রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিবিসির বিশ্লেষণ

আল-শিফায় অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো!

উদ্ধারকৃত অস্ত্রের যে ব্যাগটি ইসরাইলি বাহিনী এক সাংবাদিককে দেখিয়েছে, সেই ব্যাগটি সাংবাদিক আসার কয়েক ঘণ্টা আগে স্কচটেপ দিয়ে পঁ্যাচানো হয়েছিল
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ইসরাইলি বাহিনীর 'অস্ত্র উদ্ধার' অভিযান

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আল-শিফা হাসপাতালটি গত কয়েক দিন ধরে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) সেখানে হামলা চালায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। গাজার বৃহৎ এ হাসপাতালে হামলা চালানোর আগে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একটি গ্রাফিকস ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে তারা দেখায়, আল-শিফার নিচে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিস্তৃত সুড়ঙ্গ ও কমান্ড সেন্টার রয়েছে। যেখান থেকে ইসরাইলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়। তবে ইসরাইল তাদের এ দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো প্রমাণ দেয়নি।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী হাসপাতাল থেকে (কথিত) উদ্ধার করা কিছু অস্ত্র দেখিয়েছে- যেগুলোর বেশিরভাগই হলো অ্যাসাল্ট রাইফেল। এই অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি ইঙ্গিত করছে, সেখানে সশস্ত্র যোদ্ধারা হয়তো ছিলেন। কিন্তু এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়নি, হাসপাতালের নিচে হামাসের বিশাল কমান্ড সেন্টার ছিল। যেখান থেকে ইসরাইলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়। এমনকি অস্ত্র উদ্ধারের যে ভিডিও ইসরাইল প্রকাশ করেছে, সেটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি 'সাজানো নাটক' ছিল।

কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'বিবিসি'র বিশ্লেষক জানিয়েছেন, আল-শিফা হাসপাতালের এমআরআই মেশিনের পেছন থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের যে ব্যাগটি ইসরাইলি বাহিনী এক সাংবাদিককে দেখিয়েছে, সেই ব্যাগটি সাংবাদিক আসার কয়েক ঘণ্টা আগে স্কচটেপ দিয়ে পঁ্যাচানো হয়েছিল। এরপর পরবর্তী যে ভিডিও ইসরাইলিরা প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে ব্যাগে যে পরিমাণ অস্ত্র ছিল, তার চেয়ে বেশি অস্ত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, আল-শিফার ভেতর থেকে তারা যে ভিডিও প্রকাশ করেছে, সেটি এডিট করা হয়নি। এটি একবারে ধারণ করা হয়েছে। তবে বিবিসির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে।

অপর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'গার্ডিয়ান' জানিয়েছে, হামলার আগে ইসরাইল যে গ্রাফিকস ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল, সেটিতে দেখানো হয়েছিল হাসপাতালের অনেক নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার অবস্থিত। হয়তো তারা সেখানে এখনো পৌঁছাতে পারেনি। তবে এখন পর্যন্ত ইসরাইল যেসব প্রমাণ দেখানোর চেষ্টা করেছে, পরে তারা যেসব প্রমাণই দেখাক না কেন, সেগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র সন্দেহ থাকবে।

হাসপাতালে হামলা এবং এটির ভেতর হামাসের সামরিক অবকাঠামো না পাওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি ইসরাইলিরা কোনো কিছু না পায়, তাহলে তারা জেনেভা কনভেনশনের চুক্তি ভঙ্গ করেছে। জেনেভা কনভেনশন চুক্তিতে উলেস্নখ আছে, হাসপাতাল যদি বড় কোনো সামরিক হুমকি না হয়, তাহলে এটিতে হামলা চালানো যাবে না। উল্টো হাসপাতাল রক্ষায় প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ থাকতে হবে।

হাসপাতালে হামলার কারণে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার তদন্ত হবে। যদিও এসব তদন্ত এবং এটির রায় প্রকাশের বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ইসরাইল এতে ফেঁসে যাবে। হাসপাতালে কমান্ড সেন্টার থাকার যে দাবি ইসরাইল করেছে, সেটিতে আমেরিকা শুধু সমর্থনই দেয়নি, তারা তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের বরাতেও দাবি করেছে, আল-শিফার নিচে হামাসের সামরিক অবকাঠামো আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শক্তিশালী প্রমাণ না পাওয়ার বিষয়টি আমেরিকার অতীত গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টিই আবারও সামনে এনেছে। ইরাকে হামলা চালানোর আগে মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছিলেন, দেশটিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে। কিন্তু পরে এর কিছুই পাওয়া যায়নি।

হামাস বলেছে, আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলের সামরিক অভিযানের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনুমতি দিয়েছেন। জো বাইডেনের সবুজ সংকেত পেয়েই ইসরাইলি সেনারা এ বর্বর অভিযান চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি সংগঠনটি বলেছে, ইসরাইলিরা শিশু, রোগী এবং নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় জড়িত। তাদের জবাবদিহি করতে হবে। হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলের মিথ্যাচারকে গ্রহণ করেছে হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগন। তারা আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আরও গণহত্যা করার জন্য ইসরাইলকে অনুমতি দিয়েছে। ইসরাইলিরা উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত করেছে। তারা আবারও ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখল করতে চাইছে।

শুক্রবার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, 'নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভা এখন একটি অবাস্তব বিষয় খুঁজছেন। এটা তাদের অক্ষমতা এবং ফাঁকা ঔদ্ধত্য নির্দেশ করেছে। এটা ইসরাইলিদের পরাজয় ও ব্যর্থতার প্রমাণ।

উলেস্নখ্য, গাজায় বিশ্বের অনেক দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য, জার্মানি, আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা মূলত ইসরাইলের কথিত আত্মরক্ষার অজুহাতে এখন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে না। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে তারা। সংবাদসূত্র : গার্ডিয়ান, বিবিসি, আল-জাজিরা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে