সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

এখনো উজ্জ্বল রবি

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
রবি চৌধুরী

নব্বইয়ের দশকে দেশের সঙ্গীতাকাশে যে ক'জন তরুণ কণ্ঠশিল্পী অডিও বাজারে বিপুল শ্রোতা তৈরি করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রবি চৌধুরী। শুধু অডিও অ্যালবামেই নয়, চলচ্চিত্রেও জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন এই তারকা। সেই রবিকে কয়েক বছর ধরে গানের বাজার জমজমাট রাখতে দেখা যাচ্ছে না। কারণ কী? তবে কি বাংলা গানের জগৎ থেকে হারিয়েই গেলেন? আঁতকে ওঠার মতো প্রশ্ন হলেও দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে তিন দশকের বেশি সময় ধরে গান করে আসা রবি চৌধুরী নিজেই এ ব্যাপারে জানান, হারিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং এখনো নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্টেজ শো করে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশে।

সঙ্গীতের দীর্ঘ পথ চলার পথে অনেক বাঁক বদল দেখেছেন এ শিল্পী। হঠাৎ করেই অডিও, সিডি বাজার উধাও হয়ে ডিজিটাল যুগ তৈরি হওয়াও দেখেছেন। এক সময়ে গানে যে চমৎকার মেলোডি ছিল সেখানে দ্রম্নত জায়গা করে নিচ্ছে ফার্স্ট গান।

শুধু রবি চৌধুরীই নয়, নব্বইয়ের সব জনপ্রিয় শিল্পীদের ওপর দিয়েই যেন একটা ঝড় বইতে শুরু করল। তপন চৌধুরী, শুভ্র দেব, ডলি সায়ন্তনী, বেবী নাজনীন, কনকচাঁপা, মনির খান, বাদশা বুলবুল, মুজিব পরদেশী, আশরাফ উদাস, পলাশ প্রমুখ কণ্ঠশিল্পীদের ওপর দিয়ে কী এক মড়ক যেন হু-হু করে আছড়ে পড়ল। কোথাও কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কী এমন হলো যে, তারা সবাই গান থেকে দূরে সরে গেলেন? এমন প্রশ্নে রবি চৌধুরী বললেন, 'অন্যদের কথা জানি না, তবে আমি গান থেকে মোটেও দূরে সরে যাইনি। বরং আমি এখনো সক্রিয়। তবে বর্তমান সঙ্গীতাঙ্গনসহ দর্শক মহলে একটি ভুল রীতি দেখতে পাচ্ছি- শিল্পীদের টেলিভিশনের পর্দায় নিয়মিত থাকতে হবে। নিয়মিত গান বের করতে হবে। নয়তো বুঝতে হবে তিনি হারিয়ে গেছেন। তবে আমি গান বন্ধ করে দিয়েছি বা আমার জনপ্রিয়তা কমে গেছে, এটি ভাবা ঠিক নয়।' এর সঙ্গে যোগ করে রবি বলেন, 'আমার ভেতর থেকে যদি গান না আসে জোর করে তো গাইতে পারি না। কারণ ছাড়া পত্রিকায় নিউজ হওয়ার তো কোনো মানে হয় না। আমি কাজে বিশ্বাসী। মানুষ আমার গানকে এখনো ভালোবাসেন। এ ভালোবাসার কারণেই আমি এখনো বেঁচে আছি।'

কিন্তু আপনার সময়ের সহযাত্রী জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীদের অনেকেই এখন আলোচনায় নেই, এর কারণ কি? এমন নেতিবাচক প্রশ্নেও খেই হারাননি রবি চৌধুরী। বরং সপ্রতিভার সঙ্গেই বললেন- 'আসলে অডিওর বাজার পড়ে যাওয়াতেই এমনটা হয়েছে। এক সময় আমাদের যখন উত্থান হয়েছিল সেই সময়টা ছিল অডিওর রমরমা যুগ। এখন সেই ইন্ড্রাস্ট্রি নতুন প্রযুক্তির ধাক্কায় ধুঁকছে। এখন একটা একটা করে গান ভিডিও করে রিলিজ করতে হয়। তাই সেই সময়টাও হারিয়ে গেছে প্রায়। সে কারণে আমার সময়ে আরও যারা জনপ্রিয় ছিলেন, তারাও প্রায় হারিয়ে গেছেন। তবে আমি এখনো নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে সক্রিয় রেখেছি। এর মধ্যে ইউটিউবে ২০টির মতো গান ছেড়েছি। এ ছাড়া আমার গাওয়া জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণতার বিচারে ভালো গানগুলো নিয়ে ১০০টি গান বাছাই করেছি। এগুলো নতুন আঙ্গিকে ও সুরে দর্শক-শ্রোতার সামনে ইউটিউবে নিয়ে আসছি।'

নব্বই দশকের শিল্পীরা শুধু যে অডিও বাজার ধ্বসের কারণে হারিয়ে গেছেন এমন নয়- সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতেও গণহারে ধস নামলে সেই ধসও যেন 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হিসেবে তছনছ করে দিল এই কণ্ঠশিল্পীদের গানের ভবিষ্যৎ। তবে এখন আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে সেই ইন্ডাস্ট্রি। এ অবস্থায় রবির পেস্ন-ব্যাকের অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, 'এ পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০টি সিনেমায় গান করেছি বলে মনে হয়। সর্বপ্রথম 'আন্দোলন' ও সর্বশেষ নার্গিস আক্তারের পরিচালনায় 'পুত্র এখন পয়সাওয়ালা' সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনাও করেছিলাম। সেটাই সর্বশেষ। এখন তো সিনেমাও আগের মতো হচ্ছে না। আমি নিজেও তো সিনেমার প্রকৃত স্বর্ণযুগটাকে ধরতে পারিনি। তার আগেই পেস্ন-ব্যাকের স্বর্ণযুগটি শেষ হয়ে যায়। দেখা যাক সামনে হয়তো পেস্ন-ব্যাক করতেও পারি।'

যেখানে নব্বইয়ের তারকা শিল্পীরা একে একে নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছেন, সেখানে নতুনদের মধ্যে কেমন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন এমন প্রশ্নে রবি চৌধুরী বলেন, 'সহজ প্রযুক্তির কারণে এখন প্রায় সব কিছুই সহজ হয়ে গেছে। যেটা আমাদের সময়ে ছিল না। তবে আমাদের মধ্যে শেখার আগ্রহটা বেশি ছিল। তখন একবারই গান গাইতে হতো। এখন গান একটি একটি শব্দ করেও গাওয়া যায়। ফলে এখন সবাই গায়ক। এখন গায়কের অভাব নেই। কিন্তু শিল্পীর বড়ই অভাব। আমরা শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়েছি- এজন্য গর্ব কিংবা অহঙ্কার করিনি। এখন অনেকের মধ্যে তারকা ভাব থাকে বলেই দ্রম্নত হারিয়ে যায়। এখনকার গানের স্থায়িত্বও কম। গানের কথায় ভালো-মন্দ থাকলেও সুরের বৈচিত্র্য নেই। ঘুরে ফিরে যেন একই সুর চলে আসছে। আগে কিন্তু এমন ছিল না। তখন গানের সুরে অনেক বৈচিত্র্য ছিল। গায়কীতেও বৈচিত্র্য ছিল। গানের কথা, সুর ও শিল্পীর কণ্ঠ সব মিলিয়ে দারুণ লাগত। তাই তো আগের গান কাল জয় করেছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে