রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভূগর্ভের উত্তাপ দিয়েই জ্বালানি উৎপাদন

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জার্মানির মিউনিখে ভূপৃষ্ঠে খননকাজ চলছে

সূর্য বা বাতাস না থাকলে সৌর বা বায়ুচালিত বিদু্যৎ কেন্দ্র উৎপাদন বন্ধ রাখতেই হয়। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের গভীরের উত্তাপ কাজে লাগাতে পারলে সেই বিঘ্নের আশঙ্কা থাকে না। জার্মানির মিউনিখ শহরের কাছে ঠিক তেমনই এক উদ্যোগ চলছে। মিউনিখ শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি জায়গায় এক হাজার ৮০০ মিটার গভীরে খননের কাজ চলছে। আপাতত এক হাজার ৮০০ মিটার গভীরে পৌঁছানো গেছে। কিন্তু এর দ্বিগুণই হলো লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক এই টিম সাধারণত পেট্রলিয়াম ও গ্যাসের সন্ধান করে।

এ ক্ষেত্রে তাদের গরম পাথরের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। জিওথার্মাল জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে রায়ান ক্রস বলেন, 'আমাদের ১০০ থেকে আট হাজার মিটার পর্যন্ত খননের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজের গতি বাড়ছে। জিওথার্মাল খননের জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটা অনেকটা শেল গ্যাস সন্ধানের প্রযুক্তির মতো।'

শেল গ্যাসের সন্ধানে খননের ব্যয় কমে গেছে। সে কারণেই ইয়াভর কোম্পানির জন্য জিওথার্মাল বিদু্যৎ কেন্দ্রের লক্ষ্যে মাটির গভীরে খনন করা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়ে উঠেছে। কোম্পানির কর্ণধার ডানিয়েল ম্যোল্ক জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বে এটাই প্রথম এ ধরনের পস্নান্ট।

তিনি বলেন, 'প্রথম ধাপে আমরা সাড়ে চার হাজার মিটার গভীরে পৌঁছাচ্ছি। তাপমাত্রা ও সঠিক পাথরের স্তরের জন্য এতটা গভীরে যেতে হচ্ছে। সেই স্তরে পৌঁছানোর পর আমরা একাধিক গর্ত খুঁড়ে মাটির নিচে এক ধরনের রেডিয়েটর তৈরি করব।'

সেই গভীরতায় পৌঁছানোর পর 'ইনক্লাইন্ড পজিশন' থেকে আরও চার হাজার মিটার গভীরে খনন শুরু করা হবে। সেখানে পাথরের স্তরের তাপমাত্রা ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খননের যন্ত্রগুলো চৌম্বক সংকেতের মাধ্যমে পরস্পরকে খুঁজে পায় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করে। এভাবে পাতাল জগতে এক পানি-ভরা 'হিট এক্সচেঞ্জার' সৃষ্টি হয়। প্রায় বিনামূল্যে উত্তাপের অনন্ত চক্র চলতে থাকে।

১০ থেকে ২০ টন চাপ দিয়ে ড্রিল বিট পাথর ভেদ করে খনন করে চলে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডায়ামন্ড দিয়ে সেগুলো চালানো হয়। মাঝের জেট ধুলাবালি ওপর দিকে চালনা করে। ডানিয়েল মোল্ক বলেন, 'এই ড্রিল বিট দিয়ে আমরা ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ মিটার খনন করতে চাই। মাঝে সেই গর্ত পরিষ্কার করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়। চার দিনে আমরা ২৪০০ মিটার গভীরে পৌঁছতে চাই।'

খননের সময় বর্জ্য হিসেবে গরম বেলেপাথরের কাটিং ওপরে উঠে আসে। লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছলে ফুটন্ত গরম পরিবেশ সামলাতে হবে। পরে বিশেষ ধরনের পাইপের মাধ্যমে গর্তগুলো ইনসুলেট করা হয়।

মাটির নিচে 'হিট এক্সচেঞ্জার'-এর কাজ সম্পূর্ণ করতে তিন বছর খননের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সাইটে ২০০ জন পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মী কাজে ব্যস্ত। দুটি গর্তের জন্য দুটি টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়াররা কাছের এক খামারে বাস করছেন। একই সঙ্গে তারা বিদু্যৎ পস্নান্ট নির্মাণের পরিকল্পনাও করছেন। এক বছরে সেটি গড়ার কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের ম্যানেজার ফাব্রিসিও সেজারিও বলেন, 'বিদু্যৎ কেন্দ্র গড়ার জন্যও আমরা জিওথার্মাল খননের প্রক্রিয়া কাজে লাগাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা শহরে উত্তাপের ব্যবস্থা করছি।'

শেষে বিদু্যতের এক জেনারেটর ১০ হাজার বাসার জন্য বিদু্যৎ সরবরাহ করবে। সেই পস্নান্ট ৮০ হাজার পর্যন্ত বাসার জন্য হিটিংয়েরও ব্যবস্থা করবে। রক ডিপ জিওথার্মাল অ্যানার্জি অবিরাম জ্বালানি সরবরাহ করে, সৌর বা বায়ুশক্তির ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব নয়।

নতুন এই জ্বালানি কোন ভূমিকা পালন করবে? ইয়াভর কোম্পানির কর্ণধার মোল্ক বলেন, 'বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানির মিশ্রণই সমাধান সূত্র হতে চলেছে। আমরা সেই কাঠামোর অংশ হিসেবেই কাজ করতে চাই, আধিপত্য বিস্তার করতে চাই না। আমাদের ইয়োভারলুপ 'হিট এক্সচেঞ্জার' পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করে। খুব রোদ বা বাতাসের দিনে আমরা ব্যবহার কমাতে পারি। বাতাস বা সূর্যের আলো না থাকলে উৎপাদন বাড়াতে পারি। সেই অর্থে আমরা সম্পূরক পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবস্থা করছি।'

গ্যাসচালিত বিদু্যৎ কেন্দ্র থেকে 'ডিস্ট্রিক্ট হিটিং'-এর চাহিদা এখন আর নেই। সে কারণে এই স্থাপনা মিউনিখ শহরে ২০২৬ সাল থেকে পরিবেশবান্ধব উত্তাপ সরবরাহ করবে। আর জার্মানির উত্তরের এক বড় শহরে দুই বছর পর খনন শুরু হওয়ার কথা। সংবাদসূত্র : ডিপিএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে