সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয়ণ প্রকল্প একটি কল্যাণমুখী পদক্ষেপ

আশ্রয়ণ প্রকল্প বর্তমান সরকারের একটি কল্যাণমুখী পদক্ষেপ। যেসব এলাকায় সরকারি খাস জমি পাওয়া যায়নি সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জমি কিনে বাড়ি করে দেওয়ার ব্যতিক্রমী নজির গড়েছে সরকার।
দয়াল কুমার বড়ুয়া
  ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

সরকারের নেওয়া অনেক শুভ উদ্যোগের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত। ২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশের একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। তার এই ঘোষণার পর সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী 'মুজিববর্ষে' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পায় দুর্যোগসহনীয় সেমিপাকা ঘর, আর দুই শতাংশ জমির মালিকানা। এর আগে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তিন দফায় দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় চতুর্থ দফায় দেশের বিভিন্ন উপজেলার ৩৯ হাজার ৩৬৫ পরিবারকে ভূমি ও ঘর তুলে দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে তার সরকার। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ে বুধবার আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের বাড়ি প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে দেশের ২১১টি উপজেলা পুরোপুরি ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মুখ্য সচিব প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড় ও মাগুরাসহ এই ৯ জেলার সব উপজেলা এবং সারাদেশের ১৫৯ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হচ্ছে। চতুর্থ পর্যায়েও বিশেষ এলাকার জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এবার চরাঞ্চলের জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর আছে এক হাজার ৩৭৩টি এবং পার্বত্য এলাকার জন্য মাচাং ঘর আছে ৬৩৪টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট সাত লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবারপ্রতি পাঁচজন হিসাবে এই কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।

আশ্রয়ণ প্রকল্প বর্তমান সরকারের একটি কল্যাণমুখী পদক্ষেপ। যেসব এলাকায় সরকারি খাস জমি পাওয়া যায়নি সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জমি কিনে বাড়ি করে দেওয়ার ব্যতিক্রমী নজির গড়েছে সরকার।

২০৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সারাদেশে ৩০৬.৩৭ একর জমি কিনে সেই জমিতে ১৩ হাজার ১৬৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকারের কল্যাণকামী ভাবমূর্তি একটি বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। সব মহল থেকেই এই প্রকল্পের প্রশংসা করা হয়েছে। দেশের সব মানুষের স্থায়ী ঠিকানা হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রম্নত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপিতে বিশ্বে ৪১তম। গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।

গত এক দশকে আর্থসামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শিশু মৃতু্যহার প্রতি হাজারে ২৩ দশমিক ৬৭-এ কমে এসেছে। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃ মৃতু্যর হার ১৭৩-এ হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

\হবিগত ১৪ বছরের বেশি সময়ে সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে তার পথ ধরে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

টেকসই অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অথচ একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেশের এই অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত ১৩ বছরে সহস্রাদ্ধ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজিএস) অর্জনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।

দয়াল কুমার বড়ুয়া : কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ, কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে