শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

অতি প্রযুক্তিতে কর্মহীনতা

রিপন চন্দ্র পাল শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির যুগ চলছে, এতে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও নানা প্রযুক্তিতে এগিয়ে চলছে। যেহেতু সালটা ২০২১ তাই সর্বত্রই প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে আইটি ব্যবস্থা মোটামুটি উন্নতই বলা চলে। শুধু অফিস না মাঠপর্যায়ের কাজেও প্রযুক্তির বালাই দেখা যায়। এর সুবিধাভোগ করছে একদম প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সব রকমের মানুষ। বর্তমান সরকার ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করে। তারই ফলস্বরূপ আজকে কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাটের কাজসহ হরেকরকম উন্নয়নমূলক কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু এতসব প্রযুক্তির মধ্যে একটা জিনিস ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে- আর তা হলো কর্মসংস্থান। যেখানে প্রযুক্তি চলে আসে সেখানে অনেকগুলো মানুষের কাজ ওই প্রযুক্তি মানুষের চেয়ে নিখুঁতভাবে করে ফেলতে পারে। পরবর্তীতে দেখা যায় অনেকে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে কাজ হারিয়ে ফেলছে আবার কেউ কেউ অন্য কাজে মনোনিবেশ করছে। তবে যারা কোনোকিছুই পারছে না আর একদম কাজ হারিয়ে ফেলছে তাদের কী হবে? উদাহরণ দিয়ে বলি, যেমন আগে রাস্তা-ঘাটের কাজ, বেড়িবাঁধ, মাটিকাটাসহ এসব মানুষ মিলে করত কিন্তু এখন এক্সকেভেটর মেশিন আসার কারণে ওসব কাজ দ্রম্নততম সময়ে ও নিখুঁতভাবে করে ফেলে। ফলে ওসব মানুষ সে কাজগুলো না পেয়ে দিনাতিপাত করছে। আবার, আগে বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় নানা এলাকা থেকে মানুষ এসে ধান কাটত কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি আসার কারণে ওই মৌসুমে সেসব মানুষ দিনাতিপাত করছে। সহজেই অনুমেয় যে আগামীতে যতবেশি প্রযুক্তি আসবে ততবেশি কর্মসংস্থান হারাবে মানুষ- মানুষের জায়গায় স্থান করে নিবে প্রযুক্তি তথা মেশিন। যারা উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম হবে তারাই প্রযুক্তির যুগে টিকে থাকতে পারবে। অফিসের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বর্তমানের নানা অফিসে এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যাতে লোকবলের সংখ্যা কম থাকে। একেকটা কম্পিউটারাইজড প্রোগ্রাম অনেক মানুষের কাজ করে ফেলে। ফলস্বরূপ ওসব অফিসে কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে।

এ তো গেল শ্রমিকদের কথা, এবার যারা পড়ালেখা করেছে তাদের কর্মহীনতার পরিসংখ্যান দেখি- লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অর্থাৎ প্রতি দুজনে একজন বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্যমতে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ আর আইএলও (ওখঙ)-এর মতে, বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। এখনই যদি আমরা ডিজিটাল দুনিয়ার সাথে তাল মেলাতে না পারি তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। তাই যারা যারা প্রযুক্তির এ যুগে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন তাদের একটা জরিপ করে যদি অন্য কাজের জন্য উপযোগী করার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ওসব করা, একদম প্রান্তিক পর্যায় থেকে যুগোপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার না করলে চলে সেখানে মানুষেরই ব্যবহার করা, প্রতিনিয়ত কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা, ভোকেশনাল কোর্স চালু করা, যেসব শ্রমিক যেখানে কাজ করে সেখানে তাদের সংগঠন সৃষ্টি করার পরিবেশ করা যাতে তারা তাদের সুবিধা-অসুবিধা যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে পারে, সর্বত্র লিঙ্গবৈষম্য দূর করে সমান হারে মজুরি, শিশুশ্রম হ্রাস, যারা নির্ধারিত কাজে পারদর্শী তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া ও ভালো কাজ করলে পুরস্কৃত করা এবং একান্তই যারা কাজ বদল করে খাপ-খাওয়াতে পারেনি তাদের সরকার কর্তৃক আর্থিক সহায়তা ইত্যাদি। এছাড়া আরও নানাভাবে একজন মানুষকে দক্ষ করে তোলা যায়। তবে কথা একটাই যে করেই হোক দক্ষ করে তুলতেই হবে। একইভাবে সব অফিসে এমনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে যাতে মানুষের কাজের সুযোগ কমে না যায় বা একদিকে কমলে অন্যদিকে যাতে বাড়ানো হয়। আবার প্রযুক্তির বদলে মানুষ কাজ করলে যাতে ফাঁকি দিতে না পারে তারও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আশা করি চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের আগে আমাদের সরকার দেশের সব মানুষকে দক্ষ করে তুলবে আর না হলে খুব শিগগিইে আমরা একটা কালো অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছি। তাছাড়া সরকারের 'বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬' আরও কার্যকর ও বেগবান করা এবং দ্রততম সময়ে এসডিজি অর্জন করা। দিনশেষে আমাদের জাতির যদি খুব ভালো নৈতিকতা থাকত তাহলে হয়তো আজকের দিনটা অন্যরকম হতো। কারণ যতসব প্রযুক্তি আসে সব উন্নত দেশের আর তাদের জনগণ খুব কম। ওসব দেশ কম মানুষ খাটিয়ে বেশি ফল পেতে চায় কিন্তু আমাদের চালচিত্র যে উল্টো! আমাদের বিশাল জনসংখ্যা, কাজ কমে গেলে এতসব মানুষ দিনাতিপাত করবে!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে