সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবার রাজকীয় ঝলক

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
ঐশ্বর্য রাই বচ্চন

বিশ্বকাঁপানো এক বিশ্বসুন্দরীর নাম ঐশ্বর্য রাই বচ্চন। বলিউডের অমিতাভ বচ্চন পরিবারের একমাত্র পুত্রবধূ তিনি। এক সময় অভিনয়ে তুমুল ব্যস্ত থাকলেও বিয়ের পর স্বামী সন্তানই তার কাছে বেশি জরুরি। তারপরও অভিনয় থেকে বিদায় নেননি সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরী। এমনকি চলচ্চিত্রে তার আবেদনও কমেনি বিন্দুমাত্র। কেবল একান্ত অনুরোধে এবং চরিত্র প্রধান সিনেমাগুলোতেই মাঝেমধ্যে দেখা মেলে ঐশ্বর্য ঝলক। তাও আবার ভালো নির্মাতা, গল্প ও চরিত্র পছন্দ হতে হবে- না হলে সিনেমা করেন না এই 'বলিউড রানী'। সেই ধারাবাহিকতায় লম্বা বিরতির পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণী সিনেমা 'পোন্নিয়িন সেলভান' দিয়ে পর্দায় ফিরেই বাজিমাত করেন ঐশ্বর্য রাই। দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস ঘিরে সিনেমাটির গল্প আবর্তিত হয়েছে। তামিল, হিন্দি, তেলেগু, মালয়ালম ও কন্নড় ভাষার ছবির মাধ্যমে বলা চলে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটে তার। 'পোন্নিয়িন সেলভান' সিনেমাটি ঘিরে শুরু থেকেই প্রত্যাশার পালস্না বেশ ভারী ছিল। অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বক্স অফিস মাতাবে সিনেমাটি। সেই ধারণাকে সত্যে রূপ দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহে একাধিক রেকর্ড নিজের করে নিয়েছে 'পোন্নিয়িন সেলভান-১'। মণি রত্নম পরিচালিত এ সিনেমাটি মুক্তির মাত্র দুই সপ্তাহে ঘরে তুলেছে ৪৫০ কোটি টাকা! যা আয়ের দিক দিয়ে পেছনে ফেলেছে চলতি বছর ৩ জুন মুক্তি পাওয়া 'বিক্রম' সিনেমাটিকে। এই সিনেমাটি সারাবিশ্বে আয় করেছিল ৪৪২ কোটি টাকা। দর্শকের মন জয় করে নিয়ে বক্স অফিসে ভালোই নম্বর তুলছে ঐশ্বর্য-কমল হাসানের সিনেমাটি। দক্ষিণের সবচেয়ে বড় বড় তারকার এই ছবিটির নির্মাণও ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। এমনকি সবচেয়ে ব্যয়বহুল তামিল সিনেমাগুলোর তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছে এটি। পাশাপাশি সিনেমাটিতে একঝাঁক তারকার দেখাও মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।

এবার সময় হলো সিনেমাটির দ্বিতীয় কিস্তির। আগামীকাল ২৮ এপ্রিল ভারতজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে 'পোন্নিয়িন সেলভান-২'। এই গ্রীষ্মে সিনেমাটি ঝড় তুলবে বলে ধারণা ভারতীয় সিনে বিশ্লেষকদের। এমনকি এটাও ধারণা করা হচ্ছে 'পোন্নিয়িন সেলভান-২' প্রথম কিস্তির রেকর্ড ভাঙবে। এরই মধ্যে লাইকা প্রোডাকশনস এবং মাদ্রাজ টকিজ প্রকাশ্যে এনেছে নতুন কিস্তির পোস্টার ও ট্রেইলার। প্রায় সাড়ে ৩ মিনিটের ট্রেইলারে নন্দিনীর বেশে নজর কাড়েন সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী। দ্বিতীয় পর্বের বিষয়বস্তু প্রথমটিরই মতো, দক্ষিণ ভারতের চোল সাম্রাজ্য। রাজরাজ চোল ছিলেন এই বংশের শক্তিশালী এবং শ্রেষ্ঠ রাজা। তার রাজত্বের কিছু সময়ের ইতিহাসই ধরা দিয়েছে 'পোন্নিয়িন সেলভান'-এ। দ্বিতীয় পর্বেও থাকছে আগের গল্পেরই রেশ। এই ছবিতেও রানীর ভূমিকায় দেখা যাবে ঐশ্বর্যকে। ছবিতে এই অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন দ্বৈত চরিত্রে। সঙ্গে বিক্রম, তৃষা কৃষ্ণন এবং জয়ম রবির মতো দক্ষিণের তারকারা। এখানে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় তামিল প্রকল্প 'পোন্নিয়িন সেলভান'- যার সিকু্যয়ালও রাজকীয়ভাবে মুক্তি পাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে। ছবিটি বিখ্যাত তামিল লেখক কল্কি কৃষ্ণমূর্তির 'পোন্নিয়িন সেলভান' উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ আর রহমান।

'পোন্নিয়িন সেলভান'র প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি নিয়ে ঐশ্বর্য রাই বচ্চন বলেন, 'দর্শক আমাকে এখনো ভালোবাসে সেটা এই সিনেমাটির প্রথম পর্ব মুক্তির পর নতুন করে বুঝতে পারলাম। সত্যি দর্শকদের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এতটা সফল হবো ভাবিনি। কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি। আশা করি, 'পোন্নিয়িন সেলভান-২' সিনেমাটিও আপনাদের পরিপূর্ণ বিনোদনের মাধ্যমে তৃপ্ত করবে।'

আজকের এই ঐশ্বর্য রাই হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটা কখনোই মসৃণ ছিল না, ছিল সংগ্রামের কাহিনী। ১৯৭৩ সালের ১ নভেম্বর ভারতের কর্নাকট রাজ্যের মাঙ্গোলোরে জন্ম হয় 'বলিউডের সম্রাজ্ঞী' নামে খ্যাত ঐশ্বর্য রাইয়ের; ডাকনাম অ্যাশ। বাবার নাম কৃষ্ণ রাজ রাই এবং মায়ের নাম ব্রিন্দা রাই। দুই ভাই বোনের মধ্যে অ্যাশ ছোট। একমাত্র বড় ভাই আদিত্য রাই সেনাবাহিনীতে আছেন। ছোটবেলায় ঐশ্বর্যর বাবা-মা চলে আসেন মুম্বাই শহরে। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী ছিলেন সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী। বিশেষ করে গণিতে তার পান্ডিত্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

ছোটবেলায় স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই পথ চলতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু কলেজের গন্ডি পেরোনোর সৌভাগ্য তার হয়নি। স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে রচনা সান্সাদ একাডেমি অব আর্কিটেকচারে ভর্তি হলেও মডেলিংয়ের জন্য পড়াশোনার ইতি টানেন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে প্রচুর মডেলিং ও সিনেমায় কাজের প্রস্তাব পান। তাই পড়ালেখা ছেড়ে মিডিয়ায় কাজ করতে দুইবার ভাবতে হয়নি তাকে।

যদিও কিশোর বয়সে টানা পাঁচ বছর ধরে শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং সঙ্গীত চর্চা করতেন ঐশ্বর্য। তবে ক্যামেরার সামনে তিনি অনেক আগেই দাঁড়িয়েছেন। ক্লাস নাইনে পড়াকালীন একটি পেন্সিলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ঐশ্বর্যর। এরপর ১৯৯৩ সালে আমির খানের সঙ্গে পেপসির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লাইমলাইটে আসেন। তার কাজের দক্ষতার জন্য অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে শুভেচ্ছাদূত নিযুক্ত করেন। ১৯৯৪ সালে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে 'বিশ্ব সুন্দরী' নির্বাচিত হন এই ভারত সুন্দরী। এভাবেই শুরু হয় তার 'বলিউডের রানী' হওয়ার যাত্রা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে