শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দূষণে মৃতু্য রোধ করতে হবে

নতুনধারা
  ২০ মে ২০২২, ০০:০০

বিভিন্ন দূষণের শিকার হয়ে পৃথিবীব্যাপী মানুষের মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বায়ুদূষণ ও বিষাক্ত বর্জ্যের দূষণের কারণে সামগ্রিকভাবে দূষিত হয় পরিবেশ। আর এই পরিবেশ দূষণের কারণেই প্রতি বছর মারা যাচ্ছে আনুমানিক ৯০ লাখ মানুষ। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর কেবল দূষণের কারণেই এত বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। বৈশ্বিক মৃতু্যহার ও দূষণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে করা গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শিল্প খাতের উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণের ফলে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত কারণে মৃতু্য বেড়েছে ৭ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তন, ম্যালেরিয়া কিংবা এইচআইভির মতো পরিবেশ দূষণকেও খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজনের মৃতু্য হয়ে থাকে দূষণের কারণে। অথচ করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৭ লাখ মানুষ। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দূষণে সবচেয়ে বেশি মৃতু্য হয়েছে এমন শীর্ষ ১০টি দেশের বেশির ভাগই আফ্রিকা মহাদেশের। ক্রম অনুযায়ী দেশগুলো হচ্ছে- চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, নাইজার, সোলোমন আইল্যান্ড, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর কোরিয়া, লেসোথো, বুলগেরিয়া এবং বুরকিনা ফাসো।

অবাক ব্যাপার, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে বাংলাদেশ। ফলে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন এবং নানান রোগে ভুগছেন। গড় দূষণ সর্বোচ্চ থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ দূষিত দেশের শীর্ষে রয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখনো গড়ে সবচেয়ে বেশি দূষিত দেশ।

বায়ুদূষণ মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বায়ুদূষণের ফলে একদিকে পরিবেশ যেমন বিনষ্ট হয় তেমনি প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যায়। বায়ুদূষণ থেকে রক্ষার জন্য অনেকেই মাক্স ব্যবহার করে থাকেন। মূলত বায়ুদূষণ রোধ করতে হবে। বায়ুদূষণের ফলে মানব দেহে জন্ম নেয় অনিরাময়যোগ্য নানা রোগ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ুদুষণের ফলে মানুষের শ্বাসযন্ত্র, হৃদরোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হয়। এ ছাড়া বায়ুদূষণ মাতৃগর্ভে ভ্রূণের ক্ষতিসাধনসহ শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ব্যাহত করে।

মনে রাখতে হবে, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, মিলকারখানা ইটভাটার কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণ এর প্রধান নিয়ামক। কীভাবে এ সব বন্ধ করা যায় এবং মানুষ মুক্ত বায়ু সেবন করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। অনেক সময় ধুলো নোংরা আবর্জনাও বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যদি এদিকে বিশেষ মনোযোগী না হয় তা হলে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্বব্যাপী যারা বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রাষ্ট্রের উদাসীনতা জনস্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। একুশ শতকে বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া যায় তা হলে ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের বিপদ হিসেবে দেখা দেবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে