব্দ। ঝড়ের মতোন ভেঙে আসছে ওরা। বাঘগুলো দৌড়ের ওপর, দৌড়!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে