শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন

রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ায় ফের দফায় দফায় বিস্ফোরণ

ইউক্রেন স্পষ্ট করে কিছু না বললেও বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত
ম যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

আবারও দফায় দফায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া। মঙ্গলবার সেখানকার এক সামরিক ঘাঁটিতে কয়েক দফা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর ক্রিমিয়ার দিঝানকোই এলাকায় বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে। বিদু্যতের একটি সাবস্টেশনেও অগ্নিকান্ডের খবর পাওয়া গেছে। কী কারণে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এর আগে গত সপ্তাহে ক্রিমিয়া উপকূলে ইউক্রেনের হামলায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি

ইউক্রেন যুদ্ধে রসদ সরবরাহের লাইন হিসেবে ক্রিমিয়াকে ব্যবহার করছে মস্কো; সম্প্রতি সেখানে একাধিক 'নাশকতা'র ঘটনা ঘটেছে, যা রাশিয়ার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ক্রিমিয়ায় মস্কোর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি সের্গেই আকসিওনভ মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে দুইজন আহত, ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন এবং সামরিক ওই ডিপোর নিকটবর্তী একটি গ্রাম থেকে প্রায় দুই হাজার জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে কিছু বলেননি তিনি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে মাইস্কে গ্রামের কাছে একটি অস্থায়ী গোলাবারুদ সংরক্ষণাগারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানানো হয়েছে।

ইউক্রেন স্পষ্ট করে কিছু না বললেও, বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। এমনটা হয়ে থাকলে তা রুশ ভূখন্ডের ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতার নতুন প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে; এমনটা হলে ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিতেও ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃষ্ণ সাগরে অবস্থিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি রাশিয়া ২০১৪ সাল থেকেই তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনো রাশিয়ার এই অধিগ্রহণকে স্বীকৃতি না দিলেও সেখানেই তাদের কৃষ্ণ সাগর নৌবহরের ঘাঁটি; গ্রীষ্মকালে ছুটি কাটানোর স্থান হিসেবেও এটি অনেক রাশিয়ানেরই পছন্দ।

কয়েকদিন আগেই একাধিক বিস্ফোরণ ক্রিমিয়ার পশ্চিম উপকূলের একটি সামরিক ঘাঁটির ব্যাপক ক্ষতি করেছে এবং কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। মস্কো একে দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহিত করলেও উপগ্রহের ছবিতে বিস্ফোরণের কারণে ঘাঁটিতে সৃষ্ট একাধিক গর্ত দেখা গেছে।

মঙ্গলবারের ঘটনায় দিঝানকোই শহরের কাছে একটি বিদু্যতের সাবস্টেশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলেও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে একাধিক বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এসব শব্দ গোলাবারুদ বিস্ফোরণের কারণে হয়েছে বলে বলছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ক্রিমিয়ায় বিস্ফোরণের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে খোলাখুলি কিছু না বললেও, মস্কোর মুঠোয় থাকা 'তুলনামূলক নিরাপদ' বলে বিবেচিত এই ভূখন্ডে যে কোনো 'নাশকতার' ঘটনায় ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের উলস্নাসিত হতে দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক টুইটারে খোঁচা মেরে বলেছেন, 'স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার, স্বাভাবিক সময়ে ক্রিমিয়া হচ্ছে কৃষ্ণ সাগর, পাহাড়, অবসর উপভোগ আর পর্যটন; কিন্তু রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়া হচ্ছে অস্ত্রগুদামে বিস্ফোরণ আর দখলদার ও চোরদের জন্য মৃতু্যর মহাঝুঁকি। নিরস্ত্রীকরণ হচ্ছে।'

গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারিতে রুশ বাহিনী তাদের ভাষায় 'বিশেষ সামরিক অভিযান' শুরুর পর ইউক্রেনের যেসব অংশ এরই মধ্যে দখলে নিয়ে নিয়েছে সেসব এলাকায় পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতিতে রাশিয়ার সরবরাহ লাইনে বিঘ্ন ঘটাতে চাইছে কিয়েভ।

বিমানঘাঁটির মতো মঙ্গলবার যে গোলাবারুদের ডিপোতে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা ইউক্রেনকে যেসব রকেট দেওয়া হয়েছে বলে পশ্চিমারা এতদিন ধরে প্রকাশ্যে জানিয়েছিল, তার পালস্না থেকে বেশ দূরে। এরপরও ক্রিমিয়ার এসব বিস্ফোরণ যদি ইউক্রেনের হামলায় হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে বোঝা যাবে কিয়েভ রুশ বাহিনীর ওপর হামলার নতুন সক্ষমতা অর্জন করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে জাপোরিঝিয়া বিদু্যৎ কেন্দ্র নিয়ে। ওই বিদু্যৎকেন্দ্র প্রাঙ্গণে একের পর এক গোলা পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য উভয়পক্ষই একে অপরকে দোষী সাব্যস্তও করছে। রাশিয়ার দখলে থাকলেও কেন্দ্রটি এখনো ইউক্রেনের প্রযুক্তিবিদরাই পরিচালনা করছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, রাশিয়া ঘাঁটিটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বিদু্যৎকেন্দ্রকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যে রুশ সেনারা ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে, ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তাদের ওপর পাল্টা হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন। আর রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনই পারমাণবিক স্থাপনাটিতে গোলা ছুড়ে যাচ্ছে। এর পক্ষে তাদের টেলিভিশন ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি-ভিডিও'ও দিচ্ছে তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে