শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কার্যকর উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ১৮ মে ২০২২, ০০:০০

টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য মতে, সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই, কংশ, ধনু, বাউলাই, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এসব নদীর পানি বৃদ্ধি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আমলে নেওয়া জরুরি যে, বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানিও অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান প্রধান নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে এটাও লক্ষণীয় যে, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল। নদনদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বসতবাড়িতে পানি উঠে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষ। পানি বেড়ে কোথাও কোথাও সড়কের কিছু অংশ ডুবে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। টানা বর্ষণে ধসে গেছে হবিগঞ্জ উপজেলার ইছালিয়া সড়কের নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশে ওয়াল গাইডের খুঁটি ও রাস্তার অ্যাপ্রোচ। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ও নিম্নমানের কাজে উদ্বোধনের আগেই এই ব্রিজের ওয়াল গাইডের খুঁটি ও রাস্তার অ্যাপ্রোচ ধসে গেছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। এছাড়া কালীগঞ্জ, গাজীপুর উপজেলায় জোয়ারের পানিতে কোথাও কোথাও ডুবে গেছে ধানিজমি। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে পানি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি হঠাৎ করে পানি দ্রম্নত বেড়ে যাওয়ায় ধানকাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে মানুষের দুর্ভোগ ও বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে- যা আমলে নেওয়া জরুরি।

উলেস্নখ্য, যখন করোনার সংক্রমণ কমে এসে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে, এমতাবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া বিভিন্ন সময়ের বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে তা অজানা নয়। পানিবন্দি মানুষ কেউ পাশের নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, কেউ আবার রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। কেউ ঘরে খাট চৌকি দিয়ে মাচাং বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। বন্যায় নানা ধরনের ফসল ডুবে যায়। শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকটের বিষয়টিও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। ফলে এখন যখন আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি উঠে আসছে, তখন সব ধরনের বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়া, এর আগে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কার ভেতর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবরও জানা গিয়েছিল। দেখা যায়, ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হয়। অথচ ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই- এমন মত বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, বিষয়টি আমলে নিয়েও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে যেমন কাজ করতে হবে, তেমনি ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। ফলে মনে রাখা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। যখন বন্যা পরিস্থিতিরি অবনতির বিষয়টি সামনে আসছে, তখন মানুষের দুর্ভোগ ও সার্বিক অবস্থা আমলে নিয়ে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে