রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকাসক্তের আমল বিশুদ্ধ হবে না

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৬
ছবি-সংগৃহিত

নশ্বর পৃথিবীর প্রতি মোহ ও আকর্ষণ কমাতে এবং চিরস্থায়ী নিবাস আখেরাতের প্রতি নিবিষ্টতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদি ইবাদত সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মুবারকের অষ্টাদশ দিবস আজ। আর মাত্র দু’দিন পর শুরু হবে নাজাতের দশক।

মুমিন মুসলমানগণ আধ্যাত্মিক সাধনার চরম উৎকর্ষতা লাভে মগ্ন। বিগত জীবনের ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে যাতে বাকি জীবন ধর্মের পথে পরিচালনা করতে পারে এজন্য কায়মনে গাফুরুর রাহিমের অনুগ্রহ কামনা করছেন। হারাম-হালালের পার্থক্য এবং কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে আমল কবুল হবে না তা জানতেও উন্মুখ সবাই। কেননা অনেকেই না জেনে, না বুঝেই নানা ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হয়ে থাকেন। কেউ কেউ রোজা রেখে পাপকর্ম থেকে দূরে থাকলেও রমজান মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন করে আগের পথে ফিরে যান। বিশেষ করে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা এ পাল্লায় এগিয়ে থাকেন। যদিও তাদের অনেকেই নিয়মিত ইবাদতও করেন।

অথচ এ বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যে ব্যক্তি হালাল মনে করে মদ্যপান করে বা ব্যভিচার কিংবা যে কোনো পাপ সম্পাদন করে তবে সে কাফির বলে গণ্য। আর কুফরির সঙ্গে কোনো আমলই বিশুদ্ধ হবে না। আর কেউ যদি হারাম যেনেও প্রবৃত্তির তাড়নায় পাপ কাজ সম্পাদন করেন এবং এ আশা করেন যে আল্লাহ তাকে তা থেকে রক্ষা করবেন। তবে এই ব্যক্তিটি তার ইমানের কারণে মুমিন এবং পাপের কারণে ফাসেক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

মদ-জুয়াকে হারাম হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে ইমান্দারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি এবং লটারির তীর এসব গর্হিত বিষয়, শয়তানি কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। শয়তান তো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামাজ হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে, সুতরাং এখনও কি তোমরা ফিরে আসবে?’ (সূরাঃ মায়িদাহ/ ৯০-৯১)

নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, সমস্ত নেশাকারী বস্তু মদ আর প্রত্যেক নেশাকারী বস্তু হারাম।’ (মুসলিম হা/৩৭৩৩)। তিনি মদ, মদ্যপানকারী, মদ প্রস্তুতকারী, সে ব্যাপারে নির্দেশ প্রদানকারী, বহনকারী, যার নিকট তা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, এর বিক্রেতা, ক্রেতা এবং তার মূল্য ভক্ষণকারী সবাইকে অভিশম্পাত করেছেন।

অতএব মুসলিম সবার উপর ওয়াজিব হলো- যাবতীয় নেশা জাতীয় বস্তু থেকে নিজে দূরে থাকা ও অপরকে দূরে রাখা। আর যারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন তার কর্তব্য হলো দ্রুত এ পথ থেকে সরে এসে আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ আল্লাহর নিকট তোমরা তাওবাহ কর তবেই তোমরা সফলকাম হবে।’ (সূরা নূরঃ ৩১) তিনি আরও বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধভাবে তাওবা কর।’ (সূরা তাহরীমঃ ৮) পবিত্র কুরআনের অপর এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল!) তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? আপনি বলে দিন তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করা হয়েছে। (আল মায়েদাহ ৪) আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি কেউ মদ পান করে, আল্লাহ তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করেন না। আর যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে; তবে সে জাহান্নামি হবে। তবে যদি সে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এরপর যদি দ্বিতীয় বার মাদক গ্রহণ করে তাহলে তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল হবে না। তবে যদি দ্বিতীয় বার তওবা করে, আল্লাহ তওবা কবুল করবেন। এরূপ যদি চতুর্থ বার সে পুনরায় মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালার ওপর হক হয়ে যায় যে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন’।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মদ সব অশ্লীলতার মূল ও মারাত্মক কবিরা গুনাহ।

এদিকে ইসলামি দৃষ্টিকোণে মাদক ও মাদকাসক্তির নানাবিধ কুফল এবং ভয়াবহ পরিণাম তো রয়েছেই, পাশাপাশি সামাজিক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও মাদকের ছোবল ভয়ংকর। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পকি শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়, তবুও কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না? (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত-৯১)

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে