সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা নিজেদের চেম্বারে রোগীদের সূক্ষ্ণমাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?

ডা. মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া
  ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা গ্রন্থ অর্গানন অব মেডিসিনের নির্দেশনা অনুসারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ তাদের নিজস্ব চেম্বারে রোগীদের জন্য সূক্ষ্ণমাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্সের আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কি? গত ৭ চৈত্র ১৪২৯ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত আদেশে ১৯৪০-এর ড্রাগ অ্যাক্ট-এর অধীন প্রণীত বিধি মোতাবেক ওষুধ ক্রয়, বিক্রয়, মজুত ও সংরক্ষণের নিমিত্ত হোমিওপ্যাথিক ড্রাগ লাইসেন্স যে কোনো চিকিৎসার জন্য আইনগত বাধ্য বাধকতা আবশ্যক। না করলে আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ। এবার পেছনে ফিরে দেখা যাক ১৯৪০ সনের ড্রাগ আইনে ওষুধ বলতে কি বুঝিয়েছে ৩ এর (ন) (b) "drug" includes (i) all medicines for internal or external use of human beings or animals, and all substances intended to be used for or in the treatment, mitigation or prevention of diseases in human beings or animals, not being medicines and substances exclusively used or prepared for use in accordance with the ayurvedic, unani, homoeopathic or biochemic system of medicine.. যে আইনের সূত্র দিয়ে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী, আর্য়ুবেদিক এবং বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্স করার নির্দেশনা দিয়েছে। না করলে আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ এবং শাস্তির আওতায় আনা হবে। অথচ দুঃখের বিষয় হচ্ছে উক্ত আইনে হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক, ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিকে ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি এবং উক্ত পদ্ধতি সমূহকে অস্বীকার করা হয়েছে। দীর্ঘ ৬৩ বছরের পুরাতন ব্রিটিশ সরকারের আইনের সূত্র টেনে বর্তমান ড্রাগ প্রশাসন উপরোক্ত পদ্ধতি সমূহের চিকিৎসকদেরকে ড্রাগ লাইসেন্স করার হুকুম দিয়ে নিজেরাই কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং আইনের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যে আইনের জন্ম হয়েছিল শুধুমাত্র এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং তাদের ওষুধের জন্য এবং যে আইন অন্য সব চিকিৎসা পদ্ধতির ওষুধকে অস্বীকার করা হয়েছিল, সে আইনে বর্তমান ড্রাগ প্রশাসন কীভাবে ড্রাগ লাইসেন্স করার নির্দেশনা দিয়ে চিকিৎসকদেরকে এক রকম প্রশাসনিক হুমকি দিয়ে সম্পূর্ণ আইন-বহির্ভূত কাজ করেছেন। স্বাধীনতার পর তৎকালীন সামরিক সরকার ১৯৮২ সালে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে ড্রাগ (কন্ট্রোল) অডিনেন্স নামে ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে ছিলেন যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছিল। উক্ত আইনে হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক, ইউনানী এবং আর্য়ুবেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং উক্ত পদ্ধতিসমূহের ওষুধকে ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। যা নিম্নরূপ ৩.3.(1) (d) “Drug” shall have the same meaning as in the Act and shall also include any substance exclusively used or prepared for use in accordance with the ayurvedic, unani and homeopathic or biochemic system of medicine; ওই আইনের ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ ১৯৮৪ ওষুধ প্রশাসন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছে যে, ১৯৮২ সালের ড্রাগ (কন্ট্রোল) অডিনেন্স-এর ৫(১) ৩ (১) (গ), ১৬ ধারা অনুসারে যে সকল ডাক্তার নিজের রোগীর জন্য ওষুধ প্রস্তুত এবং বিক্রয় করিবেন তাদের আপাতত: কোনো ড্রাগ লাইসেন্স লাগিবে না। তৎকালীন ওষুধ প্রশাসন নিশ্চয়ই আইন অনুযায়ী উক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তারপর হতে অদ্য পর্যন্ত নতুন কোনো ড্রাগ আইন প্রণয়ন হয়নি। উক্ত ১৯৮২ সনের আইনের ১৩(বি) (২) তে উলেস্নখ আছে (ন) (b) any Unani, Ayurvedic or Homeopathic or Biochemic system of medicine or other herbal drug except under the personal supervision of two whole time employees of the relevant manufacturing plant or unit, out of whom one shall be a person having degree or diploma in the field of respective system of medicine from any university or institution recognised by the Government with at least one year's practical experience in the manufacture and quality control of drugs of the relevant system and another shall be a person having Bachelor degree in Pharmacy or Bachelor degree with Honours (4 years curricula) in Chemistry, Botany, Applied Chemistry, Biochemistry, with specialisation in Phytochemistry or Pharmacognosy, from any university recognised by the Government with at least one year's practical experience in the manufacture and quality control of drugs of the relevant system.] (2) No person, being a retailer, shall sell any drug without the personal supervision of a pharmacist registered in any Register of the Pharmacy Council of Bangladesh: Provided that this provision shall not apply to the retail sale of any drug under the ayurvedic, unani, or homeopathic or biochemic 16[system of medicine or herbal drugs]. এতেও প্রমাণ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যারা নিজের চেম্বারে নিজস্ব রোগীদের ক্ষুদ্র মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করবেন তাদের ড্রাগ লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক স্যামুয়েল হ্যানেমান কর্তৃক নির্দেশিত এবং প্রকাশিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা গ্রন্থের ২৭৮, ২৭৯, ২৮০, ২৮৪, ২৪৬, ২৪৭, ২৪৮, ২৭২, ২৭৩, ২৭৪ এবং ২৯০ নং সূত্রের নির্দেশনা অনুসারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ চারআউন্স শিশির ১/৩ ভাগ খালি রেখে বাকি অংশে কয়েক ফোঁটা শুরাসার মিশ্রিত পরিশ্রম্নত পানির সাথে নির্ধারিত শক্তিকৃত ওষুধের ১টি মাত্র ক্ষুদ্র অনুবটিকা মিশ্রণ করে রোগীকে প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রয়োজন শুধুমাত্র দুই-একটি ছোট কাঠের বাস্ক। প্রদর্শন করার মতো কোনো ওষুধই চেম্বারে থাকবে না। সে ক্ষেত্রে প্রকৃত এবং আদর্শ হ্যানিম্যানিয়ান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের ড্রাগ লাইসেন্সের আওতায় পড়ে না। ড্রাগ লাইসেন্স শুধুমাত্র পাইকারি ও খুচরা ওষুধ বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তদুপরি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুসারে প্রতিজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিজস্ব চেম্বারে ওষুধ শক্তিকরণের জন্য নিয়ম মেনে রেকটিফাইড স্পিরিট ব্যবহারের আইনগত অধিকার রাখে। এতেও ক্ল্যাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যারা নিয়মনীতি অনুসারে উপরোক্ত পদ্ধতিতে রোগীকে প্রতিবারে শক্তিকৃত ওষুধের একটি মাত্র অনুবটিকা ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রেও ড্রাগ লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা নেই। হামিওপ্যাথিক চিকিৎকদের পক্ষে বাংলাদেশের প্রতিথযশা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. ফজলুল হক, অতিরিক্ত সচিব (অব.) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডা. মো. ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (অব.) শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. সামসুদ্দোজা আরিফ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের সাবেক সিনিয়র শিক্ষক ডা. একেএম শহিদুলস্নাহ, হোমিওপ্যাথিক বোর্ড সদস্য ডা. মো. সোহরাব হোসেন, বোর্ড সদস্য ডা. সৈয়দ কাজল, বিশিষ্ট সাংবাদিক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ডা. মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের (সাবেক সহকারী অধ্যাপক ডা. হরিদাস ঘোষ, ডা. মো. মফিজুল ইসলাম, ডা. মো. শফিকুল আলম, ডা. আ. মতিন এবং ডা. একেএম গোলাম হোসেন) উপরোক্ত বক্তব্যসমূহের সাথে একমত পোষণ করে এ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির আশু সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় একটি আলোচনা সভার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন বলে আশা করেন। ডা. মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া : সহকারী অধ্যাপক (অব.) সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে