সাম্প্র্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বেশ তৎপর ভারত। কিন্তু উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বেড়া নির্মাণ করতে গিয়ে সীমান্তের নিয়ম লঙ্ঘন করছে দেশটি; যা প্রতিবেশী দেশের কাছে কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আর এই ধরনের ঘটনা সুসম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধক। ফলে, এই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি। এছাড়া, এটাও উলেস্নখ্য- সীমান্তের নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে, এ ব্যাপারে দিলিস্নকে কঠোর বার্তা দিয়েছে ঢাকা। তথ্য মতে, রোববার বিকালে ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে সীমান্তে দেশটির তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, পররাষ্ট্র সচিব- ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে সীমান্তে বিএসএফের কর্মকান্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়া, দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কোনো উস্কানিমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে ভারতের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কোনো উস্কানিমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে ভারতের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি যে আহ্বান জানানো হয়েছে তা দেশটির সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। কেননা, সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক স্থা্পনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক স্বার্থ উভয়পক্ষকে বিবেচনায় নিতে হবে। ফলে, সীমান্তে নিয়ম লঙ্ঘন করবে এটা যেমন পরিতাপের; তেমনিভাবে তা অপ্রত্যাশিতও।
এ কথাও বলা দরকার, এর আগে বাবরার সীমান্তে হত্যকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক বাংলাদেশিরা সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছে- যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে, সামীান্তে যে কোনো অনিয়ম যেমন রোধ করতে হবে, তেমনি হত্যাকান্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগী হতে হবে। প্রসঙ্গত, প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ১৯৭৫ সালে সই করা সীমান্ত নিয়ে যৌথ গাইডলাইনে সুস্পষ্ট নির্দশিকা রয়েছে- যা মূলত দুই দেশের সীমান্ত আইন। লক্ষ্য করা দরকার, এতে বলা রয়েছে, উভয় দেশের শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষা সামর্থ্য-সংবলিত যে কোনো কাজের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১৫০ গজের মধ্যে যদি কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়, তবে এক দেশকে অপর দেশের সম্মতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু জানা যাচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া তৈরির সময় এ বিষয়টি মেনে চলেনি। যা দুঃখজনক।
এটাও আমলে নেওয়া দরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের হাইকমিশনারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ এ ধরনের অননুমোদিত কর্মকান্ডে সীমান্তে উত্তেজনা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন- যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মনোভাবকে ক্ষুণ্ন্ন করে। আমরা মনে করি, পররাষ্ট্র সচিব যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তা ভারতের সংশ্লিষ্টদের অনুধাবন করা জরুরি। সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মনোভাব অটুট রাখতে সীমান্তে যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধে উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক।
সর্বোপরি বলতে চাই, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং সব ধরনের অনিয়ম রোধ করতে হবে। জানা গেছে, বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে যেসব অসম সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বাতিলে দিলিস্নকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারত কোনোভাবেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারবে না। ফলে, আমরা চাই, যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে এবং সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এমন সব ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। সব ধরনের অনিয়ম রোধ করতে হবে- যা দুই দেশের সুসম্পর্কের ক্ষেত্রেও জরুরি।