মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
  ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৭
ফাইল ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে পুলিশ হেফাজতে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। বিএনপির দাবি, পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনে তার মৃত্যু ঘটে। তবে পুলিশ বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। গ্রেফতার অবস্থায় সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আকরামের মৃত্যু হয়।

আকরাম হোসেন জেলার হরিপুর উপজেলার দেহট্ট হাট পুকুর গ্রামের আব্দুল তোয়াবের ছেলে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন আকরাম। এরপর পুলিশ তাকে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটেছে।’ তিনি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

জানা গেছে, রবিবার রাত ৯টার দিকে আকরামসহ পাঁচ জনকে হরিপুর থানা পুলিশ একটি মাদক মামলার আসামি দেখিয়ে বাড়ির পাশ থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের দাবি, এই মাদক মামলার ১নং আসামি নিহত আকরাম। যুবদল নেতা আকরামের লাশ এখন হরিপুর উপজেলা হাসপাতালে রয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) উত্তম পাঠক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাদক মামলার ১নং আসামি আকরামকে আদালতে পাঠানোর সময় অসুস্থ বোধ করেন। তাকে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকরাম মারা গেছেন। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে, জেলা বিএনপির দাবি, বিরোধী দলের ওপর চলমান সরকারি দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে মিথ্যা ও সাজানো মাদক মামলার গ্রেফতার দেখিয়ে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ।

পুলিশের বক্তব্য,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহনুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে তাকে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। মূলত মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয় তাকে। হাসপাতালে এখন পর্যন্ত তার মরদেহ রয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের স্বজনরা জানান, গতকাল রোববার (৭ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে আকরাম হোসেনকে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে তুলে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে রাত ১১টার দিকে পরিবারে পরিবারে পক্ষে থেকে দেখা করতে গেলে অল্প সময়ের জন্য দেখা হয়। কী কারণে মারা গেছে এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই জানি না। এখন পর্যন্ত আমরা লাশটাও দেখতে পাইনি। লাশ আনলে বুঝতে পারবো তিনি কী কারণে মারা গেছেন এবং তার শরীরে কোনো আঘাত রয়েছে কিনা। আকরাম অসুস্থ থাকলেও বাড়ি থেকে দেয়া ওষুধ তাকে খেতে দেয়া হয়নি বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন।

মাদক মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এর আগে কোনো মাদক মামলার আসামি ছিলেন না এবং তিনি মাদক সেবনও করতেন না। আজকে সকাল ৯টায় তাকে আদালতে চালান দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে চালান দেয়নি সেটা আমরা বলতে পারি না।

এ প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আকরাম হোসেনকে পুলিশ পৈশাচিক, নির্দয় ও নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যগতভাবেই হত্যায় উৎসাহী একটি রাজনৈতিক দল। এরা কেবল গণতন্ত্রকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বেছে বেছে গণতন্ত্রকামী মানুষকেও হত্যা করছে। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মহাসচিবের এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানানো হয়।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে