সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কাঠবাদাম গাছ

নতুনধারা
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৃত প্রায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কাঠবাদাম গাছটি। জমিদার বাড়ির শানবাঁধা পুকুরের দক্ষিণ পাশে মধু কবির স্মৃতিবিজড়িত এ কাঠবাদাম গাছ। কবি ছোটবেলায় এ গাছের নিচে বসে কবিতা রচনা করতেন। ধারণা করা হয় প্রায় ৩০৫ বছর বয়সি কাঠবাদাম গাছটি কবির স্মৃতিচারণ করে আসছে। খুলনা বিভাগের মধ্যে এটিই সব থেকে বয়স্ক কাঠবাদাম গাছ। এ বাদামতলায় কবি শৈশবে কবিতা লেখা ছাড়াও ১৪ দিন অবস্থান করেছেন। আর এ কারণে জায়গাটি কাঠবাদাম ঘাট নামে পরিচিত। যতটুকু জানা যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্তের পরিবারের লোকজন কাঠবাদামতলা ঘাটে স্নান করতেন। মাত্র ১২-১৩ বছর বয়সি মধুসূদন দত্তকে তার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত শিক্ষাদানের জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। কবি মধুসূদন দত্ত তার পিতার ইচ্ছায় ১৮৩২ খ্রি. কলকাতা গমন করেন। সেখানে কবি খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার পর বজরায় করে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে কাঠবাদামতলায় বজরা ভেড়ান। ধর্ম ত্যাগের কারণে তার জমিদার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত কবিকে বাড়িতে উঠতে দেননি। এই কারণে কবি ১৪ দিন এই কাঠবাদাম গাছের নিচে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করেন। ১৪ দিন অবস্থান করার পরও তার পিতা যখন সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন তখন কবি কাঠবাদামতলা থেকে প্রায় ৪০০ গজ উত্তরে হেঁটে গিয়ে বজরায় উঠে কলকাতার উদ্দেশে পাড়ি দেন। এ কারণে ওই ঘাটকে 'বিদায় ঘাট' নামে পরিচিতি লাভ করে। 'বিদায় ঘাট' কবিতাটি কপোতাক্ষ নদের তীরে শ্বেতপাথরে খোদাই করে স্মৃতিফলক করে রেখেছে কবির স্মৃতিরক্ষা আয়োজকরা। কবির স্মৃতিবিজড়িত কাঠবাদাম গাছ ও 'বিদায় ঘাট' পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হয়ে আছে। কবির ভিটাবাড়িতে আসা দর্শনার্থী অনেকেই কাঠবাদাম পেড়ে খায় আবার তলা থেকে কুড়িয়ে খাওয়া ছাড়াও স্মৃতি হিসেবে কাঠবাদাম গাছের বড় বড় লাল পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে আবার দেখা যায় মধুপ্রেমিক দর্শনার্থী, পর্যটক, পিকনিক পার্টির লোকজন কাঠবাদাম গাছের নিচে ক্লান্তিনাশে বিশ্রাম নেয়। এখন কাঠবাদাম গাছটি বয়সের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না বলে ক্রমান্বয়ে তার বড় বড় ডালগুলো মূল শরীর থেকে ভেঙে পড়ছে। কালজয়ী কবি নেই, কপোতাক্ষ নদের জোয়ার-ভাটা নেই, 'কপোতাক্ষ নদ' কবিতার সেই মর্মকথা নেই, যে কারণে পলি জমে মরতে বসেছে নদ। তবুও মহাকবির স্মৃতি আঁকড়ে যুগ যুগ ধরে টিকে আছে কাঠবাদাম গাছটি। কবির এ স্মৃতি অম্স্নান করে রাখতে ১৯৪৪ সালে যশোর জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ কাঠবাদাম গাছের পোড়া ইট দিয়ে গেঁথে পস্নাস্টার করে দেয়। এখন গাছটির দিকে তাকিয়ে অনেক দর্শনার্থী যত্নের অভাব আছে বলে মনে করেন। তবে মন্তব্য পাওয়া যায়, যদি কৃষি অধিদপ্তর বা বন বিভাগ কাঠবাদাম গাছের ইটের গাঁথনি খুলে গাছের গোড়া পরিচর্যা করেন তবেই গাছটি আরও কয়েক যুগ বেঁচে থাকতে পারে। প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মোৎসব উপলক্ষে 'মধু মেলা'র আলোচনায় অনেক আলোচক কাঠবাদাম গাছটি সংস্কারসহ রক্ষণাবেক্ষণের দাবি তোলেন। ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধু মেলার আলোচনা সভায় কবি ও সাংবাদিক হোসাইন নজরুল হক, কবি ও গবেষক সফিয়ার রহমান কাঠবাদাম গাছটি রক্ষণাবেক্ষণের জোরালো দাবি উপস্থাপন করেন। তবে এর ফলপ্রসূ কতটুকু জানি না, শুধু এটুকু জ্ঞাত হয় যে, ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ অধিদপ্তরের এআইজি মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান মধুপলস্নী ও কপোতাক্ষ নদের পাড় পরিদর্শনকালে কাঠবাদাম গাছটি মৃতপ্রায় দেখে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন এবং তারই নির্দেশে ২৭ অক্টোবর বিকেলে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দীন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক পিন্টু লাল দাসসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কবির স্মৃতিরক্ষার্থে আরও দুটি কাঠবাদাম গাছের চারা রোপণ করেন। এরপর ২ নভেম্বর দুপুরে গাছের চারা দু'টি পরিচর্যাও করেন এ পুলিশ কর্মকর্তারা। টু্যরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন রায় স্বাক্ষরিত ২০১৮ সালের ১০ জুন তারিখে কালজয়ী মহাকবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়ির পর্যটন দৃষ্টিনন্দন, কবির আধুনিক ভাস্কর্য, সমাধিলিপি প্রতিস্থাপন, অনশনরত স্থল, কাঠবাদাম গাছের শ্রীবৃদ্ধি ও বিখ্যাত কবিতা অবলম্বনে টেরাকোটা দিয়ে কাহিনী চিত্র, ওয়াল ও ওয়াস বস্নক নির্মাণে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সমুদয় টাকা ফেরত যায় বলেও মন্তব্য পাওয়া যায়। আবার সংস্কারের বরাদ্দসহ মহাকবির ভিটা-বাড়ি, বিদায় ঘাটসহ কবির স্মৃতিবিজড়িত কাঠবাদাম গাছ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা করে রাখার জোর দাবি তোলেন মধুপ্রেমী দর্শনার্থীসহ 'মধু মেলা'র আলোচকরা।

শফিক শিমু

আইসিটি সম্পাদক

মণিরামপুর প্রেস ক্লাব

মণিরামপুর, যশোর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে