ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারও ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার ভোরে রাজধানী কিয়েভ ও আশপাশের বিস্তৃত এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার জেরে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। চলতি মাসে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির রাজধানীতে এ নিয়ে ষষ্ঠ দফায় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটল। সর্বশেষ এই হামলায় কারও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও আহত হয়েছেন দুইজন। শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিতসকোসহ অন্য কর্মকর্তারা ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন আবাসিক এলাকাগুলোয় এই হামলার কথা জানিয়েছেন। এই হামলার বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
মেয়র ভিতালি 'টেলিগ্রাম' মেসেজিং অ্যাপে লিখেছেন, রাতের আঁধারে ড্রোন শহরের কেন্দ্রের দক্ষিণে অবস্থিত সোলোমিয়ানস্কি এলাকায় বহুতল আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। এতে ভবনের ওপরের তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। যদিও সেই আগুন দ্রম্নত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা টেলিগ্রামে লিখেছে, হামলার শিকার ভবনের ২৪, ২৫ এবং ২৬ তলায় বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সর্বশেষ এই হামলার ঘটনাটি স্থানীয় একটি প্রসূতি হাসপাতাল থেকে কয়েকশ মিটার দূরে ঘটেছে। পরে শহরের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই বিমান হামলার সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে রাতের আঁধারে বিশাল কমলা শিখা আকাশের দিকে উঠতে দেখা যাচ্ছে। ক্লিতৎসকো আরও বলেছেন, ড্রোনের টুকরাগুলোর আঘাতে দিনিপ্রো নদীর পূর্বতীরে দারনিটস্কি এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে আগুন ধরে গেছে। তিনি বলেন, সেখানে কেউ আহত হয়নি। অনলাইনে পোস্ট করা ছবিগুলোয় সাইটটির চারপাশে ছড়িয়ে থাকা নির্মাণসামগ্রী দেখা যাচ্ছে।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সের্হি পপকো জানিয়েছেন, ভূপাতিত করা একটি ড্রোনের টুকরা শহরের কেন্দ্রের দক্ষিণে অবস্থিত হলোসিভস্কি এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে আঘাত করে। তিনি বেশকিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে জানালা ভাঙা ও অ্যাপার্টমেন্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।
উলেস্নখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকে সাড়ে ৬০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে উভয় দেশের মধ্যে। এ ছাড়া যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে মস্কো প্রায়ই রাতে ইউক্রেনের ভূখন্ডে হামলা চালাচ্ছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কোস্ত্যন্তিনিভকায় রাশিয়ার হামলায় ১৭ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন আরও অন্তত ৩৩ জন। যদিও বেসামরিক নাগরিকদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে রাশিয়া।
বিদেশে বসবাসকারী পুরুষ নাগরিকদের
সেনাবাহিনীতে নিতে চায় ইউক্রেন
এদিকে, বিদেশে বসবাসকারী পুরুষ নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে নেওয়ার কথা ভাবছে ইউক্রেন। এমনকি প্রবাসী নাগরিকদের কেউ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে না চাইলে শাস্তির মুখে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
বিদেশে বসবাসকারী ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি ইউক্রেনের পুরুষ নাগরিকদের সামরিক চাকরির জন্য রিপোর্ট করতে বলা হবে বলে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছেন। তিনি এটিকে 'আমন্ত্রণ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে কেউ এটা না মানলে তাকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য পরে একজন মুখপাত্র স্পষ্ট করে বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি করার জন্য কাউকে ডেকে পাঠানো বা তলব করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, তার দেশের জন্য সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ নতুন সেনা প্রয়োজন। কিন্তু এটি অর্জন করা 'খুব কঠিন'।
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পাল্টা আক্রমণ থমকে গেছে বলে মনে হচ্ছে। গত নভেম্বরে ইইউ পরিসংখ্যান সংস্থা 'ইউরোস্ট্যাটের' পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় 'আগ্রাসন' শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সি প্রায় সাত লাখ ৬৮ হাজার ইউক্রেনীয় পুরুষ দেশ ছেড়েছেন।