শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

আবহাওয়া ও জলবায়ু

প্রশ্ন : শৈত্যপ্রবাহ কী?

উত্তর : উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই অবস্থাই হলো শৈত্যপ্রবাহ।

প্রশ্ন : খরার কারণ কী?

উত্তর : অনেক লম্বা সময় শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে খরা দেখা দেয়। অস্বাভাবিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রাই হলো খরার কারণ।

প্রশ্ন : খরা কাকে বলে?

উত্তর : দীর্ঘ সময় পরিবেশে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করাকে খরা বলে।

প্রশ্ন : পরিবেশের উপর ঘূর্ণিঝড়ের একটি প্রভাব লিখ।

উত্তর : ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লোকালয় পস্নাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

প্রশ্ন : শীতকালে বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার কারণ ৫টি বাক্যে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : শীতকালে শৈত্যপ্রবাহের কারণ : ১. শীতকালে বাংলাদেশের উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে মাঝে মাঝে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং সৃষ্টি হয় শৈত্যপ্রবাহের। ২. শীতকালে বঙ্গোপসাগর এলাকা থাকে উত্তপ্ত এবং সেখানে বিরাজ করে বায়ুর নিম্নচাপ। ৩. তখন দেশের উত্তরে বেশি থাকে শীত ও বায়ুচাপ। ৪. শীতকালে বায়ু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। ৫. এ বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে এতে কম জলীয়বাষ্প থাকে এবং তা হয় শুষ্ক ও শীতল। এই বায়ুর প্রভাবেই শীতকালে বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ হয়।

প্রশ্ন : রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে কেন?

উত্তর : রাতের বেলা স্থলভাগ দ্রম্নত ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু জলভাগ অপেক্ষাকৃত উত্তপ্ত থাকে বলে তখন স্থলভাগের উপর বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে।

পানি অপেক্ষা বালি বা মাটি দ্রম্নত উত্তপ্ত বা ঠান্ডা হয়। দিনের বেলা সূর্যের তাপে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি উত্তপ্ত হয়। আবার রাতের বেলা দ্রম্নত তাপ বিকিরণ করে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি ঠান্ডা হয়। এতে রাতে স্থলভাগের উপরের বায়ু শীতল হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং সেখানে বায়ুর উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পানির তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম বলে রাতের বেলা জলভাগ অপেক্ষাকৃত বেশি উত্তপ্ত থাকে। ফলে জলভাগের উপরস্থ উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। তাই রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ বিরাজ করে।

প্রশ্ন : বায়ুচাপ কীভাবে বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে?

উত্তর : কোথাও বায়ুচাপ কমে গেলে সেখানে পার্শ্ববর্তী উচ্চ বায়ুচাপবিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এভাবে বায়ুচাপ বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। বায়ু তার ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এই বায়ুচাপ আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কোনো এলাকায় খাড়াভাবে সূর্যের কিরণ পড়লে সেখানে বায়ু উষ্ণ হয়ে হালকা হয় ও উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে সেখানে সুষ্টি হয় শূন্যস্থানের ও কমে যায় বায়ুচাপ। একে বলে নিম্নচাপ। আবার কোনো এলাকায় বায়ু ঠান্ডা হয়ে নিচের দিকে নেমে এলে বায়ুচাপ বৃদ্ধি পায় যা উচ্চ বায়ুচাপ নামে পরিচিত। কোনো এলাকায় নিম্নচাপ বিরাজ করলে সে এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ বায়ুচাপ বিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।

প্রশ্ন : বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : বর্ষাকালে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণ : আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ুর আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পায়।

১. বর্ষাকালে বাংলাদেশে অধিক বৃষ্টিপাত হয় বলে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে। ২. বর্ষাকালে সে সময় বাংলাদেশের জলভাগ অপেক্ষা বেশি উষ্ণ থাকে স্থলভাগ। ৩. স্থলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ ও জলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে। ৪. তখন বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে অধিক জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় এবং সেখানে সংঘটিত হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। তাই বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে।

প্রশ্ন : উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার উপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সমুদ্রের উপরের বায়ু স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। এর ফলে সমুদ্রের উপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। নিম্নচাপ অঞ্চলের গরম বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সৃষ্ট ফাঁকা স্থান পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। রাতে স্থলভাগ সমুদ্রের তুলনায় ঠান্ডা থাকে। তাই তখন স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন : বিরূপ আবহাওয়া কী? তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ সম্বন্ধে যা জান লেখ।

উত্তর : আবহাওয়ার কোনো উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বিরূপ আবহাওয়া বলা হয়।

তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ : অতি গরম আবহাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাই হলো তাপদাহ। অস্বাভাবিক তাপদাহের ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আবার এই তাপদাহের কারণে কখনো কখনো মানুষসহ হাজার হাজার জীবের মৃতু্য হয়।

উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই অবস্থাই হলো শৈত্যপ্রবাহ। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য অসহনীয় শৈত্যপ্রবাহ বাংলাদেশে খুব কমই দেখা যায়।

প্রশ্ন : বন্যা ও খরা কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : স্বাভাবিক স্থলভাগ সাময়িকভাবে পানিতে পস্নাবিত হয়ে যাওয়াকে বন্যা বলে। পরবর্তীতে পানি নেমে গেলে আবার স্থলভাগ স্বাভাবিক হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এক-পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টিপাত বা বহিরাগত পানির কারণে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়। এ জলাবদ্ধতাই বন্যা নামে পরিচিত।

দীর্ঘ সময় ধরে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে মাটির সতেজতা হ্রাস পেয়ে মাটি ফেটে যায়। এ অবস্থাকে খরা বলে। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাতের অনুপস্থিতির কারণে ভূমির জলীয়ভাব হ্রাস পায়। এ সময় সেচ দেওয়া না গেলে মাটি ফেটে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গাছপালা স্বাভাবিক সতেজতা হারায়, পাতা পড়ে যায়। পরিবেশের এই বিরূপ অবস্থাই খরা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা দেখা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে