শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৮২-তে ফেরদৌসী রহমান

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ২৮ জুন ২০২২, ০০:০০

জীবন্ত কিংবদন্তি এক সংগীতশিল্পীর নাম ফেরদৌসী রহমান; বাংলা গানের প্রায় সব শাখাতেই যার ছিল অবাধ বিচরণ। বাংলা গানকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। শিল্পী পরিবারেই জন্ম এই 'গানের পাখি'র। বাবা কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আব্বাস উদ্দিন। বাবার মুখ উজ্জ্বল করে তিনি নিজেই জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। কেবল গায়িকাই নন, গানের শিক্ষকও তিনি। গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের সঙ্গে তার পথচলা। আলোকিত এই সংগীতশিল্পী আজ স্পর্শ করলেন জীবনের বিরাশিতম বসন্ত। ১৯৪১ সালের ২৮ জুন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে জন্ম নেন এই তারকা। বাংলা সংগীতাঙ্গনের সবার প্রিয় এই মানুষটি দীর্ঘদিন ধরেই মিডিয়ার বাইরে। শারীরিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে নিয়মিত ডাক্তার দেখাচ্ছেন। তাই বাসাতেই এখন সময় কাটে তার। কথাও বলতে পারেন না তেমন। এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দাওয়াত এলেও যেতে পারেন না। তবে জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে যান না স্বজন ও সংগীতের মানুষেরা। এবারও তার জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেরদৌসী রহমানকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে দেশের বেশ কজন গুণী ও শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের। আর জন্মদিন এলেই মিডিয়ার মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় প্রথিতযশা এই শিল্পীর। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও জন্মদিনে কোনো আহামরি আয়োজন করা হচ্ছে না বলেই জানান তার পারিবারিক সূত্র। দেশীয় সংগীতের পথিকৃৎ ও প্রথিতযশা এই শিল্পীর কণ্ঠে অসংখ্য কালজয়ী গান পেয়েছেন উপমহাদেশের সংগীতপ্রেমীরা। সুদীর্ঘ ছয় দশকের সংগীত ক্যারিয়ারে পলস্নীগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, ইসলামিক গান, গজল, আধুনিক ও চলচ্চিত্রসহ সব ঘরানার গানই প্রস্ফুটিত হয়েছে এই গুণী শিল্পীর কণ্ঠে। আর তার এই গানের হাতেখড়ি হয়েছে তার পিতা পলস্নীগীতি সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের কাছেই। বাবা ছাড়াও ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খানসহ বেশ কয়েকজন নামজাদা সংগীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন এই গায়িকা। 'যে জন প্রেমের ভাব জানে না', 'যার ছায়া পড়েছে মনের আয়নাতে', 'প্রাণ সখিরে ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে', 'পদ্মার ঢেউরে', 'ও কি গাড়িয়াল ভাই'সহ অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন ফেরদৌসী রহমান। খুব অল্প বয়স থেকেই তার মঞ্চে গাওয়া শুরু। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে 'খেলাঘর' নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান করেন। আর বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'এসো গান শিখি' দিয়ে' সবার কাছে 'খালামনি' হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন নন্দিত এই তারকা। তার গায়কী দিয়ে মুগ্ধ করেছেন চলচ্চিত্রেও। ১৯৬০ সালে 'আসিয়া' নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম পেস্ন-ব্যাক করেন। ৬০ ও ৭০-এর দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তার পেস্ন-ব্যাক করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ'।১৯৬০ সালে ফেরদৌসী রহমান ইউনেস্কো ফেলোশিপ পেয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে ৬ মাসের সংগীতের ওপর স্টাফ নোটেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। ৩টি লং পেস্ন'সহ প্রায় ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড এবং দেড় ডজনের বেশি গানের অডিও অ্যালবাম বের হয়েছে তার। 'এসো আমার দরদী' শিরোনামের একটি গানের সিডিও প্রকাশিত হয়েছে এই সংগীতশিল্পীর। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার গানের রেকর্ড হয়েছে তার। এই গায়িকার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সংগীত পরিচালক। গান গাওয়ার পাশাপাশি অনেক গান পরিচালনাও করেছেন তিনি। গানের জগতে সফল এই গায়িকা ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের রুবাইয়াত ও রাজিন নামে দুই ছেলে আছে। ফেরদৌসী রহমান নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। দেশের সংগীত ভুবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তিনি জাতীয় পর্যায়ে নানাভাবে সম্মানিত হয়েছেন। তার অর্জিত উলেস্নখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে আছে লাহোর চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার (১৯৬৩ সাল), প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুরস্কার (১৯৬৫ সাল), টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৫), জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (১৯৭৭), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৭৭ সাল)। এছাড়াও তিনি নাসিরউদ্দিন গোল্ড মেডেল পুরস্কার, মাহবুবুলস্নাহ গোল্ড মেডেল, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

পুরস্কার লাভ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে