শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সেরা প্রাপ্তিতে শুভ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার'। এটি পরিচালনা করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। বহুল আলোচিত এই সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এই সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন বাংলাদেশের অভিনেতা আরিফিন শুভ। শুটিং, ডাবিং, এডিটিং এবং সেন্সর বোর্ডের ধাপ পেরিয়ে সিনেমাটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। ক্যারিয়ারের সেরা ছবির জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। উঠতি এই তারকাকে নিয়ে লিখেছেন মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

ভাগ্যটা সুপ্রসন্নই বটে। এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ সত্যিই গর্বের। মাত্র একটি কাজের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের সব প্রাপ্তি মিটে গেল আরিফিন শুভর। এর আগে কখনো এমন চরিত্রে দেখা যায়নি আরিফিন শুভকে। তার অভিনীত প্রতিটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন রোমান্টিক-অ্যাকশান চরিত্রে। গতানুগতিকের সেই ফরমেট ভেঙে একেবারেই নতুন রূপে হাজির হচ্ছেন বায়োপিকের প্রধান চরিত্র নিয়ে। তাও আবার সেই বায়োপিকটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র নিয়ে। বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয় করার পর নিজের শিল্পী জীবনের এক তৃপ্তির কথা বলেন আরিফিন শুভ। বলেন, 'আর যদি কোনো চরিত্রে অভিনয় করা নাও হয় কিংবা পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়, তাতে কোনো আফসোস বা আক্ষেপ থাকবে না।'

'মুজিব : একটি জাতির রূপকার'-এ যুক্ত হওয়া নিয়ে অনেকেই ভেবেছিলেন বিভিন্ন জনের সুপারিশেই এই ছবিতে নেওয়া হয়েছে শুভকে। অথচ সে নিজেই জানতেন না অডিশনের মাধ্যমে তাকে কোনো চরিত্রের জন্য নেওয়া হয়েছে। সুপারিশে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে ভুল ভাঙান শুভ। তিনি জানান, এই ছবিতে তাকে সিলেক্ট করার জন্য একাধিকবার অডিশন দিতে হয়েছিল। কলকাতায় প্রথম তাকে অডিশনের জন্য কল করা হয়। সেখানে গিয়ে প্রথম দিনের অডিশনে কিছুই জানাননি যে তাকে নেয়া হবে কী না। এমনকি আরিফিন শুভ তখন কেবল যে কোনো একটি চরিত্রে কাজের জন্যই অডিশন দিচ্ছিলেন। সিলেকশন বোর্ড ও শ্যাম বেনেগালসহ গোটা টিমের কেইই জানাননি কাকে কোন চরিত্রের জন্য অডিশন নেয়া হবে। আরিফিন শুভ বলেন, 'আমি এত বড় ক্যানভাসে আসলে থাকতে চেয়েছিলাম। সেটা যেই চরিত্রই দেয়া হোক না কেন। সেটিই আমার জন্য সম্মানজনক ছিল। কিন্তু পর পর কয়েকটা অডিশনের পর যেদিন আমাকে জানানো হলো বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে আমাকেই সিলেক্ট করা হয়েছে, সেদিন থেকে আমার জীবনের সব অপ্রাপ্তি যেন মুছে গেল। এখন ছবিটির মুক্তির অপেক্ষায় আমি।' বাংলাদেশে সিনেমাটি ৩১ জুলাই সেন্সর ছাড়পত্র পেলেও ভারতে সেন্সর ছাড়পত্রের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সেখানে ছাড়পত্র পেলেই জানানো হবে মুক্তির চূড়ান্ত তারিখ। এই সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে। আরও আগে থেকে দৃশ্যধারণ শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। মুম্বাইয়ে সেট ফেলে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি, টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ির আদলে সেট সাজিয়ে দৃশ্য ধারণ করা হয়। এরপর করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, মুসলিম হল ও রেজিস্ট্রার ভবন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাকি অংশের দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। গত বছর ২০২২ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রটির প্রথম পোস্টার, ৩ মে দ্বিতীয় পোস্টার এবং ১৯ মে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির ট্রেলার প্রকাশ করা হয়। ঐতিহাসিক এই চরিত্রটির জন্য কম কাঠখড় পোহাতে হয়নি শুভকে। নিজেকে তৈরি করতে অনেক শ্রম দিয়েছেন তিনি। শুভ বলেন, 'আমার এই ছবিটি করতে গিয়ে প্রচুর পড়াশোনাও করতে হয়েছে। সত্যি বলতে কী, তিনি আমাদের মহান নেতা, এটুকু আমরা সবাই জানি। কিন্তু তার যে যাপিত জীবনের সংগ্রাম। আত্মত্যাগ এটা তাকে নিয়ে না পড়লে বুঝা যাবে না। এই চলচ্চিত্রে তার অনেকখানি বিষয় আছে... যা আপনাকে আবেগাপস্নুত করবে।'

এই চলচ্চিত্রের জন্য বাজেট ধরা হয় ৮৩ কোটি টাকা। এর ৬০ ভাগ বাংলাদেশের ও ৪০ ভাগ ভারত সরকারের। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সিনেমার জন্য মাত্র ১ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচিত হয়েছেন আরিফিন শুভ। আর এ সংক্রান্ত একটি চেক নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন তিনি। বললেন, 'বঙ্গবন্ধুতে অভিনয় করতে শর্ত ছিল একটাই, সম্মানি নেব এক টাকা।' শুভ লিখেন, 'অর্থ দিয়ে হয়তো পার্থিব কিছু সুখ পাওয়া যাবে, কিন্তু আত্মার তৃপ্তি মিলবে না'। শুভ জানালেন, 'তার অভিনয় জীবনের সেরা এক চরিত্র শেখ মুজিবুর রহমান। অনেক আবেগের নামও তার কাছে। তাই এখানে টাকাটা মুখ্য নয়।' অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়দির ইংরেজি চিত্রনাট্য থেকে আসাদুজ্জামান নূরের তত্ত্বাবধানে বাংলায় রূপায়িত এই ঐতিহাসিক সিনেমায় প্রায় দেড়শ চরিত্রের মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশি শিল্পী অভিনয় করেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্যাম বেনেগাল বলেন, 'সিনেমায় প্রত্যেক বাংলাদেশি অভিনেতাই অসাধারণ ছিলেন। কিন্তু, আমি যদি একজনকে বেছে নেই, তাহলে সেটা হবে আরিফিন শুভ। সে একজন অবিশ্বাস্য পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ অভিনেতা।' 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ভারতের শান্তনু মৈত্র। গান লিখেছেন জাহিদ আকবর। এদিকে নতুন কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এই অভিনেতা। তারই ধারাবাহিকতায় অরিন্দম শীলের 'উনিশে এপ্রিল' ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে কলকাতার বিভিন্ন লোকেশনে টানা ২০ দিন এই ওয়েব সিরিজের শুটিং শুরু করে দেশে ফিরেছেন শুভ। সবকিছু ঠিক থাকলে আট পর্বের সিরিজটি প্রচারিত হবে চলতি মাসের শেষের দিকে নাম ঠিক না হওয়া নতুন একটি ওটিটি পস্ন্যাটফরমে। ১৯৭৬ সালের ৪ মে কলকাতার অভিজাত পরিবারের গৃহবধূ সুরুপা গুহর রহস্যজনক মৃতু্য নিয়ে এই সিরিজ। সুরুপার স্বামী ইন্দ্রনাথ গুহর চরিত্রে অভিনয় করছেন আরিফিন শুভ। যিনি একজন শিক্ষাবিদ। এমন চরিত্রে তাকে আগে দেখা যায়নি। 'কন্ট্রাক্ট'-এর পর শুভর এটি দ্বিতীয় সিরিজ। শুভ বলেন, 'অন্য দেশে এসে কাজ করছি মনেই হচ্ছে না। এখানে সবাই আমাকে নিজেদের মতোই ভাবছেন।' সিরিজে আরো অভিনয় করছেন অঙ্কিতা চক্রবর্তী, অরুণিমা রায় প্রমুখ। এদিকে মুক্তির অপেক্ষায় আছে আরিফিন শুভর 'নূর'। হাতে রয়েছে 'ফুটবল '৭১' সিনেমাটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে