সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাবারের খরচ বেড়েছে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি পেলে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। আর যদি এমন হয় যে, খাবারের পেছনেই আয়ের বড় অংশ চলে যাচ্ছে- তবে কতটা উৎকণ্ঠাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, তা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এই হিসাব গত ফেব্রম্নয়ারি মাসের। এছাড়া যখন এটি সামনে আসছে যে, এক বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ- তখন সামগ্রিক বিষয় আমলে নেওয়া জরুরি বলেই আমরা মনে করি।

উলেস্নখ্য, সোমবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট প্রস্তাববিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে খাবারের খরচ বৃদ্ধির এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তথ্য মতে, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, হলুদ, আদা, রসুনসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের প্রতিদিনের বাজারদর এবং একজন মানুষ গড়ে কী পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে এর ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করেছে তারা। সিপিডি বলছে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়। আমরা বলতে চাই, যদি একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মোট আয়ের ৬০ শতাংশই খাবারের পেছনে খরচ হয়ে যায়, তবে জীবনযাপনের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন হতে পারে সেটি অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন।

আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার যে, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত এবং পারলে এই ঈদেই বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে- এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই সব খাতের নূ্যনতম মজুরি বাড়ানো উচিত। এছাড়া এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে নূ্যনতম করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার সুপারিশও করেছে সিপিডি। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, কয়েক মাস ধরেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চাল, ডাল, তেলের পাশাপাশি মাছ-মাংস, ডিমের দামও বেশ চড়া। এছাড়া মাছ-মাংসের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের খাবারের পাত থেকে মাছ-মাংস উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এটাও লক্ষণীয়, পবিত্র রমজান মাসেও বাজার স্থিতিশীল হয়নি। রমজান মাসের চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজসহ অন্য নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে জানা গেলেও, রোজা শুরুর পর বাজারে পণ্যমূল্যের আগুনের আঁচ এতটুকুও কমেনি। বরং কোনো কোনো পণ্যে এ উত্তাপ আরও বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এর নেপথ্যে সংঘবদ্ধ বাজার সিন্ডিকেটের নানামুখী কারসাজির প্রমাণ মিলেছে- বলেও পত্রপত্রিকার খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, যখন খাবারের পেছনের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে রমজান মাসেও বাজার স্থিতিশীল নয়, তখন পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক তা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না।

সর্বোপরি বলতে চাই, বেশির ভাগ মানুষ অভাব অনটনকে মোকাবিলা করে জীবনযাপন করে। আর এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, জীবনযাপনের নানা ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে। ফলে শুধু যদি খাবারের পেছনেই একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খরচ করতে হয়- তখন এর প্রভাব কীরূপ হতে পারে সেটিও আমলে নিতে হবে। সিপিডি সূত্রে যখন এটা সামনে আসছে যে, এক বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে