বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পার্লামেন্টের পদও গেল বরিসের

লকডাউনে মদের আসর
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০
বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশটির কনজারভেটিভ দলের এমপি বরিস জনসন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। করোনা লকডাউনের সময় বিধি ভঙ্গ করে মদের পার্টি আয়োজনের ঘটনায় সৃষ্ট বিতর্কের জেরে এর আগে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বরিস, এবার এমপির পদও ছেড়ে দিলেন তিনি। মহামারি চলাকালীন ওই মদের পার্টির (পার্টিগেট) নিয়ে পার্লামেন্টে বিভ্রান্তিকর বিবৃতি পেশ করা নিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা যুক্তরাজ্যে। এর আগে এই পদত্যাগ দেশটিতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও একবার জনসম্মুখে স্পষ্ট হলো। শুক্রবারের বিবৃতিতেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে। যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'কিছু মুষ্টিমেয় লোকের কারণে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে- সেসবের পক্ষে কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই।'

২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় ?যুক্তরাজ্যজুড়ে লকডাউন জারি ছিল। ওই সময় দেশটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ, বার ইত্যাদি বন্ধ রাখাসহ সামাজিক মেলামেশায় কঠোরভাবে নিষেধ ছিল এবং লকডাউনের বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল এ সম্পর্কিত সরকারি আদেশে। কিন্তু ২০২১ সালের শেষের দিকে অভিযোগ ওঠে, লকডাউনের ওই সময় লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিকবার নিজের বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীসহ মদের আসর বসিয়েছিলেন। পুলিশি তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা মেলার পর এটি পরিচিতি পায় 'পার্টিগেট কেলেঙ্কারি' নামে এবং এই কেলেঙ্কারির জেরে ২০২২ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ৫৮ বছর বয়সি বরিস জনসন।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে বরিস জনসনই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এবং এর জেরে ক্ষমতাচু্যত হতে হয়েছে।

এরপর চলতি বছরের মে মাসে নতুন একটি অভিযোগ আসে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে। সেই অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, কেবল ডাউনিং স্ট্রিটেই নয়, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর যেসব বাসভবন আছে, যেগুলো সরকারিভাবে 'চেকার' নামে পরিচিত; সেসব চেকারেও মহামারির সময় 'পার্টি' করেছেন বরিস ও তার বন্ধুরা।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 'হাউস অব কমন্সে' এ-সংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর তা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে পার্লামেন্ট এবং সম্প্রতি তাকে একটি গোপন (কনফিডেনশিয়াল) চিঠিও দিয়েছে পার্লামেন্ট কমিটি। চিঠিতে কী লেখা ছিল, সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে শুক্রবারের বিবৃতিতে বরিস জনসন অভিযোগ করেছেন, তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট যে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পুরোপুরি 'রাজনৈতিক' এবং পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতারা তদন্তের নামে একটি 'ক্যাঙ্গারু আদালত' গঠন করেছেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া।

যুক্তরাজ্যে কোনো এমপির বিরুদ্ধে যদি শৃঙ্খলাভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ ওঠে, সে ক্ষেত্রে দেশটির পার্লামেন্ট সেই এমপিকে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে পারে। যদি কোনো এমপিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়, সে ক্ষেত্রে ওই এমপি আর কখনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। ধারণা করা হচ্ছে, পার্লামেন্ট কমিটি জনসনকে যে চিঠিটি দিয়েছিল, সেখানে এই সতর্কবার্তা ছিল। এ কারণে আগেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে