শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিনেমাশূন্য সেন্সর বোর্ড

মাসুদুর রহমান
  ০৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
সর্বশেষ 'রঙঢঙ' ছবি দেখার পর প্রদর্শনের অযোগ্য ঘোষণা করে সেন্সর বোর্ড

এমনিতেই চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না, তার মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এলো মহামারি করোনাভাইরাস। নতুন উদ্যমে বছর শুরু হলেও করোনায় বাধাগ্রস্ত হয় চলচ্চিত্র। চলতি বছরের এই সময় পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে নিরেট ৯টি দেশীয় ছবি। বছরের বাকি দুই মাসেও নতুন ছবি মুক্তির নিশ্চয়তা নেই। গত মাসে সিনেমা হল খোলার পর দুটি ছবি মুক্তি পেলেও নতুন ছবি খরায় ভুগছে সিনেমা হলগুলো। পুরানো সিনেমা দিয়েই চলছে দেশের প্রেক্ষাগৃহ। যদিও প্রায় দেড় ডজন ছবি মুক্তির তালিকায় রয়েছে।

শোনা যাচ্ছে লোকেশনের ভয়ে আপাতত এ বছরে ছবি মুক্তির পরিকল্পনা নেই প্রযোজকদের। নতুন ছবির সংকট দেখা দিয়েছে চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ডেও। এ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে গত ১০ মাসে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে ১৭টি বাংলা সিনেমা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৫টি, ফেব্রম্নয়ারিতে ৭টি এবং মার্চে ৪টি ছবি সেন্সর পেয়েছে। এরপর করোনার কারণে এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কোনো ছবি সেন্সর না পেলেও আগস্ট মাসে একটি মাত্র ছবি ছাড়পত্র পেয়েছে। এরপর নতুন কোনো ছবির নাম ছাড়পত্রের তালিকায় নেই। তবে বছরের এই সময় পর্যন্ত বেশকিছু ইংরেজি ছবি সেন্সর পেরিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্সরবোর্ডে সর্বশেষ প্রদর্শিত হয় 'রঙঢঙ' নামের একটি ছবি। সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা এ ছবিটি দেখেন অক্টোবরে। কিন্তু নানা অসঙ্গতির কারণে এ ছবিটি প্রদর্শনের উপযুক্ত নয় বলে সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল করা হয়। এছাড়া দু/একটি ছবি জমা থাকলেও তার সুরাহা হচ্ছে না সেন্সর বোর্ডের কার্যক্রম স্তিমিত হওয়ার কারণে। ইতোমধ্যে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় সবাই অলস সময় কাটাচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দীনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করেন তার সহধর্মিণী। তিনি জানান, জসিম উদ্দীন সাহেব ঘুমাচ্ছেন। গতকাল শনিবার একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলার সুযোগ হয়নি সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে।

ছবি সংকটের বিষয়টি নিয়ে সেন্সর বোর্ডের সদস্য অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস বলেন, 'এই মুহূর্তে সেন্সরে ছবি জমা আছে কি নাই, তা আমি জানি না। আমাদের ডাকা হলে আমরা যাই। করোনার কারণে মাঝ সময়ে সেন্সর বোর্ডের কাজ বন্ধ থাকলেও আবার কাজ শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত মাস অর্থাৎ অক্টোবরে 'রঙঢঙ' নামে একটি ছবি দেখেছি। কিন্তু সেটা বাতিল করা হয়েছে। এরপর আর ডাকা হয়নি। ইতোমধ্যে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আসলে করোনায় পুরো বিশ্বের সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। এজন্য চলচ্চিত্রের কাজও কম। কাজ না হলে সেন্সরে ছবি জমা পড়বে কি করে? কয়েকদিন আগে একটি ধারাবাহিক নাটকের শুভ যাত্রা অনুষ্ঠানে আলাপচারিতায় অরুণা বিশ্বাস বলেছিলেন, 'সেন্সর বোর্ডে এখন যাওয়া হচ্ছে না। নতুন কোনো ছবি নেই।'

সেন্সর বোর্ডের সদস্য প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, 'সেন্সর বোর্ডের কাজ চলছে। শুধু লকডাউনের ওই সময়টাতে বন্ধ ছিল। তখন তো দেশের সব কার্যক্রমই বন্ধ ছিল। তারপর সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেন্সরবোর্ডের কাজও শুরু হয়েছে। ছবি জমা পড়ছে আমরা দেখছি। আমার জানা মতে, এখনো দুটি ছবি জমা রয়েছে। গত মাসেও আমরা 'রঙঢঙ' নামে একটি ছবি দেখেছি। যদিও সর্বসম্মতিক্রমে ছবিটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছবিতে সিনেমা প্রযোজনার বিষয়টি অত্যন্ত নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরেও আমরা অনেক ছবির ছাড়পত্র দিয়েছি। করোনায় কয়েকমাস বাংলা ছবির সংকট থাকলেও ইংলিশ ছবিগুলো সেন্সরে জমা পড়েছে এবং আমরা ছাড়পত্র দিয়েছি। বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এই মুহূর্তে কাজ একটু কম হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে