সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ইসরাইলি আগ্রাসন

গাজার সাধারণ মানুষের এখন লড়াই ক্ষুধার সঙ্গে

পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে গাধা জবাই করছেন অনেকে!
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
একমুঠো খাবারের জন্য শিশুদের লম্বা লাইন

টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা করে চলেছে ইসরাইল। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ওই ভূখন্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, গাজার লোকেরা রুটির জন্য ভিক্ষা করছেন। এমনকি পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়ে গাধার মাংস খাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স

চলমান সংঘাতের মধ্যে রুটির জন্য ভিক্ষা করা, একটি মটরশুঁটির কৌটার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি অর্থ প্রদান এবং পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য গাধা জবাই করার বর্ণনা দিয়েছেন গাজার লোকজন। ইসরাইলের অবিরাম হামলার কারণেই মূলত খাদ্য সহায়তার ট্রাকগুলো ফিলিস্তিনি এই ভূখন্ডের বেশিরভাগ অংশে পৌঁছতে পারছে না। আর এ কারণে সহায়তার গাড়িবহরের চলাচল এবং ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় ওসিএইচএ বলেছে, মিশরের সীমান্তের কাছে রাফাহ এলাকায় সীমিত সাহায্য বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে গাজার মোট ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক এখন বসবাস করছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, 'তীব্র সংঘাত এবং প্রধান সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজা উপত্যকার বাকি অংশে সাহায্য বিতরণ অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে।'

গাজা শহর থেকে বাস্তুচু্যত আবদেল-আজিজ মোহাম্মদ নামে ৫৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি বলেন, 'সাহায্য? কী সাহায্য? আমরা এটি সম্পর্কে শুনেছি, কিন্তু সেটি দেখতে পাচ্ছি না।' বাস্তুচু্যত হওয়ার পর আবদেল-আজিজ মোহাম্মদ ও তার পরিবার এবং অন্য তিনজনসহ মোট প্রায় ৩০ জন উপত্যকাটির আরও দক্ষিণে বসবাসকারী বন্ধুদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। টেলিফোনে তিনি বলেন, 'আমার একটি বড় বাড়ি, খাবার এবং মিনারেল ওয়াটারে ভরা দুটি ফ্রিজ ছিল। বাড়িতে বিদু্যৎ সুবিধা ছিল। এই যুদ্ধের দুই মাস পর এখন আমি কিছু রুটির জন্য ভিক্ষা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এটি ক্ষুধার যুদ্ধ। তারা (ইসরাইল) আমাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে, তারা আমাদের বাড়িঘর এবং ব্যবসা ধ্বংস করেছে এবং আমাদের আরও দক্ষিণে নিয়ে গেছে, যেখানে আমরা হয় তাদের বোমার আঘাতে বা আর না হয় ক্ষুধায় মারা যেতে পারি।'

ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা 'ইউএনআরডবিস্নউএ'র প্রধান বলেছেন, ক্ষুধার্ত লোকজন খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং সরাসরি তা খেয়ে ফেলার জন্য তাদের সাহায্যবাহী ট্রাক থামিয়ে দিচ্ছে।

গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রথম পর্বে উত্তর গাজা অঞ্চলটি ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণের মুখে পড়েছিল। তবে ২৪ নভেম্বর গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর সাত দিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও সেখানে আবারও তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে খুব কমই সাহায্য পেয়েছে সেখানকার মানুষ।

উত্তর গাজার জাবালিয়ার সাংবাদিক ইউসুফ ফারেস বলছেন, ময়দার মতো প্রধান জিনিস পাওয়া এখন এতটাই কঠিন যে, যুদ্ধের আগের তুলনায় এর দাম ৫০-১০০ গুণ বেড়ে গেছে। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'আজ সকালে আমি একটি রুটির সন্ধানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি খুঁজে পাইনি। বাজারে যা অবশিষ্ট আছে, তা হলো- শিশুদের জন্য মিছরি ও শিমের কিছু ক্যান। যার দামও বেড়েছে ৫০ গুণ।' তিনি বলেন, 'আমি এমন একজনকে দেখেছি, যে তার পরিবারের কয়েকশ সদস্যকে খাওয়ানোর জন্য একটি গাধা জবাই করেছে।'

ত্রাণবাহী সব ট্রাক মিশরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করছে, তবে গাজায় প্রবেশের আগে সেগুলো প্রথমে পরিদর্শন করছে ইসরাইল। গত ২০ অক্টোবর সহায়তা সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে অবস্থিত নিতজানা ক্রসিংয়ে ট্রাকগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। এর ফলে কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে ইসরাইল অন্য একটি স্থানেও অতিরিক্ত পরিদর্শন শুরু করেছে। আর তা হচ্ছে, ইসরাইল ও গাজার মধ্যে অবস্থিত কেরেম শালোম ক্রসিং। সাহায্যকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধাগুলো কমাতে হবে।

জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেরেম শালোমের মাধ্যমে ট্রাক চলাচলের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান অবস্থার উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে পারে ইসরাইল। কিন্তু সেটা তারা করছে না।

উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে টানা আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলি এই আগ্রাসনের নিহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে