সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
একাধিক গির্জায় আগুন

কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে পাকিস্তানে তুলকালাম

ম গির্জা সংলগ্ন বাড়িঘরেও হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
পুড়িয়ে দেওয়া একটি গির্জা

পাকিস্তানের ফায়সলাবাদের জারনওয়ালা টাউন এলাকাকায় দু'জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে বুধবার কয়েক হাজার মুসলমান সংগঠিত হয়ে কয়েকটি চার্চ আগুন দিয়েছে এবং খ্রিস্টানদের বাড়িঘরে তান্ডব চালিয়েছে। আক্রমণকারীদের অভিযোগ, ওই এলাকায় বসবাসকারী একটি পরিবার কোরআনের অবমাননা করেছে। সে কারণেই এই আক্রমণ। বেশ কয়েকটি কট্টরপন্থি মুসলমান গোষ্ঠী এই আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি

পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চলে জারনওয়ালা শহরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় পুলিশ বলছে, কমপক্ষে চারটি গির্জায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছে, গির্জা সংলগ্ন বাড়িঘরেও হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

বস্নাসফেমি বা ইসলাম ধর্ম অবমাননা পাকিস্তানে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও এই আইনে এখন পর্যন্ত কারও মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হয়নি। তবে এ ধরনের অভিযোগ ওঠার পর উন্মত্ত জনতার হাতে অনেকেই খুন হওয়ার নজির রয়েছে। পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশই মুসলমান।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের কাছে কোরআনের কয়েকটি পাতা পাওয়া গেছে, যেখানে লাল কালিতে 'অবমাননাকর' মন্তব্য লেখা ছিল বলে পুলিশ দাবি করছে।

এ ঘটনার জের ধরে যারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন ৩১ বছর বয়সী ইয়াসির ভাট্টি। তিনি জানান, 'তারা ঘরের দরজা জানালা ভেঙে ফ্রিজ, সোফা, চেয়ারসহ ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্র বাইরে গির্জার সামনে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তারা একই সঙ্গে বাইবেল তছনছ ও পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা ছিল নিষ্ঠুর।' সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা খ্রিস্টানদের বাড়িঘর তছনছ করছে আর পুলিশ শুধু তাকিয়ে দেখছে।

পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আমির মির কথিত বস্নাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কয়েক হাজার পুলিশ ওই এলাকায় পাঠানো হয়েছে এবং বেশ কিছু ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, হামলাকারী উন্মত্ত জনতার বেশিরভাগই মূলত ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল 'তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান' বা টিএলপির সঙ্গে জড়িত। যদিও টিএলপি এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার উল হক কাকার সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

লাহোরে পাকিস্তানি বিশপ আজাদ মার্শাল বলেছেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায় এ ঘটনায় 'গভীরভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত'। তিনি জানিয়েছেন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাদের রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সামাজিক মাধ্যম 'এক্স'-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, 'আমরা ন্যায়বিচার চাই এবং যারা নাগরিকদের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অ্যাকশন দেখতে চাই। আমাদের আশ্বস্ত করা হোক যে, আমাদের মাতৃভূমিতে আমাদের জীবন মূল্যবান।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে