শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইংরেজি ভাষার ভারতীয় কবি নিসিম এজেকিয়েল

সরকার মাসুদ
  ১৮ জুন ২০২১, ০০:০০

ভারতে ইংরেজি ভাষায় কবিতা লিখে গভীর মান্যতা অর্জন করেছেন তেমনই একজন কবি নিসিম এজেকিয়েল (১৯২৪-২০০৪)। নিসিম সর্বার্থে আধুনিক কবি। নিবিষ্ট পাঠে তার কার্বের অনেক বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়বে, যেমন পড়ে অন্য অনেকের বেলায়ও। কিন্তু তার কবিতার প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে অন্তর্মুখিতা ও নিবিড় সারল্য। এই ভেতরসন্ধানী সারল্যের সঙ্গে মিশেছে প্রার্থনার ভাষার গাম্ভীর্য। সর্বদাই তিনি হালকা ও অভিঘাতী ভাষায় ব্যক্ত করেন গূঢ় অনুভূতি : খড়াবৎং, যিবহ :যবু সধৎৎু, ভধপব/বঃবৎহরঃু রিঃয :ড়ঁপযরহম মৎধপব (সধৎৎরধমব) 'বিয়ের সময় প্রেমিক-প্রেমিকারা অনুভব করে এক চিরকালিকতা আর হৃদয়-ছুঁয়ে-যাওয়া শুভেচ্ছাবার্তা' (বিবাহ)। নিসিম এজেকিয়েলের বেশ কিছু কবিতায় অধ্যাত্মভাবনার ছদ্মবেশে ধর্মীয় চিন্তা ফুটে উঠেছে। ঊাবহঃ সেরকম একটি কাব্য। আবেগের চূড়ান্ত মুহূর্তে প্রিয়তমা এখানে প্রেমিক পুরুষকে যে ডরহব ধহফ ইৎবধফ-এর কথা বলছে তা শুধু বাইবেলের ইঙ্গিত দিচ্ছে এমন নয়, মেয়েটির বিদ্যাজাহিরের সরল ভঙ্গিও তুলে ধরছে। এই জায়গায় লেখক একটু ব্যঙ্গ করেছেন বলেও মনে হয়। এবং তা অনুকম্পামিশ্রিত ব্যঙ্গ। গধৎৎরধমব কবিতারই এক স্থানে লেখক বলেছেন, ঞযব নৎরফব রং ধষধিুং ঢ়ৎবঃঃু, :যব মৎড়ড়স/ধ ষঁপশু সধহ. নববধূ সম্বন্ধে এই যে তিনি ধষধিুং ঢ়ৎবঃঃু শব্দ বন্ধটি ব্যবহার করলেন, এখানেই একজন কবির শুভবোধ ও কল্যাণী দৃষ্টির পরিচয় মেলে।

কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা, অ্যাকাডেমিক কাজকর্ম সবক্ষেত্রেই প্রতিভার গাঢ় স্বাক্ষর রেখেছেন। পেশাগত জীবনে নিসিম ছিলেন মুম্বাইয়ের মিথিভাই কলেজের অধ্যাপক ও ইংরেজি বিভাগের প্রধান। ছিলেন ছঁবংঃ ও ওসঢ়ৎরহঃ পত্রিকার যোগ্য সম্পাদক। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঞরসব :ড় পযধহমব বেরোয় ১৯৫২ সালে। ১৯৫৩ সালে ঝরীঃু ঢ়ড়বসং ১ ঞযব ঞযরৎফ কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশকাল ১৯৫৯। তার কয়েক বছর পর লেখকের পরিণতমনস্ক ও চিন্তাগভীর কাব্যগ্রন্থ ঞযব ঊীধপঃ ঘধসব (১৯৬৫) প্রকাশিত হয়। ঈড়ষষবপঃবফ চড়বসং আলোর মুখ দ্যাখে ১৯৮৯ সালে। নিসিম এজেকিয়েল একজন প্রথম শ্রেণির চিন্তকও বটে। ঝবষবপঃবফ চৎড়ংব (১৯৯২) ও ঘধরঢ়ধঁষ্থং ওহফরধ (১৯৭৬) নামের গদ্যগ্রন্থ দুটিতে তিনি উচ্চস্তরের প্রবন্ধসামর্থ্য দেখিয়েছেন। ঞযব ঘধসব ড়ভ ওহফরধ কাগজটির শিল্প সমালোচনা বিভাগে নিয়মিত লিখেছেন তিনি। পেয়েছেন সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৩) ও পদ্মশ্রী পুরস্কার (১৯৮৮)।

অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য ও ভাবের সহজতা নিসিমের কবিতার দুই প্রধান দিক। এই লেখক মনে করতেন, সহজ রচনাও গভীর হতে পারে যদি অনুভব হয় চেতনা নিবিড় আর তার প্রকাশ হয় নির্ভার। তার কয়েকটি শ্রেষ্ঠ কবিতার নাম ঞযব পড়ঁঢ়ষব, ঘঁফবং ্থ৭৮, ঊহঃবৎঢ়ৎরংব, গধৎৎরধমব, ঝড়ধঢ়, ঞযব চৎড়ভবংংড়ৎ, ঘরমযঃ ড়ভ :যব ঝপড়ৎঢ়রড়হ। ভাবনিবিড়তা ও প্রকাশসারল্য এসব কবিতার সবচেয়ে বড় গুণ। ঞযব টহভরহরংযবফ গধহ নামে নিসিম এজেকিয়েলের আরও একটি কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছিল ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। লেখকের সহজাত দার্শনিক জিজ্ঞাসাসমূহ এই বইয়ের নিচুকণ্ঠী কবিতাগুলোর আশ্চর্য অখন্ড প্রবহমানতায় ধরা পড়েছে।

নিসিম শহরে বেড়ে উঠেছেন। তার কর্মস্থলগুলোও শহরেই। ইনি নাগরিক কবি। গ্রামের ছবি বা অন্য কোনো অনুষঙ্গ তার কাব্যে বিরল। নগরের বিশেষ কিছু ছবি যেমন শপিংমলে নর-নারীর চলাফেরা-তাদের মুখের অভিব্যক্তি, কসমোপলিটান মুম্বাইয়ের পানশালায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের একসঙ্গে মদ্যপান। একাধিকবার এসেছে তার কবিতায়। টৎনধহ শিরোনামের কবিতায় তিনি বলেছেন ঞযব পরঃু ষরশব ধ ঢ়ধংংরড়হ নঁৎহং/ঐব ফৎবধসং ড়ভ সড়ৎহরহম ধিষশং, ধষড়হব।

নিসিম এজেকিয়েলের পরে ভারতে আরও অনেকেই ইংরেজিতে কাব্যচর্চা করেছেন। তাদের কেউ কেউ যথেষ্ট সুনামও কুড়িয়েছেন। এই দলে আছেন কমলা দাস, জয়ন্ত মহাপাত্র, ভারতী রায়, বিক্রম শেঠ প্রমুখ। কিন্তু এদের সকলেরই পথিকৃৎ ও গুরু হচ্ছেন নিসিম। তাকেই ইংরেজি ভাষার ভারতীয় কবিদের জনক মনে করা হয়। এই অভিধা ও সম্মান তার অমামুলি প্রতিভার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঞরসব :ড় পযধহমব (১৯৫২)-এর আত্মগত ভাবানুষঙ্গের অতিসীমিত গন্ডি থেকে বেরিয়ে দশ/পনের বছরের ভেতর কবিতাকে একটা জিজ্ঞাসাদীপ্ত সহজ দার্শনিক স্তরে নিয়ে যেতে পেরেছেন তিনি। নিসিমের পরিমিতিজ্ঞান ও শব্দের ওপর নিয়ন্ত্রণ অনবদ্য। আভাসে-ইঙ্গিতে মনোভাব প্রকাশের বেলায় তিনি রীতিমতো ওস্তাদ। তার ঘরমযঃ ড়ভ :যব ঝপড়ৎঢ়রড়হ শিরোনামের বিছার কামড়সংক্রান্ত দীঘি, বিখ্যাত কবিতাটিতে আয়রনির প্রয়োগ খুবই যথাযথ ও দক্ষ। সাহিত্যকৌশলের এমন সার্থক ব্যবহার বাংলাভাষার খ্যাতনামা কবিদের কাব্যেও খুব একটা দেখা যায় না। বিখ্যাত চিত্রী যামিনী রায়ের ছবিতে আমরা ষাঁড়, পুতুল, তৈজসপত্র এগুলো দেখতে পাই। এসব গ্রামীণ বিষয়। যামিনীর শিল্পদৃষ্টি কিন্তু খুবই চৌকস। আধুনিক কলারীতির অনেক কিছুই প্রযুক্ত হয়েছে তার 'কাজ'সমূহে। বিশেষ অর্থে যামিনী রায়ও নাগরিক চিত্রকর। এই শিল্পী তার সমকালিন এক জ্ঞানী কবির চোখে কীভাবে ধরা পড়েছেন, দেখুন : অ চবড়ঢ়ষব ঢ়ধরহঃবফ যিধঃ রঃ ংধ/িরিঃয বুবং ড়ভ ংঁঢ়ঢ়ষু রহহড়পবহপব/অহ ঁৎনধহ ধৎঃরংঃ ভড়ঁহফ :যব ষধ/িঞড় সধশব রঃং ংঢ়রৎরঃং ংরহম ধহফ ফধহপব. (ঔধসরহর জড়ু)

নিসিমের কবিতা মন দিয়ে পড়লে একটা জিনিস সবার আগে চোখে পড়ে। তা হচ্ছে তার কাব্যে ব্যবহৃত স্থান, ব্যক্তি বা বস্তু ভারতীয়তা। এসবের বাইরেও যে ভাব-পরিমন্ডল তৈরি হয়েছে তার ঐতিহ্য ও ভারত সংশ্লিষ্টতা লক্ষণীয় বিষয়। আরও যা বিশেষভাবে নজরে আসে তা হচ্ছে, প্রেম-অপ্রেমের অনুভূতি, নিঃসঙ্গতা, যৌনতা, বিষণ্নতা ও নানামুখী বিচ্ছিন্নতার বোধ। এগুলো তার কবিতায় বারবার এসেছে। এসেছে সফল কবিতার অবয়বে। যে সব বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করেছেন এই লেখক তারা আমাদের আশপাশেই অস্তিত্বমান। দেখা যাচ্ছে, নিসিম প্রায়ই আটপৌরে জীবনের একঘেয়ে প্রাত্যহিকতার ভেতর থেকেও তুলে এনেছেন অভাবিতপূর্ব উপলব্ধি-গভীরতাসন্ধ জীবন-জিজ্ঞাসা-কল্পনা-মননের মধু ও বিষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে