সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
পশ্চিম তীর

বিনা অপরাধে বন্দি ফিলিস্তিনিরা

ইসরাইল যেভাবে আইনটির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আটক করছে, সেটি আসলে অপব্যবহারের পর্যায়ে চলে গেছে। এ ছাড়া আটক হওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ বা কার্যকরভাবে আপিল করার সুযোগ খুব একটা পায় না। কারণ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য যে ধরনের তথ্য-প্রমাণ দরকার হয়, সেটি সংগ্রহ করার অনুমতি তাদের নেই...
যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
হেবরনে বিক্ষোভ করার সময় এক কিশোরকে আটক করে ইসরাইলি সেনারা -ফাইল ছবি

অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের একটি বাড়ি। এই বাড়িতে মায়ের পাশে বসে চোখ ডলে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা করছিল ইয়াজেন আলহাসনাত। প্রায় পাঁচ মাস আগের এক ভোরে অভিযান চালিয়ে মাত্র ১৭ বছর বয়সি এই ছেলেটিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় ইসরাইলি সেনারা। সম্প্রতি হামাসের সঙ্গে জিম্মি বিনিময়ের সময় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

ইয়াজেনের আটকের ঘটনাকে 'প্রশাসনিক কারণে আটক' বলা হয়েছিল, যেটি মূলত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে আটকের সময় ব্যবহার করে থাকে ইসরাইল। এটি ছিল পুরনো একটি ব্রিটিশ আইন, যেটি উত্তরাধিকার সূত্রে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে ইসরাইল। এই আইনের অধীন কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একজন ব্যক্তিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবন্দি করে রাখতে পারে ইসরাইল। ইয়াজেন জানায়, 'তাদের কাছে একটি গোপন ফাইল রয়েছে। কিন্তু তারা আপনাকে বলবে না সেটিতে কী আছে।'

গত ৭ অক্টোবর হঠাৎ হামলা চালিয়ে হামাস যেসব ইসরাইলি নাগরিককে জিম্মি করেছিল, তাদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে কিছুদিন আগে ১৮০ জন ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। ওইসব নারী ও শিশুকে দিনের পর দিন বিনা অপরাধে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। কিন্তু এমন এক সময় তাদের মুক্তি দেওয়া হলো, যখন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরাইল। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে অন্তত এক হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনিকে 'প্রশাসনিক আটক' করা হয়েছে, যেটি গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে এই আইনের আওতায় দুই হাজার আট শতাধিক ফিলিস্তিনি এখন ইসরাইলের কারাগারে বন্দি রয়েছে।

ইয়াজেনকে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন তার পরিবারকে সতর্ক করা হয়েছিল এই বলে যে, তারা যেন কোনোভাবেই প্রকাশ্যে কোনো উদযাপন না করে বা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলে। একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল আরও দুই কিশোরের পরিবারকে। এই তিনটি পরিবারই জানিয়েছে, তারা 'প্রশাসনিক কারণে আটক'-এর বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরতে চায়।

ইসরাইল বলেছে, তাদের এই আইনের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সামরিক বিচার ব্যবস্থার সাবেক পরিচালক মরিস হিরশ বলেন, 'আটক হওয়া ফিলিস্তিনিদের আপিলের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতি ছয় মাস পর পর তাদের বন্দি দশার বিষয়টি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে ইসরাইল কেবল আন্তর্জাতিক আইনই মানছে- তা নয়, বরং সেটিকে ছাড়িয়েও গেছে।'

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইসরাইল যেভাবে আইনটির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আটক করছে, সেটি আসলে অপব্যবহারের পর্যায়ে চলে গেছে। এ ছাড়া আটক হওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ বা কার্যকরভাবে আপিল করার সুযোগ খুব একটা পায় না। কারণ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য যে ধরনের তথ্য-প্রমাণ দরকার হয়, সেটি সংগ্রহ করার অনুমতি তাদের নেই। হ্যামোকেডের নির্বাহী পরিচালক জেসিকা মন্টেল বলেন, 'আন্তর্জাতিক আইনের অধীন প্রশাসনিক কারণে আটক একটি বিরল ব্যতিক্রম হওয়া উচিত।' 'হ্যামোকেড' ইসরাইলের একটি মানবাধিকার সংস্থা, যারা আটক হওয়া ফিলিস্তিনিদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

জেসিকা বলেন, 'আপনার উচিত এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা, যখন আপনি চরম বিপদ থাকবেন এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা ছাড়া সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই। কিন্তু এটি স্পষ্ট, ইসরাইল একে সেভাবে ব্যবহার করছে না। তারা হাজার হাজার মানুষকে বিনা অভিযোগে আটক করছে এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনিক কারণে আটকের কথা বলছে।'

ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৫ সাল থেকেই প্রশাসনিক কারণে আটক আইনের ভুক্তভোগী। প্রথমে ব্রিটিশদের অধীন এবং পরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে। অতীতে আইনটি খুব বিরল কিছু ক্ষেত্রে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এখন এটি শিশুসহ পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের আটক করার ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রশাসনিক বন্দিদের শুনানির অনুমতি দেওয়া হয় সামরিক আদালতে, একজন ইসরাইলি সামরিক বিচারকের সামনে। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আটককৃত ব্যক্তি বা তাদের আইনজীবীদের কাছে আটকের সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না। এরপর আটক হওয়া ব্যক্তিদের ছয় মাস পর্যন্ত সাজা হতে পারে। তবে সামরিক আদালত চাইলে এই ছয় মাসের সাজা অনির্দিষ্টকালের জন্যও বাড়াতে পারে। অর্থাৎ এই আইনে বন্দি হওয়া ব্যক্তিরা ঠিক জানেনও না, তারা কতদিন বন্দি থাকবেন।

ইয়াজেন জানায়, 'আপনি যেটি বুঝতে পারবেন, সেটি হচ্ছে অনিশ্চয়তা। আপনি কি আপনার ছয় মাসের কারাভোগ শেষে মুক্তি পাবেন? নাকি আপনার সাজা এক বা বছরের জন্য বাড়ানো হবে?' বন্দিরা ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আপিল করতে পারে, কিন্তু তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণের কোনো অনুমতি নেই। ফলে ইসরাইলি সামরিক আদালতে বিচার হওয়া এমন ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মোটামুটি ৯৯ শতাংশই দোষী সাব্যস্ত হয়।

জেরুজালেম-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা আইনজীবী মাহের হান্না বলেন, 'সামরিক আদালতে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।' তিনি আরও বলেন, 'পুরো ব্যবস্থাটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যা একজন ফিলিস্তিনির আত্মরক্ষার ক্ষমতাকে সীমিত করে দিয়েছে। এটি প্রতিপক্ষকে একদিকে যেমন কঠোর সীমাবদ্ধতার মধ্যে ফেলে দেয়, তেমনি রাষ্ট্রপক্ষকেও প্রমাণ সংগ্রহ করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়।'

ইয়াজেনের মা সাদিয়াহ বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরাইলের এই নীতির ব্যবহার 'সব রেখা অতিক্রম করেছে- লাল, সবুজ, প্রতিটি রঙ।'

১৬ বছর বয়সি ওসামা মারমেশকেও একই আইনে আটক করা হয়েছিল। সে বলছিল, যখন তাকে আটক করা হয়েছিল, তখন তাকে রাস্তা থেকে টেনে-হিঁচড়ে একটি নম্বরবিহীন গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওসামাকে আটকের প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার বাবা নায়েফের কোনো ধারণাই ছিল না, তার ছেলে কোথায়? নায়েফ বলেন, 'আপনি আপনার পরিচিত সবাইকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করুন যে, তারা আপনার ছেলেকে দেখেছে কি-না। আপনার চোখে ঘুম নেই।' আটক হওয়ার সময় ওসামা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে বারবার জিজ্ঞাসা করেছিল। এর জবাবে তাকে প্রতিবারই 'চুপ' করতে বলা হয়েছিল।

অন্যদিকে ১৭ বছর বয়সি আরেক কিশোর মুসা অ্যালোরিদাতকে যখন আটক করা হয়েছিল, ইসরাইলি সেনারা তার অন্য দুই ছোট ভাইকে আলাদা করে ফেলে এবং ঘরে থাকা একটি ওয়ারড্রবে গুলি করে কাচ ভেঙে ফেলে। মুসার বাবা মুহান্নাদ বলেন, তিন দিন পর্যন্ত আমরা কিছুই জানতাম না।' বন্দি থাকা অবস্থায় ইয়াজেন, ওসামা, মুসা, তাদের বাবা-মা কিংবা আইনজীবী- কাউকেই আটকের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি।

তবে সাম্প্রতিক জিম্মি বিনিময়ের সময় ইসরাইলের পক্ষ থেকে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেখানে অভিযোগের বিবরণের কলামে ইয়াজেন, ওসামা ও মুসার নামের পাশে অস্পষ্টভাবে একটি লাইন লেখা ছিল। লাইনটি হচ্ছে : 'এলাকার নিরাপত্তার জন্য হুমকি'। তালিকার অন্য আরেকটি সংস্করণে অবশ্য বলা হয়েছে, ইয়াজেন ও মুসা ফিলিস্তিনি স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওসামাকে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন তাকে একটি সংক্ষিপ্ত চার্জশিট দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, দুই মাস আগে সে ইসরাইলি নিরাপত্তা অবস্থানকে লক্ষ্য করে 'তার হাতের তালুর অর্ধেক' আকারের একটি পাথর নিক্ষেপ করেছিল।

সামরিক বিচার ব্যবস্থার সাবেক পরিচালক মরিস হিরশ বলেন, অল্পকিছু তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্তে আসাটা ভুল হবে। তিনি বলেন, 'এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে খোলাখুলিভাবে প্রমাণ দেখানো এবং গোয়েন্দা তথ্য থাকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা গুয়ানতানামোতে আমেরিকানদের 'প্রশাসনিক কারণে আটক' আইন ব্যবহার করতে দেখি। তাই আমরা জানি, এই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গৃহীত। আর যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যবস্থা, কেন শুধু ইসরাইলকে এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা হবে, বিশেষ করে যখন আমরা সম্ভবত সর্বোচ্চ সন্ত্রাসী হুমকির মোকাবিলা করছি, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি?'

ইয়াজেন, ওসামা ও মুসাকে চার থেকে সাত মাস ইসরাইলি কারাগারে কাটাতে হয়েছে। তারা তিনজনই বলেছিল, গত ৭ অক্টোবরের আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। কিন্তু এরপর হামাসের হামলার শাস্তি হিসেবে তাদের বিছানার চাদর, কম্বল, জামা-কাপড় এবং খাবারের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গেও সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আটক হওয়া অন্য কয়েক জন ব্যক্তি আরও অভিযোগ তুলেছেন, ধরে নেওয়ার পর তাদের মারধর করা হয়েছে, টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়েছে, এমনকি তাদের ওপর কুকুরও লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইসরাইলি কারা কর্তৃপক্ষ অবশ্য এটা নিশ্চিত করেছে, হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা কারাগারগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন এবং সেখানে নিরাপত্তা বন্দিদের সুবিধা সীমিত করা হয়েছিল।

ইয়াজেন, ওসামা ও মুসা বেশ তাড়াতাড়িই মুক্তি পেয়েছে বলা চলে। কারণ ইসরাইলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে যারা নারী ও শিশু, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইলি কারাগারে এখনো দুই হাজার ৮৭৩ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন, যাদের প্রশাসনিক কারণে আটক করা হয়েছে।

কারামুক্তি পেয়ে বাড়ি ফেরার পর মুসা তার ঘরে গিয়েছিল, যেখানে চার মাস আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তাকে তার বিছানা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। বুলেটের আঘাতে ভেঙে যাওয়া ওয়ারড্রবের কাচ ততদিনে সারানো হয়েছে। তার বাবা-মা সাবধানেই ঘরটিকে আগের মতো গুছিয়ে রেখেছিলেন। যদিও মুসা বলছিল, আরও অনেক দিন তাকে কারাগারে থাকতে হবে বলে মনে করেছিল সে। তার আইনজীবীও তাকে বলেছিলেন যে, তার কারাভোগের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ।

ইয়াজেন, ওসামা ও মুসা- তিনজনই বলেছে, তারা স্কুল শেষ করার চেষ্টা করতে চায়। কিন্তু আবারও বন্দি হওয়ার হুমকির মধ্যে বেঁচে থাকাটা তাদের জন্য এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক আটক। ইয়াজেন বলে, 'ছোট কারাগার থেকে তারা আমাদের একটি বড় কারাগারে ছেড়ে দিয়েছে।' এই কথা শোনার পর ইয়াজেনের দিকে তাকিয়ে তার মা বলে ওঠে, কোনো শান্তি নেই। তারা যে কোনো সময় তোমাকে আবারও ধরে নিয়ে যেতে পারে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে