শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
নির্বাচনের বিশ্লেষণ

হেরেও যেন জিতে গেছেন ট্রাম্প বেড়েছে জনপ্রিয়তা

গত চার বছরের শাসনামলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প আর এতেই কাজ হয়েছে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের প্রার্থী হতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার রাতে হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, 'চারটি বছর খুব চমৎকার ছিল। আরও চার বছরের জন্য চেষ্টা করছি আমরা। না হলে চার বছরের মধ্যে আবার আমাদের দেখা হবে।' এদিকে, গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়েও যেন জিতে গেছেন এই রিপাবলিকান নেতা। সংবাদসূত্র : ফক্স নিউজ

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট জো বাইডেন জয়ী হলেও ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করেননি বরং নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ফের দাঁড়ানোর সম্ভাবনার বিষয়ে এর আগ পর্যন্ত চুপ ছিলেন ট্রাম্প।

গত ২৬ নভেম্বর 'থ্যাংসগিভিং ডে'তে তিনি বলেছিলেন, 'আমি এখনই ২০২৪ নিয়ে কথা বলতে চাই না।' কিন্তু চার বছর পর তিনি আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, রুদ্ধদ্বার কক্ষে ট্রাম্প তার উপদেষ্টাদের এমনটি বলেছিলেন বলে সোমবার ফক্স নিউজের প্রধান হোয়াইট হাউস সংবাদাতা জন রবার্টস তার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিলেন।

২০ জানুয়ারি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগেই বা ওই অনুষ্ঠান চলাকালে ট্রাম্প ফের চার বছর পরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল।

অভ্যন্তরীণ ওই বিতর্ক সম্পর্কে অবহিত একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০ জানুয়ারি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হয়ে বরং ওই সময়ই ২০২৪ সালের নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেবেন বলে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ট্রাম্প। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের চেয়ে এ বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি।

২০১৬ সালের তুলনায় ২০২০ সালের নির্বাচনে সব মিলিয়ে এক কোটি ভোট বেশি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আলোচিত-সমালোচিত এই প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা না কমে বরং পপুলার ভোট বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা অবাক হয়েছেন স্বয়ং মার্কিনিরাও। জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, গত চার বছরে তার শাসনামলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এতেই কাজ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রক্ষণশীল নীতি দিয়ে শ্বেতাঙ্গদের পাশাপাশি অন্য বর্ণের গোত্রের লোকদেরও আকৃষ্ট করেছেন ট্রাম্প। অনেকে এমনও মনে করেন, ট্রাম্পের চেয়ে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট খ্রিষ্টান ক্যাথলিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ গঠন করতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারণায় ডেমোক্রেটদের সঙ্গে বামপন্থিদের তুলনা করে নানা মন্তব্য করেছেন তিনি। ফলে কিউবা, বলিভিয়া কিংবা ভেনেজুয়েলা থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন, তারা ট্রাম্পকেই ভোট দিয়েছেন।

'এডিসন রিসার্চ-এনইপি'র জরিপে দেখা গেছে, একচেটিয়াভাবে শ্বেতাঙ্গদের ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, একচেটিয়াভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট পেয়েছেন নবনির্বাচিত ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর কারণ হিসেবে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ট্রাম্পও পুলিশের পক্ষেই কথা বলেন।

এতে ভোটের ওপর প্রভাব পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে উল্টো। তার বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও গতবারের নির্বাচনের তুলনায় এবার তাদের ভোট বেশি পেয়েছেন রিপাবলিকান এই নেতা।

কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ছয় শতাংশ বেশি। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ভোট পেয়েছেন পাঁচ শতাংশ। অথচ গত নির্বাচনে এই গোষ্ঠীর একচেটিয়া ভোট পেয়েছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। ২০১৬ সালের তুলনায় হিস্পানিক বা লাতিনো পুরুষদের চার শতাংশ এবং নারীদের পাঁচ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন ট্রাম্প। ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এশীয় এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প, যা গতবারের চেয়ে সাত শতাংশ বেশি।

কৃষ্ণাঙ্গদের ছাড়িয়ে চলতি বছর লাতিনোরা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সংখ্যালঘু ভোটার গোষ্ঠী হিসেবে উঠে আসে। অভিবাসন ইসু্যতে সব সময়ই রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করে আসা ট্রাম্পের পক্ষে তাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে।

অন্য একটি পরিসংখ্যান বলছে, ৬৭ শতাংশ লাতিনো অবৈধ অভিবাসী নিয়ে চিন্তিত। এ সংখ্যা লাতিনো নয়, এমন শ্বেতাঙ্গদের ৫৯ শতাংশ তুলনায় বেশি। ২০১৮ সালে পরিচালিত 'হাওয়ার্ড-হ্যারিস' জরিপে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সংখ্যা কমানো উচিত। ৫৪ শতাংশ কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে