শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
জটিল প্রক্রিয়ার আবর্তে

মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে চাপে বাইডেন

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
ইরাকে মার্কিন সেনা -ফাইল ছবি

গত ১৫ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাড়াহুড়া করে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাদের নীতি বাস্তবায়ন করতে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি গত সপ্তাহে তারা ইরানের মদদপুষ্ট ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের 'সন্ত্রাসবাদী সংগঠন' বলে ঘোষণা করেছে। এছাড়া গত ডিসেম্বরে একজন ইরাকি এবং একাধিক ইরানি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এদিকে, পশ্চিম সাহারার বিতর্কিত এলাকায় মরক্কোর সার্বভৌমত্বও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আর এসবই করা হয়েছে ইরানকে কোণঠাসা এবং ইসরাইলকে সাহায্য করার জন্য। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ নিয়ে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এমনটাই মনে করছেন।

ট্রাম্পের নীতির প্রতিক্রিয়া : ব্রাসেলসের থিংক ট্যাংক ক্রাইসিস গ্রম্নপের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন তাড়াহুড়া করে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। তাদের যুক্তি, হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে ইয়েমেনে যে দাতা সংস্থাগুলো কাজ করছে, তাদের সংকটে পড়তে হবে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তার মতে, এর ফলে সেখানে বড়সড় দুর্ভিক্ষ হতে পারে। গত ৪০ বছরের মধ্যে এই দুর্ভিক্ষ হবে সবচেয়ে তীব্র।

ইরাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে. গত সপ্তাহে ফতেহ আল-ফায়াদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তা মানা যায় না। এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে তারা অবাক হয়ে গেছেন। আল-ফায়াদ হলেন স্থানীয় একটি আধাসামরিক বাহিনী 'পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্স'র (এফএমএফ) প্রধান। ইরান তাদের সমর্থন করে।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক সাজাদ জিয়াদ গত জুলাইতে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, 'মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরাকের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হবে। এর ফলে মার্কিন বাহিনীর ইরাক ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রবল চাপ তৈরি হবে।'

মরক্কো নিয়ে সিদ্ধান্তের সমালোচনা : পশ্চিম সাহারার ওপর মরক্কোর দাবি দীর্ঘদিনের। এটা হলো সবচেয়ে বেশিদিন ধরে চলা আঞ্চলিক বিবাদ। মরক্কোর দাবি মেনে নেওয়ার পর ট্রাম্প প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন। মনে করা হচ্ছে, মরক্কো ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করার ফলে তাদের এই উপহার দিয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের মতে, 'এটা হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং খুব নগ্নভাবে বললে দেওয়া-নেওয়ার নীতি।' পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত একটি পত্রিকায় বোল্টনের নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক জুলিয়ান বার্নেস-ডেসি বলেন, 'পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নীতি মিশিয়ে দেওয়া হলো ট্রাম্পের খেলা। যখন মসনদে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তখন ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা দেখানোর চেষ্টা করেছিল। ট্রাম্প বিদায়ের পর কিছু উত্তরাধিকার রেখে যেতে চেয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে একটি নির্দিষ্ট দিকে এমনভাবে নিয়ে যেতে চান, যেন বাইডেন এসেও তার বদল করতে না পারেন। বাইডেন প্রশাসন কি এসব সিদ্ধান্ত বদলাতে পারবেন? যদি তারা বদলাতে চান, তাহলে কতদিনে তা হবে এবং এই প্রক্রিয়া কতটা জটিল হবে?'

এদিকে, বার্লিনের হের্টি স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক মেরিনা হেনকের মতে, 'তত্ত্বগতভাবে কিছু পরিবর্তন করা খুবই সহজ। একদিনেই অনেক সিদ্ধান্ত বদল করা যেতে পারে। যেমন, মরক্কো নিয়ে ট্রাম্প একটি ঘোষণা করেছেন মাত্র। মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদন না করলে, এটা আইনি রূপ পেতে পারে না। নতুন প্রেসিডেন্ট আরেকটি ঘোষণার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারেন।'

প্রশাসনিক নির্দেশ ও প্রেসিডেন্টের স্মারকলিপিও একইভাবে কাজ করে। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এখন চাইলেই তা বদলে দিতে পারেন। এর চেয়ে বরং কোনো বিদেশি সংস্থাকে একবার সন্ত্রাসবাদী চিহ্নিত করার পর তার থেকে সরে আসার পদ্ধতি কিছুটা জটিল। সেক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে জানাবেন, তিনি সিদ্ধান্ত বদলাতে চান। তারপর কংগ্রেসের হাতে সাতদিন সময় থাকবে আপত্তি জানানোর। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস গত রোববারের মধ্যে আপত্তি জানাতে পারত। তবে তারা জানায়নি।'

হেনকে আরও বলেন, কংগ্রেস অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এখানেই বিষয়টি কিছুুটা জটিল হয়ে যাচ্ছে। তার মতে, 'পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় ভোট আনতে পারে, তা নিয়ে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একটি খসড়া তৈরি করেছিলেন। যেমন, ইরান, চীন ও কিউবা। বাইডেন যদি এসব নীতি নিয়ে তাড়াহুড়া করেন, তাহলে রিপাবলিকানরা বলবে, বাইডেন আসলে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছেন। তবে তারা যদি কিছুদিন অপেক্ষা করেন, তাহলে নতুন প্রেসিডেন্ট কোনো বিতর্ক ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত বদল করতে পারবেন।'

আরব-ইসরাইল সম্পর্ক : পররাষ্ট্রনীতির কয়েকটি বিষয় প্রেসিডেন্ট বাইডেনও সম্ভবত বদলাতে চাইবেন না। বার্নেস-ডেসি বলেন, 'আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকে দুই পক্ষই সমর্থন করে। মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও সম্ভবত বাইডেন বদলাবেন না।'

যেখানে মানবিক কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে, সেখানে বাইডেন কিছু পরিবর্তন করতে পারেন। বার্নেস-ডেসি বলেন, 'ইয়েমেনে বাইডেন সরাসরি সিদ্ধান্ত বাতিল না করলেও কিছু পরিবর্তন করতে পারেন। যেমন মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিতে পারেন।' তবে ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যারি পেরিলগার মনে করেন, 'এখানে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি বড় ভূমিকা নেবে।'

ইরান সমস্যা : 'লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স'র ইয়ান বস্ন্যাক মনে করেন, 'আসল বিষয় হলো ইরান চুক্তি। এ নিয়ে প্রবল চাপ আছে। ট্রাম্প অবশ্য ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো যাতে ইরানের বিরোধিতা করে, তার জন্য চেষ্টা করে গেছেন।'

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা সময় লাগবে। কারণ, এর সঙ্গে ইরান এবং সে দেশের মানুষ ও সংস্থার বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আছে। এসব নিয়ে কাজ করতে সময় লাগবে। সংবাদসূত্র : ডিডবিস্নউ নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে