শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

৩ লাখ পোশাককর্মী বেকার

নতুনধারা
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

করোনার প্রভাবে সারা বিশ্বই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে টিকা প্রদান, বাংলাদেশেও টিকা চলে এসেছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও সংক্রমণে মৃতু্য থেমে নেই। এছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিভিন্ন খাতে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। দেশেও করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই নিম্নআয়ের বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। ক্রমে ক্রমে বেকার হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদেরও অনেকে এমনটিও আলোচনায় এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পেও করোনার প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে দেশের সাড়ে ৩ লাখ পোশাকশ্রমিক কাজ হারিয়েছে। এমন দাবি করেছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, এ সংখ্যা এই খাতের মোট শ্রমিকের ১৪ শতাংশ।

তথ্য মতে, শনিবার সিপিডি এবং ব্র্যাকের ম্যাপড ইন বাংলাদেশ প্রকল্প যৌথভাবে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় একটি জরিপে পাওয়া এ তথ্য তুলে ধরা হয়। জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংকট শুরুর সাত মাস পর গত অক্টোবরে জরিপ পরিচালনা করে শ্রমিকদের বেকারত্বের এ চিত্র পায় সিপিডি। এছাড়া এমন তথ্য উঠে এসেছে, এ সময়ে ২৩২টি বা ৭ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়েছে। লে অফ ঘোষণা করেছে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ কারখানা। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানার মধ্যে ৭০ শতাংশ তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পেরেছে। আর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের আরও যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা, তা দিতে পেরেছে মাত্র ৪ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জের বড় কারখানাগুলোতে এ সমস্যা দেখা গেছে বলে জানা যাচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, করোনা ভয়াবহতায় বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে নানাভাবেই। এখন পোশাক খাতে শ্রমিকদের কাজ হারানোসহ যেসব তথ্য উঠে আসছে তা আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একই সঙ্গে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও দেশকে এগিয়ে নিতে পোশাক খাতের অবদান ব্যাপক। এখন এ খাতে ৩ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে গেলে এমন বিষয় এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানার উদ্যোক্তাদের কীভাবে আবার ব্যবসায় ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সরকারের নজর আশা করছে সিপিডি এমনটিও জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বলা দরকার, সিপিডির গবেষণা পরিচালক জানিয়েছেন, মহামারিতে বন্ধের পর কারখানা আবার খুললেও ৬০ শতাংশ কারখানায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শুরুতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা পরিমাপের উদ্যোগ নিলেও ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়টি উদ্বেগজনক। সিপিডির জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ শতাংশ কারখানা এখন মহামারি প্রতিরোধে কোনো ধরনের নিয়ম মানছে না। এ সংখ্যা আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, সেখান থেকে ঋণ পেতে ৫২ শতাংশ কারখানা আবেদনই করেনি বলে সিপিডির জরিপে উঠে এসেছে। একদিকে ৩৩ শতাংশ কারখানা ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করেনি। অন্যদিকে ছোট একটি অংশ বলেছে, ঋণ পরিশোধে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারার শঙ্কায় তারা আবেদন করেনি। ফলে সার্বিক এ পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন খাতের মতো পোশাক খাতেও নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সৃষ্ট অবস্থাকে মোকাবিলা করতে উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের বিষয়টি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি বন্ধ হওয়া কারখানার বিষয়সহ করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের অগ্রগতি কীভাবে ধরে রাখা যায় সেটি আমলে নিতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ যে বিষয়গুলো উঠে আসছে তার পরিপ্রেক্ষিতেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যে কোনো সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে