রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
জিন গবেষণা

বেথোফেনের মৃতু্যর কারণ সম্পর্কে এখনো অনিশ্চিত বিজ্ঞানীরা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সুরকার লুডভিগ ভান বেথোফেন

প্রখ্যাত জার্মান সুরকার লুডভিগ ভান বেথোফেনের ইচ্ছা ছিল, তার অসুস্থতা নিয়ে যেন গবেষণা হয় এবং যতদূর সম্ভব সেই তথ্য যেন প্রচার করা হয়, যাতে মৃতু্যর পরও মানুষ তাকে মনে রাখতে পারে। বেথোফেনের সেই ইচ্ছার সম্মানে তার মৃতু্যর প্রায় ২০০ বছর পর তার কয়েক গাছি চুল থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। এতে তার বংশানুক্রম, দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ৫৬ বছর বয়সে তার মৃতু্যর পেছনে কারণ কী থাকতে পারে, সে সম্পর্কেও ধারণা পেয়েছেন তারা। নমুনা হিসেবে পাঁচ গাছি চুল নিয়ে করা সেই গবেষণার ফল সম্প্রতি 'কারেন্ট বায়োলজি' জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষক দলের সহ-লেখক জার্মানির লাইপজিগের 'ইন্সটিটিউট ফর ইভোলুশনারি অ্যানথ্রোপোলজি'র অধ্যাপক জোহানেস খ্রাউস জানান, গবেষণার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বেথোফেনের স্বাস্থ্য সমস্যা কী ছিল সেটি খুঁজে দেখা। এর মধ্যে প্রধান ছিল তার শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া এবং ১৮১৮ সালে পুরোপুরি বধির হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।

বেথোফেনের মৃতু্যর আগে লিভারের রোগ ও হেপাটাইটিস বি'র সংক্রমণ হয়েছিল। এছাড়া বংশানুক্রমিক কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাও তার ছিল। তবে তার শ্রবণশক্তি কমার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ গবেষণায় খুঁজে পাননি এই গবেষক দল। প্রধান লেখক ত্রিস্তান বেগ বলেছেন, জেনেটিক রিস্ক ফ্যাক্টরের সঙ্গে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে বেথোফেনের লিভারের সমস্যা তৈরি হয়ে থাকতে পারে।

১৭৭০ সালে জার্মানির বনে জন্মগ্রহণ করেন বেথোফেন। ৫৬ বছর বয়সে ১৮২৭ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার তার মৃতু্য হয়। প্রখ্যাত এই সুরকার ও পিয়ানোবাদক ক্রমাগত শ্রবণশক্তি হারিয়ে একপর্যায়ে বধির হয়ে পড়েন। বেগ বলেন, বেথোফেন তার জীবনের শেষ দশকে যে 'কথোপকথনের বই' ব্যবহার করেছেন, সেটি থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান- তিনি নিয়মিত মদ্যপান করতেন। কিন্তু তার পরিমাণ কেমন ছিল, সেটা অনুমান করা কঠিন।

তিনি বলেন, 'যদিও তার সমসাময়িকরা দাবি করেছিলেন, ১৯ শতকের শুরুর দিকে ভিয়েনা মান অনুসারে বেথোফেন মাঝারি মাত্রায় অ্যালকোহল পান করতেন। তবে সেটি সম্ভবত লিভারের জন্য এখন যে মাত্রাকে ক্ষতিকর ধরা হয়, সেই পরিমাণে ছিল। যদি বেশি মাত্রায় দীর্ঘ সময় ধরে তিনি অ্যালকোহল পান করেন, তাহলে এর সঙ্গে জেনেটিক ঝুঁকির কারণগুলো ও সিরোসিসের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।'

জিনোম তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলেন, বেথোফেনের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলো সিলিয়াক রোগ বা ল্যাকটোজের সমস্যার কারণে ঘটেনি।

জোহানেস খ্রাউস বলেন, 'বেথোফেন কী কারণে মারা গেছেন, সেটি আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। তবে এখানে অন্তত আমরা বংশগত ঝুঁকি এবং হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি।'

বন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের 'ইন্সটিটিউট অফ হিউম্যান জেনেটিক্স'র চিকিৎসক অ্যাক্সে স্মিথ বলেন, 'বেথোফেনের শ্রবণশক্তি কমার কারণ হিসেবে একটি স্পষ্ট জেনেটিক কারণ চিহ্নিত না করা গেলেও বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জেনেটিক বিষয়গুলোকেও সরাসরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।'

বেথোফেনের জিন বিন্যাস বের করার পর তা তার পরিবারের জীবিত উত্তরসূরিদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু একটি জায়গায় তা মেলেনি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বেথোফেনের বাবার দিকে পূর্বসূরিদের মধ্যে কারও একজনের জন্ম হয়েছিল বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের মাধ্যমে। সেখান থেকেই ওয়াই ক্রমোজমে ওই নতুন অংশের উৎপত্তি হয়েছে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে