রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
হামাসের সঙ্গে লড়াই

গাজায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ইসরাইল

জনশূন্য আল-শিফা হাসপাতাল উত্তর গাজায় স্কুলে বিমান হামলা নিহত ৫০, অধিকাংশই শিশু খান ইউনিসেও ইসরাইলের বোমা হামলায় নিহত ৩২ নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আল-শিফা হাসপাতালের সামনে দুই ইসরাইলি সেনা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইল কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক নেতৃত্ব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে এবং এক রকমের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের একাংশ দক্ষিণ গাজায় স্থলে অভিযান চালানোর পক্ষে, আবার আরেকটি পক্ষ বন্দি বিনিময় করার জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন চুক্তিতে পৌঁছানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরাইলের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক 'জেরুজালেম পোস্ট' এ খবর দিয়েছে। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, পার্স টুডে, এএফপি

গাজা নিয়ে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ গাজায় সামরিক আগ্রাসন বিস্তার করা হবে কিনা। এর পাশাপাশি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে থাকা বন্দিদের মধ্যে অন্তত কয়েকজন ইসরাইলিকে মুক্তির বিনিময়ে সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইসরাইলি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার প্রশ্ন রয়েছে।

জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে, যার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলের অভিযান শুরু করতে দেরি হচ্ছে। এর আগে ইসরাইলের সামরিক এবং বেসামরিক নেতৃত্ব গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল এবং ইসরাইলি বন্দিদের মুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনারা আগ্রাসন অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিরোধীদলীয় নেতাসহ ইয়ার লাপিদসহ বেশিরভাগ ইসরাইলি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করছেন।

জনশূন্য আল-শিফা হাসপাতাল

গাজার উপত্যকার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। শনিবার ইসরাইলি বাহিনীর এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল থেকে রোগীদের চলে যাওয়ার আলটিমেটামের পর এখন সেটি জনমানবহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই হাসপাতালের ইনকিউবেটরে কয়েক ডজন শিশুসহ মুমূর্ষু শত শত রোগী ছিলেন। তারা এখন হাসপাতালের চত্বরে এবং করিডোরে পড়ে আছেন। অনেকে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

আল-শিফার পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, তিনিসহ অল্প কয়েকজন স্টাফ ও রোগী বর্তমানে হাসপাতালে আছেন। বাকিরা হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন। তিনি বলেন, 'হাসপাতালটি এখন পুরোপুরি জনশূন্য হয়ে পড়েছে। রোগী ও ভুক্তভোগীদের অনেকেই করিডোরে শুয়ে আছেন। হাসপাতালের মূল কেন্দ্র ইসরাইলি সেনারা ঘেরাও করেছে। এই হাসপাতালের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে। এমনকি হাসপাতালে থেকে যাওয়া একেবারে অল্প কয়েকজন চিকিৎসা কর্মীসহ আমরা এই মুহূর্তে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছি না।'

মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, রোগীদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। তাদের মধ্যে সদ্যজাত শিশু ও কিডনি রোগীও রয়েছেন। সরিয়ে নেওয়া না হলে শিগগিরই তারা মারা যাবেন। হাসপাতালের খাবারও ফুরিয়ে যাচ্ছে।

আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক ওমর জাকৌত বলেন, ইসরাইলি বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক, রোগী ও বাস্তুচু্যত মানুষসহ সবাইকে আল-ওয়েহদা সড়ক দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল ভবন খালি করার নির্দেশ দেয়।

যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনী হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ অস্বীকার করে বলেছে, তারা হাসপাতালের পরিচালকের এক অনুরোধে সাড়া দিয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক সেখান থেকে চলে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিরাপদ পথ তৈরি করে দিতে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর কাছে অনুরোধ করেছেন। রোগীদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে বলে হাসপাতালের চিকিৎসকদের জানিয়ে দিয়েছে সেনারা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ বলেছেন, প্রায় ৪৫০ জন রোগীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালে ১২০ জনের মতো রোগী এখনো আছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য পাঁচজন চিকিৎসক ও কয়েকজন রয়েছেন। এই রোগীরা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন।

উত্তর গাজায় স্কুলে বিমান হামলা, বহু হতাহত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাতিসংঘ পরিচালিত আল-ফাখুরা স্কুলে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আরও শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। শনিবার ইসরাইলের বিমান বাহিনী জাবালিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডাবিস্নউএ) ওই স্কুলে হামলা চালায়।

প্রাথমিকভাবে উত্তর গাজার বৃহত্তম শরণার্থী শিবির জাবালিয়ার আল-ফাখুরা স্কুলে ইসরাইলের বোমা হামলায় কমপক্ষে ২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়। পরে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্কুলে ইসরাইলের বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি বোমা হামলার পর সেখানকার বিভীষিকাময় ছবি সামনে আসছে। এতে দেখা গেছে, আল-ফাখুরা স্কুলের অনেক কক্ষ ও করিডোরে ফিলিস্তিনিদের মরদেহ পড়ে আছে। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। শত শত মানুষ এই স্কুলের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

স্বাভাবিক সময়েই জাবালিয়া শরণার্থী শিবির অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ থাকে। এই শরণার্থী শিবিরের ভেতরের কিছু বাসিন্দা ইসরাইলি বাহিনীর নির্দেশে গাজা উপত্যকার দক্ষিণে পালিয়েছেন। আর অন্যরা কোনো নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাননি। যে কারণে তারা ঘরবাড়ি, খামার, আবাদি জমি ছেড়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এই শরণার্থীরা জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্কুলগুলোও আর নিরাপদ নয়।

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের আশপাশের লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।

খান ইউনিসে ইসরাইলের বোমা হামলায় নিহত ৩২

এদিকে, সতর্কতা জারির পরই দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে ইসরাইলি বাহিনী বোমা হামলা শুরু করেছে। স্থানীয় সময় শনিবার বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলি সেনারা। হামলায় অন্তত ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই শিশু।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা' এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে শনিবার সকালে বোমা হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। হামলায় অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হন। যাদের অধিকাংশই শিশু। এ হামলায় আরও বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি।

নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে। এই তথ্য দেওয়ার পরই গাজার স্কুল ও খান ইউনিসে হামলার খবর আসে। গাজার সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পাঁচ হাজার জন শিশু এবং তিন হাজার ৩০০ জন নারী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে