শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ইউক্রেন যুদ্ধ

দনবাসে রুশ বাহিনীর জয় নিয়ে সংশয়

কনরাডসহ অন্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন অভিযানে অংশ নেওয়া রুশ বাহিনী বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। তারা অনেক সেনা ও সরঞ্জাম হারিয়েছে। ইউক্রেন এখন পশ্চিমা ভারী অস্ত্রশস্ত্র হাতে পাচ্ছে। ফলে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বড় অগ্রগতি অর্জনের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে
ম যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ মে ২০২২, ০০:০০

রুশ বাহিনীর হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত মারিউপোল এখন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ বাহিনী। তবে তারা পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল দখলের লড়াইয়ে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে। অঞ্চলটিতে রুশ বাহিনীর পরাজয়ের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।

দনবাস দখলের লড়াইয়ে রুশ বাহিনীর পরাজয়ের আশঙ্কা কেন বাড়ছে, তার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটি বলছে, অঞ্চলটি পুরোপুরি জয়ের লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জনে লড়াইয়ের জন্য পর্যাপ্ত জনবল রুশ বাহিনীর নেই। কারণ, তারা এরই মধ্যে ইউক্রেনে বহু সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম হারিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযান নাটকীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে নতুন করে সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনকে নিতে হবে। কেননা, পশ্চিমা দেশগুলোর পাঠানো আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে ইউক্রেনের যুদ্ধ সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

একই সঙ্গে এ কথাও বলা হচ্ছে, নতুন করে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক সেনা না পাঠালেও রুশ বাহিনীর দ্রম্নত পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। চার সপ্তাহ ধরে দনবাসে লড়াই চলছে। এই লড়াই যে আরও দীর্ঘ হবে, রণক্ষেত্রের গতিপ্রকৃতি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

পোল্যান্ডভিত্তিক স্বাধীন প্রতিরক্ষা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রোচান কনসালটিংয়ের পরিচালক কনরাড মুজায়কা ইউক্রেনে লড়াইরত রুশ বাহিনীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, 'আমি মনে করি, বর্তমানে যে সেনাশক্তি আছে, তাতে হয় তারা পরাজিত হবে, নয়তো সৈন্য সংযোজন করতে হবে। আমি মনে করি না, এখানে মধ্যবর্তী কোনো অবস্থা আছে।'

কনরাডসহ অন্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন অভিযানে অংশ নেওয়া রুশ বাহিনী বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। তারা অনেক সেনা ও সরঞ্জাম হারিয়েছে। ইউক্রেন এখন পশ্চিমা ভারী অস্ত্রশস্ত্র হাতে পাচ্ছে। ফলে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বড় অগ্রগতি অর্জনের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।

লন্ডনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান আরইউএসআইয়ের নিল মেলভিন বলেন, 'সময় এখন নিশ্চিতভাবেই রাশিয়ার প্রতিকূলে। তাদের যুদ্ধ সরঞ্জাম ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তাদের আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র শেষ হয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে, প্রায় দিনই ইউক্রেনীয় বাহিনীর যুদ্ধ করার সক্ষমতা বেড়ে চলছে।'

অবশ্য ক্রেমলিন বলছে ভিন্ন কথা। রুশ বার্তা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেন, 'সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলছে। সব লক্ষ্য যে অর্জিত হবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।'

কিন্তু চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার প্রধান টিভি চ্যানেলে এক অস্বাভাবিক সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন একজন খ্যাতিমান সামরিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন যেটিকে বিশেষ সামরিক অভিযান বলছেন, সে সম্পর্কে 'তথ্যমূলক ঘুমের ওষুধ' গেলা রাশিয়ানদের বন্ধ করা উচিত।

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বর্তমান অবস্থা নাজুক বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মিখাইল খোদারেনক। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর কাছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ছে। ফলে খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে রুশ বাহিনীর জন্য পরিস্থিতি খারাপ হবে।

গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। যুদ্ধের এই প্রথম ধাপে তারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হয়। ২৯ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। রাশিয়ার এ ধাপের যুদ্ধের লক্ষ্য ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পুরো দনবাস দখল। দনবাসের কিছু এলাকা ২০১৪ সাল থেকে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মারিউপোল শহরে দীর্ঘ সময় ধরে টানা বোমা হামলা চালায় রুশ বাহিনী। ব্যাপক হামলার মুখেও ইউক্রেনীয় বাহিনী যথাসম্ভব প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কয়েক সপ্তাহের মরিয়া প্রতিরোধের পর দিন দুয়েক আগে মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় থাকা ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে