সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্লোর প্রাইসই আপাতত পুঁজির রক্ষাকবচ

এম সাইফুল
  ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪০

পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনে সূচক চার মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। গত একমাসে দু-একদিন ছাড়া অধিকাংশ কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস (দর কমার নিম্নসীমা) না থাকলে আরও বড় ধরনের দেখতে হতো। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের এ অবস্থায় ফ্লোর প্রাইসের কোনো বিকল্প নেই।

জানা গেছে, অধিকাংশ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে থাকার পরও সবশেষ গত সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৩০.৬৬ পয়েন্ট। এর ফলে সূচক নেমে আসে ছয় হাজার ২৫৭.১৪ পয়েন্টে। ডিএসইতে লেনদেন হয় ৪১৩ কোটি টাকা। আর টট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয় মাত্র ১২ কোটি টাকা। সেখানেও এদিন প্রধান সূচক ৬৫.৪৫ পয়েন্টের মতো পতন হয়।

এদিন ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৯০টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে মাত্র ১৯টির বা ৪.৮৭ শতাংশের। এ ছাড়া দর কমেছে ১৪৮টির বা ৩৭.৯৫ শতাংশের এবং শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৩টির বা ৫৭.১৮ শতাংশের।

সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে হ্যাকাররা একাধিক ব্যাংক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে আরও গুজব ছড়ায় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়।

আতঙ্কে লেনদেনের শুরু থেকেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে শেয়ারবাজারে লেনদেনে শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে মূল্যসূচক।

লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারেও বিক্রির চাপও বাড়তে থাকতে। ফলে লেনদেনের সময় যত বাড়ে সূচকের পতন ততই বাড়তে থাকে। এতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। সেই সঙ্গে বড় পতন হয় সবকটি মূল্যসূচকের। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস থাকায় অনেক কোম্পানির শেয়ার দর আগেই ফ্লোরে ঠেকেছে। ফলে ওইসব কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল। তাই ফ্লোর প্রাইসই এখন বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষার একমাত্র উপায়।

বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আছে। এসব শেয়ারের দর আর কমার সুযোগ নেই। ফলে ফ্লোরে থাকা শেয়ার নিয়ে অন্তত বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন।

২০২০ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে প্রথম ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়। করোনার আঘাতে সারাবিশ্বের পুঁজিবাজার যখন বিপর্যস্ত, দেশের বাজারেও প্রতিদিন ক্রেতাশূন্য অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময়ের সংকট নিরসনে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও, ধীরে ধীরে বাজারে আস্থা এবং গতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের মাঝামাঝি আবারও দরপতন শুরু হয়। ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার পর ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ১৬৯ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছিল। এসব কোম্পানির শেয়ারের দর আগের দিনের থেকে ১ শতাংশ কমার সুযোগ রেখে দর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে পরের দিন থেকে বেশকিছু শেয়ার টানা ১ শতাংশ করে কমতে শুরু করেছে। ফলে শেয়ার লেনদেনের সংখ্যা বাড়লেও সূচক বা লেনদেন সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি।

এতেও বাজারের পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় এবং ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা কোম্পানিগুলো শেয়ার দাম প্রতিদিনই কমতে থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছিল। বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতা উপলব্ধি করে আবারও এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে আবার ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

যদিও ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছে পুঁজিবাজারের একটি অংশ। তারা মূলত ব্রোকারেজ হাউসের মালিক। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিজেদের হাউসে লেনদেন বাড়ানোর জন্য ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কথা বলছে। ফ্লোর প্রাইস তুললে হয়তো লেনদেন বাড়বে। কিন্তু দরপতন হলে দিনশেষে বিনিয়োগকারীদেরই ক্ষতি। ব্রোকাররা শেয়ার কিনতে ও বিক্রি করতে উভয় সময়েই কমিশন নিয়ে থাকে। শেয়ারের দর কমলে তাদের ক্ষতি নেই।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা ও বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ফ্লোর প্রাইস থাকা উচিত। সেটা কতদিন পর্যন্ত থাকবে তা সময়ই বলে দেবে। যদিও অনেকে বলছে বিশ্বের কোথাও ফ্লোর প্রাইস নাই। কিন্তু আমাদের দেশের বাজারে কোনো সূত্রই কাজ করে না। এখানে গুজব নির্ভর লেনদেন হয়। তাই আপাতত ফ্লোর প্রাইসের কোনো বিকল্প দেখছি না।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে