শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার ভয়াবহ বিস্তার

কার্যকর পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ১২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

দেশে লাগামহীন বেড়ে চলা মহামারি করোনা সংক্রমণ একের পর এক পুরনো রেকর্ড ভাঙছে- সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা এড়ানো যাবে না। বলা দরকার, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দেশে করোনায় ৬ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৯ হাজার ৬শ'র বেশি মানুষ। আমরা বলতে চাই, যখন করোনাভাইরাস দেশে প্রথম আক্রমণের সময় মানুষ যে পরিমাণ আক্রান্ত হয়েছিল, দ্বিতীয় আক্রমণে তার থেকেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এই ভাইরাস- তখন এই বিষয়টি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। কেননা, সংক্রমণ বাড়লেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা কমেছে- এই বিষয়টিও সামনে এসেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগের।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ৮ মার্চ প্রথম মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করে সরকার। এ বছর ৩১ মার্চ তা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার একদিনে ৭৪ জনের মৃতু্যর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর- যা ছিল সর্বোচ্চ। কিন্তু শনিবার সেই রেকর্ড ভেঙে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে ৭৭ জন হয়। উলেস্নখ্য, কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশনা থেকে বোঝা যায়। যার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। এ বছর ফেব্রম্নয়ারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পরে গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।

এটাও বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে যত দিন যাচ্ছে দেশে করোনার থাবা যেন ততই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। আর এই পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বাড়ায় দ্বিতীয় দফায় সারাদেশে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু লকডাউন দিলেও সচেতনতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে এমনটিও জানা যায়। এটা আমলে নেওয়া দরকার, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রাণঘাতী করোনায় ২১ হাজার ৬২৯ শনাক্ত রোগীর মধ্যে ৫৬৮ জনের মৃতু্য হয়। ফেব্রম্নয়ারিতে শনাক্ত কিছুটা কমে ১১ হাজার ৭৭ এবং ২৮১ জনের মৃতু্য হয়। মার্চে আবার লাগামহীনভাবে বেড়ে যায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ। সদ্য শেষ হওয়া মাসে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৬৫ হাজার ৬৯ এবং মারা যান ৬৩৮ জন। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংকট নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিশেষ করে জনসচেতনতার বিষয়টি অগ্রগণ্য। যা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

১৪ তারিখ থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়টিও আলোচনায় আসছে। সঙ্গত কারণেই এটাও আমলে নিতে হবে যে, এর আগে জানা গিয়েছিল দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃতু্যর হার ভয়াবহভাবে বাড়লেও জীবন নিয়ে যত মানুষ উদ্বিগ্ন, এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ জীবিকা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। বিশেষ করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ- যাদের আয়-উপার্জন দৈনন্দিন কর্মের ওপর নির্ভরশীল; তারা জীবিকা নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ফলে এই বাস্তবতাকে এড়ানো যাবে না। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেড, চিকিৎসক, সহায়ক জনবল ও সেবা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে এমন বিষয়ও খবরে উঠে এসেছিল। ফলে এই বিষয়গুলো সামনে রেখে সমাধানে কাজ করতে হবে। বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণে কোনো ধরনের ছাড় দিলে তা বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে- যা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতি আমলে নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। করোনার এই ভয়াবহ সময়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের মতামতগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করাসহ সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে