সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব

নতুনধারা
  ২৮ মে ২০২৩, ০০:০০

দীর্ঘকালীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি স্থির রেখে অর্থের জোগান যদি বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার অব্যাহত থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্যের গতিবিধি, অভ্যন্তরীণ আর্থিক ও মুদ্রানীতির অবস্থান এবং বিনিময় হারের অস্থিরতা থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন কারণে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার বিষয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্যানুযায়ী, গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় ১৪ বেসিস পয়েন্ট কম। এই মুদ্রাস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা প্রশ্ন থেকেই যায়। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে এ দেশের মজুর শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়?মুদ্রাস্ফীতির ফলে কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক উৎপাদন খরচের ওপর এর প্রভাব পড়ে। ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় উৎপাদন কমার আশঙ্কা দেখা দেয়। উৎপাদন কমে গেলে অনেকের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা থাকে। মুদ্রাস্ফীতি সমাজে আয় বণ্টনের বৈষম্য করে, অর্থনীতিতে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে পেনশন, ব্যাংক হিসাব বা সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর নির্ভরশীল স্থির আয়ের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে ব্যবসায়ী, শেয়ারে বিনিয়োগকারী তারা লাভবান হয়ে থাকেন। কারণ মুদ্রাস্ফীতির কারণে অনেক কোম্পানির মুনাফার পরিমাণ বাড়ে ফলে তারা বেশি হারে মুনাফা পান। মুদ্রাস্ফীতির ফলে মুদ্রার মূল্য কমে যায়। এ কারণে ওই দেশে উৎপন্ন পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রপ্তানি মূল্যের কোনো বদল হয় না। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে গত বছর ১০০ ডলারে ৫টি পণ্য নিতে পারত। কিন্তু টাকার মান পড়ে যাওয়ায় তারা ওই ১০০ ডলার দিয়ে ৬টি বা ৭টি পণ্য কিনতে পারবে। ফলে তারা বেশি বেশি পণ্য কিনবে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে সামগ্রিক মূল্য বৃদ্ধি হয় কিন্তু টাকার মূল্য হ্রাস পায়। তখন সমাজের একদল লাভ করে আরেক দল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মুদ্রাস্ফীতির ফলে সব বেতনভোগী ব্যক্তিদের ওপর এই প্রভাব পড়ে। এ ক্ষেত্রে টাকার মূল্য হ্রাস পেলেও তাদের বেতন সেই অনুপাতে বৃদ্ধি হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের ব্যবধানের জন্য শ্রমিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয় কারণ যতদিনে তাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পায় ততদিনে কষ্ট বেড়ে যায়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে পণ্য ও সেবার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, চাহিদামতো রাখার ওপর জোর দিতে হবে। বাজারের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য সরকারের নজরদারি আর দেশের জনগণকেও সচেতন থাকতে হবে। নিজে সচেতন হই এবং অন্যকেও সচেতন করি।

সাকিবুল হাছান

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

শিক্ষার্থী

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে