শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে

বার্ড ফ্লু আতঙ্ক

নতুনধারা
  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রতিদিনই অগণিত মানুষের মৃতু্য হচ্ছে। বিশ্ব যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি দেশেও করোনায় সংক্রমণ ও মৃতু্য থেমে নেই। আর এর মধ্যেই যখন নতুন আতঙ্ক 'বার্ড ফ্লু' আলোচনায় আসছে, তখন তা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (বার্ড ফ্লু) ধরা পড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এই বার্ড ফ্লু। শীতের সময়টায় বার্ড ফ্লু'র জীবাণু পশু-পাখির মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন বলেই আমরা মনে করি।

উলেস্নখ্য, দেশের মানুষের প্রায় ৩৬ শতাংশ প্রোটিন আসে পোলট্রি খাত থেকে। প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার এই শিল্প বর্তমানে ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় বার্ড ফ্লু রোগের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি ও পাখি জাতীয় প্রাণী যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, বুধবার এই রোগের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়কে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে যাতে এই হাঁস-মুরগি এবং পাখি জাতীয় প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, যখন বার্ড ফ্লু আতঙ্কের বিষয়টি সামনে আসছে এবং বাংলাদেশেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের পর দেশের কোথাও বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১) ভাইরাস আক্রমণের খবর মেলেনি। সাভারে বাংলাদেশ বিমানের হ্যাচারিতে ২০০৭ সালের ২২ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (বার্ড ফ্লু) ধরা পড়ে। এরপর জামালপুর ও গাজীপুরে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকদিনের মধ্যে বার্ড ফ্লু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন এই সেক্টরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আক্রান্ত মুরগি ধ্বংস করা হয়েছে। বার্ড ফ্লু আক্রান্তের আগে খামারের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার। বার্ড ফ্লু'র পরে হাজার হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছিল বহু মানুষ। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। ২০০৭ সালে পাখির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় বলেও আশঙ্কা করা হয়।

সঙ্গত কারণেই আবার যখন বার্ড ফ্লু আলোচনায় আসছে, তখন বিষয়টিকে এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতে বার্ড ফ্লু ধরা পড়েছে- এটি আমলে নিতে হবে এবং যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নেও কাজ করতে হবে। এছাড়া, দেশের সীমান্তবর্তী জেলাসহ অন্যান্য জেলায় প্রতিদিন বার্ড ফ্লু রোগের অনুসন্ধান এবং সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি-বেসরকারি খামারে নিবিড় তত্ত্বাবধানের জন্য চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোনো মৃত বা সন্দেহজনক হাঁস-মুরগি বা পাখি পাওয়া গেলে নমুনা সংগ্রহ করে দ্রম্নত নিকটবর্তী ল্যাব হতে পরীক্ষা করে ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং জেলা ও উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল ও গবেষণাগারে পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষার কিট ও পিপিই জরুরিভিত্তিতে সরবরাহ, খামারে জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষক ও খামারিদের সতর্ককরণে ব্যাপক প্রচারণা চালানো, বার্ড ফ্লু প্রতিরোধকল্পে এর টিকার বর্তমান মজুদ যাচাই করে দ্রম্নত টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়, যার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার যে আশঙ্কা রয়েছে, তা আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ জারি থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে