রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য আজিজুল

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
  ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৫
দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য আজিজুল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বয়সে সবার ছোট আজিজুল ইসলাম। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন।

আজিজুল ইসলামের বয়স ২৮ বছর। যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসন থেকে তিনি বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। আজিজুল ৯ হাজার ৬৭৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি শাহীন চাকলাদার।

সূত্রমতে, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে তুলনামূলক কম বয়সে এমপি নির্বাচিত হয়ে অনেকেই আলোচনায় এসেছেন। বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ২৯ বছর বয়সে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়ে সারা দেশে আলোচনায় এসেছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিলের ছেলে নিজামউদ্দিন জলিল জন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ওই সময় তার বয়স ছিল ২৭ বছর। আর সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে বেসরকারিভাবে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে আজিজুল হক সর্বকনিষ্ঠ। তিনি কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তরুণদের উদ্দেশে ইতিবাচক রাজনীতির ইঙ্গিত দেন এই তরুণ হবু আইনপ্রণেতা।

আজিজুল ইসলাম বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমার শতভাগ বিশ্বাস ছিল, তবে পারিপার্শ্বিক নানা কারণে ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ফল ঘোষণার পরে বুঝতে পারছি মানুষ আমাকে কত বড় সম্মান দিল। আর সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ ভোটের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এজন্য তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি নিজ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাদের ও গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, কেশবপুরবাসীকে ধন্যবাদ যে, আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। প্রকৃত ভোটাধিকার পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতিটা চমৎকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক প্রবীণরা পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন, অনেক তরুণ বড় ভাইয়েরা ফের নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে অবশ্যই আমার মতো তরুণরা উনাদের কাছ থেকে শিখবেন, তারপর আস্তে আস্তে আমরা আমাদের প্লাটফর্মে পৌঁছাব।

আজিজুল বলেন, তরুণদের প্রতি আমার একটা বিশেষ নজর থাকবে। আমরা যেন তাদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করতে পারি সেই চেষ্টা থাকবে। নিজ নির্বাচনী এলাকা কেশবপুরের বড় কাজ সাধারণ ভোটারদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা, তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করা, এলাকার উন্নয়ন করা, যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখা। এসব বিষয়ে আমি স্থানীয় রাজনীতিবীদ, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখব। আমি চাই, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ.এস.এইচ.কে সাদেক ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন, নতুন নতুন উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে কেশবপুর উপজেলাকে উন্নত এলাকায় পরিণত করা। কেশবপুর পৌরশহরকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা। প্রবীণদের পাশাপাশি আমরা যদি তরুণদের সামনে রেখে রাজনীতি করি তাহলে আমার বিশ্বাস তারা ভবিষ্যতের রাজনীতির প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হবে।

আজিজুল ইসলাম বলেন, শেখার অনেক কিছুই আছে। তাছাড়া নির্বাচনী পথসভা-জনসভায় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করতে পারলে নিজেকে সফল ভাবব।

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাকে হত্যার পর যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, তারপর দীর্ঘসময় দীর্ঘ আন্দোলন অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এখান থেকে আমরা যারা তরুণ তাদের অনেক দায়িত্ব আছে। আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।’ কেশবপুরের তরুণ এই আইকন বলেন, তরুণরা আর ২০০১ ও ২০১৪ সালের সেই সহিংস রাজনীতিতে ফিরে যেতে চায় না। আমরা সবাই অনেক সচেতন। নিজের দলের রাজনীতির আদর্শ নিয়ে সচেতন।

আমাদের সবার উচিত হবে সতর্কভাবে কাজ করা। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন সেই বিষয়টাকে ধরে রাখতে হবে। বিজয়ী হওয়ার পর জেলাজুড়ে তুমুল আলোচনা আছে তাকে নিয়ে- এ বিষয়ে আজিজুল বলেন, আসলে নতুনরা যখনই আসে সব সময় তাদের নিয়ে একটা ইতিবাচক আলোচনা থাকে। তরুণদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা। তাদের স্বপ্নটা আমাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চান। তারা দেখতে চান তাদের কথাগুলো আমরা আলোচনা করি কিনা? আমার পক্ষে যতটুক করা সম্ভব আমি চেষ্টা করব।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজনীতিতে তরুণদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত না। তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা অন্যায়। তরুণদের আলাদা ভাবলে চলবে না। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শুধু বয়স বিবেচনা করে যুদ্ধে যায়নি, দেশের স্বাধীনতার জন্য তরুণরাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ফলে তরুণদের কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব। যেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিশ্বাস করেন। তিনি অসংখ্য তরুণদের রাজনীতি, জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে