বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
'মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব' প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য

পররাষ্ট্রনীতির 'ভাঙাঘর' ঢেলে সাজানোর চ্যালেঞ্জে বাইডেন

ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির নেপথ্য কারিগর মাইক পম্পেও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা বাইডেনকে নিশ্চিতভাবে ভোগাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা
যাযাদি ডেস্ক
  ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
পররাষ্ট্রনীতির 'ভাঙাঘর' ঢেলে সাজানোর চ্যালেঞ্জে বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বুধবার শপথগ্রহণ করেছেন জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বের প্রথম দিন থেকেই অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। এর মধ্যে অন্যতম বর্হিবিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির নেপথ্য কারিগর মাইক পম্পেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা বাইডেনকে নিশ্চিতভাবে ভোগাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করেন, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির কারণে গত চার বছরে বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও প্রভাব ক্ষুণ্ন করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

গত কয়েক মাসে বাইডেন বারবার বলেছেন, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের 'মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব' প্রতিষ্ঠাই হবে তার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য। এমন লোকজনকে তিনি তার পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন যারা 'একলা-চলো' নীতির বদলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী। কিন্তু জো বাইডেনের জন্য সবকিছু হয়তো খুব একটা সহজ হবে না। কারণ ক্ষমতার শেষ দিকে চীন, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে মাইক পম্পেও এমন কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যার পরিণতি জো বাইডেনকে ভোগ করতে হবে।

গত ১০ দিনে পম্পেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। চীনের স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে তাইওয়ানের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ রাখার যে নীতি যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে চীন।

ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন পম্পেও। যা নিয়ে জাতিসংঘ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তে ইয়েমেনে মানবিক দুর্যোগ ভয়াবহ রূপ নেবে।

যে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে জো বাইডেন বিশেষভাবে ইচ্ছুক সেই কিউবাকে হঠাৎ করে সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্রের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। ইরানে এখন আল কায়দা তাদের প্রধান ঘাঁটি তৈরি করেছে এই অভিযোগ তুলে পম্পেও বেশ কিছু শীর্ষ ইরানি নেতা এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলী খামেনির নিয়ন্ত্রিত কিছু প্রতিষ্ঠানকেও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসার কোনো ইচ্ছা জো বাইডেনের না থাকলেও তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্কে সুর বদলাতে আগ্রহী। ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিতে ফেরা তার অন্যতম লক্ষ্য। ইয়েমেনের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনে সৌদি আরবের ওপর চাপ তৈরির জন্য ডেমোক্রেটদের বামপন্থি অংশের ভেতর থেকে বড় ধরনের চাপ রয়েছে তার ওপর। কিউবার সঙ্গে বৈরিতা দূর করার ব্যক্তিগত ইচ্ছা রয়েছে জো বাইডেনের।

কিন্তু বেছে বেছে মাইক পম্পেও শেষ বেলায় ঠিক এসব জায়গাতেই হাত দিয়েছেন। এছাড়া শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত হননি পম্পেও। গত কয়েকদিন ধরে তিনি এমন সব বিবৃতি দিচ্ছেন যার প্রধান বক্তব্য হচ্ছে ডেমোক্রেটরা আগেও তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে মার্কিন স্বার্থ দেখেনি এবারও দেখবে না।

যেমন, ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পুরনো একটি ভিডিও তিনি টুইটারে পোস্ট করেছেন যেখানে কেরি বলছেন যে, ফিলিস্তিন নিয়ে ছাড় না দিলে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না। ওই ভিডিও পোস্টের সঙ্গে পম্পেও লিখেছেন, 'এই মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞকে চীনে রাখুন! তিনি যেটা হবে না বলেছিলেন আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।' গত সপ্তাহে পম্পেও তার আরেক টুইটে বলেন, জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি তহবিলের যোগানদাতা হিসেবে আমি মার্কিন করদাতা এবং মার্কিন স্বার্থ দেখেছি। টুইটের সঙ্গে তিনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে বারাক ওবামা, তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান রাইস এবং জাতিসংঘে তৎকালীন মার্কিন সামান্থা পাওয়ার রয়েছেন। জো বাইডেনের সরকারেও সুজান রাইস এবং সামান্থা পাওয়ার জায়গা পেয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ট্রাম্প সরকারের শেষ মুহূর্তের এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে কি করতে পারেন জো বাইডেন? তার সামনে বিকল্প কি? বাইডেনের উপদেষ্টা শিবির থেকে বলা হচ্ছে, পম্পেওর এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সহজেই এগুলো উল্টে দেওয়া সম্ভব।

বারাক ওবামা সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা বিভাগে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন শীর্ষ আইনজীবী অ্যাডাম স্মিথ। তাকে উদ্ধৃত করে লন্ডনের টাইমস পত্রিকা লিখেছে, আইনগতভাবে পম্পেওর এসব নির্দেশনা সবই উল্টে দেওয়া সম্ভব, কারণ এগুলো তার মতে নির্বাহী আদেশ যা প্রেসিডেন্ট পাল্টে দিতে পারেন। তবে তিনি বলেন, বাতিল করার আগে এসব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে হবে। শুধু যে কালক্ষেপণ হবে তাই নয়, এগুলো বদলাতে গেলে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হতে পারেন জো বাইডেন।

নভেম্বরের নির্বাচনে জো বাইডেন ফ্লোরিডায় কিউবান-অমেরিকানদের সমর্থন তেমন পাননি। ফলে কিউবার ওপর বসানো 'সন্ত্রাসে মদতদাতার' তকমা ওঠাতে তাকে দশবার ভাবতে হবে। তাইওয়ানের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত বদলানোর ক্ষেত্রেও একইরকম দ্বিধায় পড়তে পারেন তিনি। কারণ চীনকে শায়েস্তা করার ইসু্যতে কংগ্রেসে দুই দলের মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে। সাহস করে মাইক পম্পেওর শেষ মুহূর্তের এসব সিদ্ধান্তের কিছুটা হলেও হয়তো বাইডেন উল্টে দিতে পারবেন বা দেবেন। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, আস্থার সংকটই হবে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় সমস্যা। ইরান এবং অন্য দেশগুলো বাইডেনের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করতে এখন দু'বার ভাববে, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখিয়েছেন কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিও রাতারাতি উল্টে ফেলা যায়। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে