সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

নিরু মামার জাদুর কাঠি

আশরাফ আলী চারু
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

নিরু মামা অনেক দিন পর নতুন বছরের প্রথম দিকে আবির্ভূত হয়েছে। সাকিবরা ব্রহ্মপুত্রের চরে খেলছে। ঠিক তখনই এখান থেকে একটু দূরে নলখাগড়ার আড়ালে নিরু মামাকে দেখা গেল। কী যেন কিছু খুঁজছে। হুররে বলে সবাই দৌড়ে গিয়ে নিরু মামাকে ঘিরে ধরল।

একজন বলল- মামা, তুমি এতদিন থেকে ঘরে আবদ্ধ থাকলে কেমনে?

-এমন কী ঘরে থাকলাম। সাধনা করতে হলে ঘরেই যে থাকতে হয়।

-কী সাধনা করলে মামা?

-কত মানুষকে ভূতে আছড় করে, তাই না? বল তো কয়জন লোক আছে ভূত ছাড়াতে পারে?

-খুব কমই লোক আছে মামা। তো কী হয়েছে? জিজ্ঞেস করল রাকিব।

-কী আর হবে। এখন সেই কাজটি আমিই করব। দীর্ঘ দিন সাধনা করে জানতে পেরেছি এখানে একটি জাদুর কাঠি আছে। সেই কাঠিটিই খুঁজছি।

গল্প করতে করতেই নিরু মামা উপুড় হয়ে একটি কাঠি হাতে নিল। রংধনুর রঙে সাজানো সেই কাঠি। তিন-চার ইঞ্চি লম্বা। রঙিন কাঠিটি হাতে তুলেই কাপড়ের ছোট্ট থলেতে ভরে ফেলল। সবাই হা করে তাকিয়ে দেখল।

এবার নিরু মামা বলল, কাউকে ভূতে আছড় করলে শুধু তোরা এই খবরটা আনবি। বাকি কাজ তোদের নিরু মামার। এ টুকু বলেই সে দ্রম্নত বাড়ির দিকে পথ ধরল।

কয়েকদিন থেকেই বিমলের মন খারাপ থাকে। আজ বন্ধুরা তাকে ছাড়ল না। বিমল বন্ধুদের আগ্রহ দেখে জানাল, তার মায়ের কী যেন হয়েছে। আচরণ দেখে মনে হয় ভূতটুতে ধরেছে।

রাকিব তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠল, এই ব্যাপার। চল সাকিবদের বাড়ি। নিরু মামাকে বললে সব সমাধান হয়ে যাবে। স্বদলবলে ছুটল তারা। নিরু মামাকে বাড়িতে পেয়ে বিমল সব খুলে বলল। নিরু মামা রাতে বিমলদের বাড়িতে সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলল।

রাত সাড়ে এগারোটার মতো বাজে। বাড়ির সবাই ঘুমে অচেতন। বিমলদের ঘরেই শুধু কেরোসিনের কুপি শিষ উঁচিয়ে জেগে থাকার কথা জানান দিচ্ছে। ঘরের ভেতর শুয়ে বসে আছে সাকিবসহ ছয়/ সাত বন্ধু। সবাই যখন আশা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবে ভাবছিল তখনই নিরু মামা এলো।

বিমল তার মাকে বিছানা থেকে নামিয়ে বসাল। পাশে বসল বিমলের বাবা। চার পাশে ঘিরে বসল বিমলসহ বন্ধুরা। কুপি বাতিটি মাঝখানে রাখা হলো। এবার নিরু মামা সবাইকে নীরব হতে বলল। সবাই নীরব হয়ে গেল। এতটাই নীরব যে, একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনতে পাচ্ছে না।

নিরু মামা একটা কাপড়ের থলে খুলে তার ভেতর থেকে এক বিঘত লম্বা একটি কাঠি বের করল। এই কাঠি দিয়ে ছোট্ট একটা গোল দাগ টানল। মাঝখানে রাখল কাঠিটি। এরপর সেই থলে থেকে আরেকটি থলে বের করল। সেই থলে থেকে আরেকটি। এইভাবে তেরোতম থলে খুলে চোদ্দ নম্বর থলে থেকে বের করল সেই রঙিন জাদুর কাঠি। কাঠিতে ঝাঁড়ফুক দিয়ে রাখল সেই গোল দাগের ভেতর। এবার আরও নীরব হতে বলল সবাইকে। সবাই যখন আরও নীরব হলো তখন ঘরের টিনের চালে একটু শব্দ হলো। নিরু মামা শব্দ শুনে বলতে লাগল- হ, বাবা। তোমার আগমন আমি বুঝেছি। জি বাবা, হ, হ। ঠিক আছে বাবা। উপর দিকে মুখ তুলে এসব কথা বলার পর বিমলের মাকে এবার জিজ্ঞাসার পালা।

-আচ্ছা বলেন তো, আপনি গত কয়েক মাসের মধ্যে কারুর ঘর থেকে তরকারি চেয়ে খেয়েছিলেন?

-না তো!

-ভালো করে মনে করেন। কাসার বাটিতে করে সেই তরকারি দেওয়া হয়েছিল।

-হ,হ, মনে পড়েছে। শ্যামলের মা'র কাছে কাসার বাটিতে একদিন তরকারি চেয়ে এনে খেয়েছিলাম।

-সেখানেই সমস্যা। সেদিনই ওই কাসার বাটিতে করে একটা ভূত এসে আপনাকে ভর করেছে। এবার নিরু মামা আবার সবাইকে নীরব হতে বলল। সবাই যখন নীরব তখন আবার একটা শব্দ হলো চালে। মাথা তুলে নিরু মামা আবার বলতে লাগল- হ, বাবা, ঠিকাছে, ঠিকাছে। জয় বাবা। বিদায় বাবা।

এবার সবাইকে উদ্দেশ করে নিরু মামা আবার বলল, বাবা বলে গেলেন কোন সমস্যা নেই। আমি একটা তাবিজ দিয়ে যাচ্ছি আর কাল একজন ডাক্তার দেখিয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়ালেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

সবাই আবারও নিরু মামার কারিশমা দেখল। বিশ্বাস না করে উপায়ও নেই, কেননা, টিনের চালের শব্দটা মিথ্যে নয়। শ্যামলের মা'র কাসার থালার তরকারি সেটা যে জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। সবচেয়ে বড় প্রমাণ সেই যাত্রায় বিমলের মা সুস্থও হয়ে উঠেছিল।

তবে সেই সুস্থতা যে ডাক্তার সাহেবের চিকিৎসায় হয়েছিল সেটা আর কেউ না জানলেও নিরু মামা ঠিকই জানে। নিরু মামার সেই টিনের চালে শব্দ হওয়ার কারিশমাটা চালে গাছ পাতা পড়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আর জাদুর কাঠি সেটা সম্পর্কে আজ আর নাই-বা বললাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে