বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

শুরুটা কেমন হবে মানষীর

ম জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ০২ জুন ২০২২, ০০:০০
শুরুটা কেমন হবে মানষীর

অপেক্ষার পালা শেষ। আগামীকাল শুক্রবারই মুক্তি পাচ্ছে বলিউডের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা 'পৃথ্বীরাজ'। যদিও করোনার কারণে বারবার মুক্তি পিছিয়ে যাওয়ায় এই সিনেমা মুক্তির ঠিক কয়েকদিন আগে (রোববার) করণি সেনার রোষের মুখে সিনেমাটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'সম্রাট পৃথ্বীরাজ'। ভারতীয় বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারের এ সিনেমাটি ঘিরে চর্চা শুরু হতেই আপত্তি তুলেছিল করণি সেনা। নামকরণ বদলাতে হবে এই দাবি নিয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছিল তারা। ছবির নাম না বদলালে মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আবেদন জানানো হয়েছিল করণি সেনার তরফ থেকে। সেই রোষের মুখে পড়েই প্রযোজক ও পরিচালক মিলে পাল্টে দিলেন সিনেমার নাম। করণি সেনার মূল অভিযোগ, অক্ষয় কুমারের সিনেমায় হিন্দু সম্রাট পৃথ্বীরাজের চরিত্রকে ভুলভাবে ফুটিয়ে তোলা

হয়েছে। ছবিতে ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যাও রয়েছে।

এত কিছুর পরেও সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত হলে মুক্তি পাচ্ছে- তাতেই বেজায় খুশি অক্ষয় কুমার। কারণ, সিনেমাটিকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা 'আক্কি' খ্যাত অক্ষয়ের। অনেকগুলো কারণে সিনেমাটির মুক্তির জন্য মুখিয়ে রয়েছেন এই অভিনেতা। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, এই সিনেমার মাধ্যমে ত্রিশ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবার ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাকে। মুক্তির আগে ইশ্বরের আশীর্বাদ নিতে স্ত্রীকে নিয়ে মন্দিরে যান অক্ষয়। নিজের ইনস্টা হ্যান্ডেলে মন্দির দর্শন থেকে পুজো দেওয়ার সেই বিশেষ মুহূর্তের ছবি শেয়ার করেছেন 'খিলাড়ি' কুমার। সঙ্গে ছিলেন সিনেমার নায়িকা মানষী চিলস্নার। গঙ্গাবক্ষে গোলাপি কুর্তা পরে পুজোর থালা হাতে দেখা গেল আক্কিকে। কপালে রয়েছে লাল টিকা। পুজো সেরে সোজা ডুব দিল গঙ্গায়। আক্কির ইনস্টা প্রোফাইলে চোখ রাখলেই দেখা যাবে সেই ভিডিও। সেই ভিডিওতে আরও দেখা যাচ্ছে, অক্ষয়ের সঙ্গে ছবির সাফল্য কামনায় চোখ বন্ধ করে দু'হাত জোর করে প্রার্থনা করছেন বলিউডের নবাগতা অভিনেত্রী ও সাবেক বিশ্বসুন্দরী মানষী চিলস্নারও। গোলাপি সালোয়ার-কুর্তাতে দেখা গেল রিল লাইফের রাজকুমারীকে। সেই বিশেষ মুহূর্তের ছবি নিজের ইনস্টা হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন মানষী নিজেও। ম্যাচিং পোশাকে পুজোর থালা হাতে ক্যামেরার দিকে পোজ দিয়েছেন অক্ষয়-মানষী জুটি। মাঝে রয়েছেন পরিচালক চন্দ্রপ্রকাশও।

প্রথম ট্রেইলারের পর এরই মধ্যে সিনেমাটির দ্বিতীয় ট্রেইলারও প্রকাশিত হয়েছে অন্তর্জালে। সেই ট্রেইলারে অক্ষয় কুমারের পাশাপাশি নজর কেড়েছে সিনেমার নায়িকা মানষী। এই সিনেমার মাধ্যমেই প্রথমবার বলিউডের সিনেমায় আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৭ সালের বিশ্ব সুন্দরী নির্বাচিত এই ভারতীয় অভিনেত্রীর। এখন কেবল দর্শকের মুখোমুখি হওয়ার পালা। জীবনের প্রথম সিনেমায় ২৫ বছরের বড় বলিউডের হেভিওয়েট তারকা অক্ষয় কুমারের বিপরীতে অভিনয় করে যেমন উচ্ছ্বাসিত এই নবাগত, তেমনি তার অভিনয় দর্শক কীভাবে গ্রহণ করবেন, অভিষেকটা মনের মতো হবে কিনা- এ নিয়েও সংশয় কাজ করছে তার মনে। যদিও সিনেমাটির গল্প, লোকেশন, গান সবকিছু নিয়েই বেশ আশাবাদী তিনি। তাছাড়া সিনেমাটিতে তার চরিত্রেও অনেক ব্যতিক্রম বলে মন্তব্য করেছেন মানষী চিলস্নার। পাশাপাশি পর পর প্রকাশ হওয়া দু'টি ট্রেইলারে দর্শকের অতিমাত্রার প্রশংসা তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। প্রায় ২০ বছর ধরে গবেষণা করে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন পরিচালক চন্দ্রপ্রকাশ। মানষী চিলস্নার বলেন, 'আমি জানি, করোনার ধকল কাটিয়ে গোটা বিশ্ব এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরতে পারেনি। আমাদের সিনেমা হলের পরিবেশও চেনা ছন্দ ফিরে পায়নি। দক্ষিণী সিনেমাগুলো ভালো ব্যবসা করলেও সম্প্রতি কঙ্গনা দি'র 'ধাকড়' পুরোপুরি ফ্লপের তালিকায় চলে গেছে। তবে আমার বিশ্বাস 'সম্রাট পৃথ্বীরাজ' বলিউডের সেই হতাশা কাটিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেবে।'

২৫ বছর বয়সি মানষী চিলস্নার ১৯৯৭ সালের ১৪ মে হরিয়ানায় এক চিকিৎসক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা দু'জনেই পেশায় চিকিৎসক। বাবা মিত্রবসু চিলস্নার ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের একজন বিজ্ঞানী। আর মা নীলম চিলস্নার ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান বিহেভিয়র অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক। বাবা-মাকে দেখে ছোট থেকেই মানষীর ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবেন। তখন থেকেই পড়ার বইয়ে মুখ গুজে থাকতেন মানষী। আর বাকি পাঁচটা মেয়ের মতো পড়াশোনাটাই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। একসময় মানষীর পরিবার হরিয়ানা থেকে চলে আসে উত্তর দিলিস্নতে। তখন মানষী ভর্তি হন দিলিস্নর সেন্ট থমাস স্কুলে। দ্বাদশ শ্রেণিতে খুব ভালো ফলাফল করে সোনিপাতের ভগতফুল সিংহ সরকারি কলেজ ও হাসপাতালে (মহিলা) ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন।

পড়াশোনার পাশাপাশি বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী রাজা রেড্ডি, রাধা রেড্ডি এবং কৌশল্যা রেড্ডির কাছে মানসির তালিম চলছিল কুচিপুরি নৃত্যশৈলীরও। এমনকি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ছাত্রী তিনি। পড়াশোনা, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, নাচ আর নাটক এই নিয়ে জীবনটা একই খাতে বইছিল মানষীর। তবে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় একবার অংশ নেওয়ার একটা সুপ্ত বাসনা ছিল তার মনের মধ্যে। সে কথাটা মা-বাবাকে একদিন বলেও ফেলেন। মেয়েকে উৎসাহ দিতে কোনো কার্পণ্য করেননি তার বাবা-মা। সে সময় চন্ডীগড়ে ছিলেন মানষী। একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পান। আর দেরি না করে নাম লেখান সেই প্রতিযোগিতায়। সেই থেকে জীবনটাকে একেবারে অন্যভাবে দেখা। তখন থেকেই বিশ্বের সেরা সুন্দরীর মঞ্চে সেরার তকমা আদায় করার জন্য শুরু কঠিন অধ্যবসায়। যে সময় আর পাঁচটা ছাত্রী ঘুমতে যেতেন, সে সময় কঠিন অনুশীলনে ব্যস্ত থাকতেন ভারতের নতুন বিশ্ব সুন্দরী। একটা বছর ঠিকমতো পড়াশোনাটাও করে উঠতে পারেননি সে জন্য। যদিও জয়ের শেষ হাসিটা হেসেছেন মানষী। ২০১৭ সালের ২৫ জুন হরিয়ানার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে জিতে নিয়েছিলেন 'মিস ইন্ডিয়ার' খেতাব। একই বছরে বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট জিতে নেন মানষী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে