সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফের শুরু হচ্ছে 'গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব'

সাজু আহমেদ
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ভাগের মানুষ নাটকের দৃশ্য

বছর ঘুরে আবারও ঘনিয়ে আসছে সময়। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই যেন ঘনীভূত হচ্ছে উৎসবের আমেজ। কারণ দুই বাংলার নাট্যকর্মীদের প্রাণের উৎসব বলে কথা। আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে বহুল আলোচিত 'গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২৩'। নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতি বছরই এই উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। উৎসবের দিনগুলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একাধিক মঞ্চ এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি ভবন মিলনায়তন সরগরম থাকে। বিশেষ করে দেশ-বিদেশের অসংখ্য প্রবীণ-নবীন নাট্যকর্মীর পদচারণায় মুখরিত হয়। নতুন নতুন এবং ব্যতিক্রমী সমৃদ্ধ প্রযোজনা উপভোগের জন্য মুখিয়ে থাকেন নাট্যমোদী দর্শকরা। সাংস্কৃতিককর্মী এবং দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রতি বছরই এই উৎসবকে বর্ণাঢ্য করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বাদশবারের মতো বাংলাদেশে আয়োজন করা হচ্ছে এই উৎসব। করোনা মহামারির কারণে বিগত ২০২০ সালে এই উৎসবকে বন্ধ থাকলেও ২০২১ সালে আবারও পূর্ণ উদ্যোমে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে করোনার প্রভাব কাটিয়ে গত বছর ২০২২ সালে এই আয়োজনে আবারও জৌলুস ফিরে আসে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন প্রতিবারের মতো এবারও 'গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২৩' প্রাণের এই উৎসব অনেকটাই জমজমাট হবে।

এ প্রসঙ্গে 'গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৩' এর আহ্বায়ক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আগামী ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১২ দিনব্যাপী এ উৎসব আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। উৎসবে বাংলাদেশ শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালার মূল হল, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, জাতীয় সঙ্গীত-নৃত্যকলা-আবৃত্তি মিলনায়তন এবং জাতীয় নাট্যশালার মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরেও বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনও এই উৎসবের নাটক মঞ্চায়ন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে। গোলাম কুদ্দুছ জানান. সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশ-ভারতে দেড় শতাধিক নাট্যদল, শতাধিক একক শিল্পী এবং কয়েক সহস্রাধিক সাংস্কৃতিককর্মী অংশ নেবেন। উৎসবে নাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীতসহ শিল্পকলার প্রায় সব মাধ্যমের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার চেষ্টা করা হবে।

আয়োজক কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায় উৎসবে অংশ নেয়া নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। সেটা অচিরেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন তারা। এ বিষয়টি জানান দিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। তারা আরও জানান রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় শুরু হবে ১২ দিনের এই উৎসব। ওইদিন সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপির থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎসব আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাট্যজন নাট্যাভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আতাউর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে আয়োজন শুরু হবে। এরপর থাকবে সাংস্কৃতি পরিবেশনা। তারপর শুরু হবে উদ্বোধনী আলোচনা সভা। ১২ দিনের এই উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় মিলনায়তনে নাটক মঞ্চায়ন ছাড়াও বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে উন্মুক্ত মঞ্চ ও নাট্যশালার লবিতে থাকবে পথনাটক, মূকাভিনয়, নৃত্যালেখ্য, দলীয় ও একক সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য, ধামাইল গান, গম্ভীরা, বাউল গানসহ নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এবারের উৎসবে অংশ নিচ্ছে দেশ বিদেশের দেড় শতাধিক দলের ৪ হাজার শিল্পী।

জানা গেছে, নাট্য আন্দোলনের পাশাপাশি নাট্য চর্চায় সক্রিয় থাকে সারাবছর জুড়ে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক নতুন প্রযোজনা মঞ্চে আনে নাট্যদলগুলো। বিশেষ করে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনকে ঘিরে নতুন নাটক প্রযোজনা করে দলগুলো। এই উৎসবকে ঘিরে নাট্য সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবছর এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করেন নাট্যকর্মীরা। উৎসবকে ঘিরে দেশ বিদেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে মধ্যে নতুন করে মেল বন্ধন তৈরি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা করছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। তবে আনন্দের পাশাপাশি কিছু ঘাটতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিগত কয়েকটি আয়োজনে দেখা গেছে এই উৎসবে অপেক্ষাকৃত নতুন নাটক মঞ্চায়ন খুব কম দেখা যায়। গত বছরও এবং তার আগের বছরও ঠিক সেভাবে নতুন নাটক উৎসবে মঞ্চায়ন হয়নি। বছর বছর এ উৎসব আয়োজন সফল হলেও এর প্রধান উদ্দেশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ পরিকল্পনা করে প্রতি বছর উৎসব করা হলেও এখানে দর্শক নতুন নাটক দেখা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হোন। সে অবস্থা থেকে এবারের আয়োজনে কিছুটা হলেও উত্তরণ ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বাংলাদেশের সামগ্রিক সংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মঞ্চনাটক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে একাধিক নাট্যদল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ধারা মঞ্চ নাটককে এগিয়ে নেন তৎকালীন কতিপয় তরুণ নাট্য ও সংস্কতিকর্মীরা। নাট্যচর্চাকে বেগবান করতে এক দশক পর গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশন। ফেডারেশনের পাশাপাশি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন নৃত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে, সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের সামগ্রিক সংস্কৃতি। সেই প্রচেষ্টা অন্যতম উদ্যোগ 'গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব'। অন্যান্য উৎসবের মতো এই উৎসবের সফলতার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশীয় সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির আন্দোলন আরও বেগবান হবে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর প্রাণের সঞ্চার হয় এই শিল্পের আঙ্গিনায়। এবার তেমনই আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে