শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকের ছোবল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে, যুবকরা পথহারা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। সেখানে নতুন করে দৈনিক ১০-১৫ জন মাদকাসক্ত হয়ে নিরাময় কেন্দ্রে আসছে, যাদের বেশিরভাগই হোরোইনে আসক্ত। অল ইনডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এআইআইএমএস) 'ন্যাশনাল ড্রাগ ডিপেনডেন্স ট্রিটমেন্ট সেন্টার' দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

৫৫ বছর বয়সি মুশতাক আহমেদ মুষড়ে পড়েছেন, কারণ অতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃতু্য হয়েছে তার ১৭ বছরের ছেলের। ২৬ জুন তিনি সেই দুর্বিষহ ঘটনা স্মরণ করে বলেন, 'আমরা তাকে একটি ওয়াশরুমের ভেতরে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই এবং যখন আমরা দরজা খুলি, তখন সে টয়লেটের কাছে প্রাণহীন পড়ে ছিল।' মুশতাক আহমেদ এবং তার পরিবার কখনো বিশ্বাস করতে পারেনি যে, তার ছেলে মাদক সেবন করতে পারে। কারণ সে শিশুর মতো আচরণ করত এবং মাদক গ্রহণের কোনো চিহ্ন তারা দেখতে পাননি।

কাশ্মীরের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের প্রধান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়াসির রাথার বলেন, 'আমরা একটি অকল্পনীয় বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মাদকাসক্তের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে হেরোইন ব্যবহারকারী এবং তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ ইনট্রাভেনাস মোডের মাধ্যমে অবৈধ ওষুধ ব্যবহার করছেন। এটি একটি মহামারি।'

২৩ বছর বয়সি সিরাজ আহমেদ ও তার বন্ধু সারতাজ জান (২২) একসঙ্গে হেরোইন সেবন করতেন। চলতি বছরের এপ্রিলে মাদকের অতিরিক্ত মাত্রায় মৃতু্য হয় সারতাজের। তার মৃতদেহ রাস্তার ধারে পাওয়া যায়। সামাজিক প্রত্যাখ্যান এড়াতে জানের পরিবার সবাইকে বলেছিল, এটি দুর্ঘটনাজনিত মৃতু্য।

তবে সিরাজ আহমেদ কারণটি জানতেন। তিনি বন্ধুর মৃতু্যতে ভেঙে পড়েন। তারপর থেকে তিনি এই পথ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। নিজেকে 'ডিটক্সিফাই' (বিষমুক্ত করা) করছেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, এই ব্যথা সহ্য করা তার পক্ষে কঠিন। তিনি বলেন, 'আমি এখন মাদকমুক্ত জীবনযাপন করতে চাই।'

'ন্যাশনাল ড্রাগ ডিপেনডেন্স ট্রিটমেন্ট সেন্টার'র জরিপে বলা হয়েছে, ভারতে মাদকাসক্তের দিক দিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পঞ্চম অবস্থানে উঠে এসেছে। সেখানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ছয় লাখের বেশি।

ভারতের মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রতিদিন গড়ে ৫০টির বেশি মাদকাসক্তির ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ফলো-আপ চিকিৎসার জন্য আসা পুরনো ব্যক্তি। তিনি বলেন, নারী মাদকাসক্তদের সংখ্যাও বাড়ছে।

কাশ্মীরে মাদকের ব্যবহার ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। সেখানকার পুলিশ কোটি কোটি টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে তা ধ্বংস করেছে। তাদের দাবি, পাকিস্তান এসব যুবককে প্রথমে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয় এবং পরে মাদক ধরিয়ে দেয়। তারা পাঞ্জাব মডেলের পুনরাবৃত্তি করছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) মাদক-সন্ত্রাস মামলায় দায়ের করা একটি চার্জশিটে দাবি করেছিল, লস্কর-ই-তৈয়ে্যবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের কর্মীরা জম্মু ও কাশ্মীরে মাদক ব্যবসার পেছনে রয়েছে। ২০১৭ সালে উত্তর কাশ্মীরের উরি থেকে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের ৭০ কেজি হেরোইন জব্দ করা হয়েছিল।

বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) পাঞ্জাবের অমৃতসরের রাজাতালে সীমান্ত বেড়ার কাছে একজন পাকিস্তানি চোরাচালানকারীকে গ্রেপ্তার করে, যার কাছে ৬.৩ কেজি হেরোইন (৩০ কোটি টাকা) উদ্ধার করা হয়।

শ্রীনগরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গ্রেটার কাশ্মীরের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি পশ্চিমা গণমাধ্যম জানায়- ভারতে প্রবেশ করা মাদক বা মাদকদ্রব্যের ৮০ শতাংশের বেশি প্রবেশ করে পাকিস্তান থেকে। এছাড়া বিশ্বের ৮০ শতাংশ আফিম উৎপাদন এবং অবৈধ মাদক ব্যবসার প্রধান উৎস হিসেবে আফগানিস্তান-ইরান ও পাকিস্তানকে উলেস্নখ করা হয়।

আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আফগানিস্তান-পাকিস্তান থেকে আরও বেশি মাদক ভারতে প্রবেশ করতে পারে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তালেবান মাদক ব্যবসা থেকে ৬০ শতাংশ রাজস্ব আয় করত। সংবাদসূত্র : আনাদুলু নিউজ এজেন্সি, গ্রেটার কাশ্মীর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে