শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

থামছে না মানব পাচার

সঠিক পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক দিনে সাতশজনের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। লিবিয়ার উপকূল থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। বেসরকারি সংস্থা ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স পরিচালিত জাহাজ 'গেও বারেন্টস' এবং ইতালির 'মারে ইয়োনিও' তাদের উদ্ধার করে। শুক্রবার সকালে সাগরে পরিচালিত এক অভিযানে নৌকায় বিপদগ্রস্ত অবস্থায় ভাসতে থাকা মোট একশ' সাতজন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে জাহাজটি। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১৪ জন নারী রয়েছেন।

অনেক দিন থেকেই সাগরপথে মানব পাচার হচ্ছে। মানব পাচার হচ্ছে নানাভাবে। এখন মানব পাচারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। প্রায়ই তারা ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে। এর একাংশ সাগরে ডুবে প্রাণও হারাচ্ছে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। এরপরও যে মানব পাচার থেমে নেই।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মানব পাচার মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি জঘন্য রূপ। এটি বিশ্বের সর্বত্র ঘটে এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মানব পাচার আধুনিক দাসপ্রথার একটি নতুন ধারা। শুধু আইন দিয়ে এ অপরাধ দমন বা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এটা সত্য, বর্তমানে মানব পাচার সংগঠিত অপরাধের একটি প্রধান রূপ হয়ে উঠেছে এবং তা সমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মানব পাচারের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।

যারা মানব পাচারের শিকার, তারা মনে করেন, কোনোভাবে একবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় যেতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান। মাসে কমপক্ষে লাখ টাকা উপার্জন করা যাবে এমন মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে সাগর পথে বিদেশে পাড়ি জামাতে প্রাণান্ত হয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন লোকজন। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর এই মানব পাচারকারীদের মূল লক্ষ্য এখন দেশের বেকার তরুণরা। দেশের সাধারণ মানুষ এর ভয়াবহ শিকার। উন্নত জীবনের আশায় সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা। দালালরা তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফাঁদে ফেলছে। মানব পাচার রোধ করা না গেলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। পাশাপাশি নারী ও শিশু পাচারও বাড়ছে। অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচলে সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পড়া, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিবাহ এবং দাসত্বের মতো শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী ও পুরুষ এবং শিশুরাই মানব পাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। কাজেই কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে সীমান্তের সক্ষমতা বাড়িয়ে, মানব পাচার বন্ধ করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে