শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিজ্ঞানী হত্যাকান্ডের জের!

পরমাণু সক্ষমতা বাড়াতে আইন পাস ইরানে

হ জাতিসংঘের পরিদর্শন বন্ধ ও ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা হ সংযুক্ত আরব আমিরাতে হামলার হুমকি তেহরানের
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
ফাখরেজাদেহ হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল তেহরান

পরমাণু সক্ষমতা বাড়াতে নতুন একটি আইন পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে জাতিসংঘের পরিদর্শন বন্ধ করতে এবং ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে আইনটি পাস করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার জেরেই এমন পদক্ষেপ নিল তেহরান। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, পার্স টুডে

নতুন আইন অনুযায়ী, আগামী দুই মাসে ইরানের ওপর থেকে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে সরকার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী সম্মত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম উৎপাদন করবে।

গত শুক্রবার রাজধানী তেহরানের বাইরে রাস্তার পাশে রহস্যমূলক এক হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির স্থপতি মোহসেন ফাখরিজাদেহকে। ইরান বিশ্বাস করে যে, ইসরাইল এবং একটি নির্বাসিত বিরোধী গোষ্ঠী রিমোট-কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালিত অস্ত্র ব্যবহার করে ফাখরিজাদেহকে গুলি করে হত্যা করেছে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ফাখরিজাদেহর। তবে দেশটির সরকার বরাবরই বলে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মযজ্ঞ পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। পরমাণু অস্ত্র যাতে উৎপাদন করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বরাবরই নানা ধরনের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়ে আসছে দেশটি।

ইরানের কাউন্সিলের অনুমোদিত আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশগুলোকে দুই মাস সময় দেওয়া হবে দেশটির তেল এবং অর্থনৈতিক খাতের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে এলে ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনঃআরোপ করা হয়েছিল।

এই সময়ের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হলে সরকার ইউরেনিয়াম উৎপাদন ২০ শতাংশ বাড়াবে এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ বসাবে যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে কাজ করবে। দেশটির নাতানজ এবং ফর্দো পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বুধবার ইরানের সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, 'আজ এক চিঠিতে নতুন আইন কার্যকর করতে প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার।' আইনটি অনুমোদনের আগে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেছেন, তার সরকার এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়। একে 'কূটনীতির জন্য ক্ষতিকর' বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-২০১৮ সালের মে মাসে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন এবং তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য বলেছেন যে, তিনি চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনবেন এবং তেহরান যদি 'পরমাণু চুক্তির শর্ত কঠোরভাবে মেনে চলে' তাহলে নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করা হবে। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করতে যাচ্ছেন বাইডেন।

চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু উৎপাদনের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে সীমিত রাখার শর্ত ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ভঙ্গ করেছে ইরান। এরপর থেকে এই হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে। নিম্ন মাত্রায় পরমাণু উৎপাদন যাতে মূলত ৩-৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম-২৩৫ থাকে, তা বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অস্ত্র তৈরি করতে হলে ৯০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম থাকতে হবে।

পরমাণু বোমা তৈরির কর্মকান্ডকে ঢাকতেই ইরান পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করত- এমন সন্দেহ থেকে ২০১০ সালে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০১৫ সালের চুক্তিটি ছিল এ কর্মসূচিকে সীমিত করা এবং তা নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে হামলার হুমকি ইরানের

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে হামলার হুমকি দিয়েছে ইরান। আমিরাতের 'ডি ফ্যাক্টো' শাসক মোহাম্মদ বিন জায়েদের (এমবিজেড) সঙ্গে 'সরাসরি' যোগাযোগ করেই এ ব্যাপারে নিজ দেশের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে তেহরান।

আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করলে তার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আমিরাতে হামলা চালাবে তেহরান। দেশের পারমাণবিক কর্মসূচির স্থপতি মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যাকান্ডের পর থেকে এমনিতেই উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ইরান। এর মধ্যেই ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে বিমান হামলা চালিয়ে দেশটির একজন কমান্ডারকে হত্যা করা হয়।

ইসরাইলি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফাখরিজাদেহ হত্যাকান্ডের পর এবার মার্কিন হামলার আশঙ্কা করছে ইরান। দেশটির শঙ্কা, মেয়াদ শেষের আগেই ইরানে হামলা চালাতে পারেন ট্রাম্প।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে